ভূমিকা: কাকমারি (বৈজ্ঞানিক নাম: Anamirta cocculus) হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ গুল্ম। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। ইহা একধরনের কীটনাশক।
কাকমারি-এর বর্ণনা:
কাষ্ঠল আরোহী, কচি কান্ড এবং পত্রবৃন্ত শুষ্ক অবস্থায় ফ্যাকাশে সবুজাভ থেকে খড়ের বর্ণ, সরেখ, মসৃণ, বাকল পুরু, উল্লম্ব খাঁজবিশিষ্ট বা কুঁচকানো।
পাতা পাতলা চর্মবৎ, ডিম্বাকার থেকে প্রশস্ত ডিম্বাকার, ১০-২৩ x ৮-২০ সেমি, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র, নিম্নপ্রান্ত হৃৎপিণ্ডাকার থেকে কর্তিতা, কিনারা সিলিয়াযুক্ত;
নিম্নপ্রান্ত ৩-৫ (৭) শিরাল এবং প্রধান শিরার সমান্তরালে ৪-৫ জোড়া পার্শ্বশিরা বর্তমান, পত্রবৃন্ত ৬-১৮ সেমি লম্বা, উভয়প্রান্ত স্ফীত, নিম্নপ্রান্ত বাঁকা।
পুষ্পমঞ্জরী ১৬-৪০ সেমি লম্বা, পার্শ্ব শাখাবিশিষ্ট, পার্শ্ব শাখাগুলো ২-৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ০.৫ মিমি (প্রায়) লম্বা।
পুং পুষ্প ফ্যাকাশে সবুজাভ থেকে হলুদ, পুষ্পবৃন্তিকা মসৃণ, ২-৩ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৮টি, বাইরের ২টি খর্বাকার, ১ মিমি বা তার চেয়েও খর্বাকার;
ভেতরের ৬টি বৃহদাকার, প্রশস্ত উপবৃত্তাকার, ২.৫-৩.২ মিমি লম্বা, পাপড়ি অনুপস্থিত, পুংকেশরীয় গুচ্ছ ১-২ মিমি লম্বা।
স্ত্রী পুষ্প: বৃত্যংশ পুং পুষ্পের অনুরুপ, বন্ধ্যা পুংকেশর ৬টি, খর্বাকার, খুব বেশী লম্বা হলে ০.২ মিমি।
গর্ভপত্র ৩ (-৪)টি, বক্র-উপবৃত্তাকার, ১.৫-২.০ মিমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড মোটা, ভেতরের দিকে বক্র।
ফল ডুপ, সাদা থেকে বেগুনি বর্ণের, উপবৃক্কাকার-গোলকাকার, পৃষ্ঠভাগ জালিকাকারে উঁচুনীচু এবং পৃষ্ঠীয় খাঁজবিশিষ্ট, বীজপত্র সরু উপবৃত্তাকার, ৫-৭ X ২ মিমি।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৬ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
নিম্নভূমির চিরহরিৎ অথবা মিশ্র পত্রঝরা অরণ্য, কখনও নদী বা খালের পাড়। ফুল ও ফল ধারণ আগষ্ট-ডিসেম্বর। বংশ বিস্তার ও বীজের মাধ্যমে।
কাকমারি-এর বিস্তৃতি:
ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং উদ্ভিজ্য অঞ্চল (মালয়া, বোর্ণিও এবং সেলেবিস ব্যতিত) হুকার এবং থমসন তৎকালীন পূর্ব বাংলা থেকে প্রজাতিটি বর্ণনা করেন যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
কান্ড থেকে শকল তন্তু পাওয়া যায় । ফল মৎস্য বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Forman, 1991). ইহার ফল তিক্ত স্বাদবিশিষ্ট এবং গরুর জন্যও বিষাক্ত।
ইহার ফল থেকে প্রস্তুতকৃত মলম এক প্রকার কীটনাশক হিসেবে এবং কঠিন চর্মরোগে ব্যবহৃত হয় (Kanjilal et al., 1934).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: জানা যায় উদ্ভিদটির ফল উকুন। নাশক শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাকমারি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটি মহাবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে কাকমারি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির জন্য স্ব-স্থানে এবং স্ব-স্থানের বাইরে সংরক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ১২০-১২১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।