বন জাম এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ

উদ্ভিদ

বন জাম

বৈজ্ঞানিক নাম: Ardisia solanacea (Poir.) Roxb., Pl. Corom. 1: 27, t. 27 (1795). সমনাম: Anguillarila solanacea Poir. (1806). ইংরেজি নাম: Wild Berry. স্থানীয় নাম: বন জাম।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Angiosperms.অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Malpighiales. পরিবার: Primulaceae. গণ: Ardisia, প্রজাতি: Ardisia solanacea.

ভূমিকা: বন জাম (বৈজ্ঞানিক নাম: Ardisia solanacea) হচ্ছে এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এই গাছ জন্মে। শোভাবর্ধনের জন্যও লাগানো হয়।

বন জাম-এর বর্ণনা:

বৃহদাকার চিরহরিৎ গুল্ম, ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু। পাতা ৮-২০ x ৪-৬ সেমি, বি-ডিম্বাকার, দীর্ঘায়ত বা উপবৃত্তাকার, তীক্ষ্ণ বা দীর্ঘাগ্র, পাদদেশ ক্রমসরু, অখন্ড, চর্মবৎ, পত্রবৃন্ত ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা।

পুষ্পমঞ্জরী দূরবর্তী কাক্ষিক ছত্রমঞ্জরীবৎ অনিয়তাকার পুষ্পমঞ্জরী বা ছত্রমঞ্জরী, মঞ্জরীদন্ড ১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মঞ্জরীপত্র অবতল, পাতী।

পুষ্প আড়াআড়িভাবে ১.৫-২.০ সেমি, গোলাপী বা গোলাপী সাদা, পুষ্পবৃন্তিকা ১.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা। বৃতির খন্ডক ৫টি, অবতল, সচরাচর গোলাকৃতি, ৩ x ২.৫ মিমি, চর্মবৎ, অধিকাংশক্ষেত্রেই সিলিয়াযুক্ত, স্থায়ী।

দলমন্ডলের খন্ডক ৫টি, ১০ x ৭ মিমি, কালো বিন্দু বিন্দু দাগবিশিষ্ট, ডিম্বাকার, তীক্ষ্ণ, চর্মবৎ, পাদদেশে কিছুটা যুক্ত।

পুংকেশর ৫টি, গর্ভদন্ডের চতুর্পালগ্ন, বাইরের দিকটা। উন্মুক্ত, পুংদন্ডগুলো ১ মিমি (প্রায়) লম্বা, পরাগধানী ৭ মিমি (প্রায়) লম্বা, স্থুল, সরু বাণাকার।

গর্ভাশয় গোলকাকার, ৩ x ২ মিমি, ডিম্বক সংখ্যায় অনেক, গভদন্ড খাড়া, ৭ মিমি (প্রায়) লম্বা।

ফল বেরী, ৭-১০ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট, অবনত গোলকাকার, পরিপক্ক অবস্থায় কালো, অগ্রভাগে গর্ভদন্ডের অবশিষ্টাংশ বর্তমান এবং পাদদেশে স্থায়ী বৃতি সংযুক্ত, বীজ গোলকাকার, সস্য চর্বনযোগ্য।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৪৬ (Fedorov, 1969).

আবাসস্থল:

অরণ্যের মধ্যে ছায়াযুক্ত এবং স্যাতসেতে স্থান। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারী থেকে মে মাস।

বন জাম-এর বিস্তৃতি:

শ্রীলংকা, সমগ্র ভারত থেকে গ্রীষ্ম প্রধান হিমালয়ের পাদদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার, চীন এবং মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে ইহা সিলেট জেলা থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে (Alam, 1988).

আরো পড়ুন:  তিতাপাট উষ্ণমন্ডলীয় দেশে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

উদ্ভিদটির বায়বীয় অংশের ইথানলে নির্যাস এসিটাইলকোলাইন এর প্রভাব প্রতিরোধী গুণাবলী বর্তমান, বলবর্ধক এবং পাকস্থলীর বায়ুনাশক গুণাবলী সম্পন্ন। ইহার শিকড় জ্বর, ডায়রিয়া এবং বাতে ব্যবহৃত হয়।

ষ্টেরল ব্যতিত পাতার অন্যান্য উপাদানসমূহ ব্যাকটেরিয়া প্রতিষেধক কার্যাবলী প্রদর্শন করে (Ghani, 2003). হলুদ রং প্রস্তুত করতে ইহার ফল ব্যবহৃত হয়।

তাছাড়া প্রজাতিটি শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবেও লাগানো হয় (Lemmens and Bunyapraphatsara, 2003).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বন জাম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের জন্য এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে বন জাম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে অবস্থান নির্ধারণ করে যথাস্থানে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এ বি এম রবিউল ইসলাম ও এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ২৬৮-২৬৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!