ভূমিকা: নীল ঝাঁটি বা বনমালী (বৈজ্ঞানিক নাম: Barleria strigosa ) বন্য পরিবেশে জন্মানো ভেষজ গুল্ম। এর নীল রঙের ফুলের জন্য অনেকে শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসাবে বাগানে বা টবে লাগিয়ে থাকে।
নীল ঝাঁটি বা বনমালী-এর বর্ণনা:
গুল্ম, ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু, শাখা বাদামি, উপরের দিক কুচযুক্ত। পাতা ১৭.০ X ৬.৫ সেমি, ডিম্বাকৃতি, দীর্ঘাগ্র, পত্রবৃন্ত পর্বলগ্ন, ঝিল্লিময়, উপর পৃষ্ঠে শিরা সংলগ্ন স্থানে হালকা হলুদাভ-বাদামি রোমাবৃত, শিরার অঙ্কীয় পৃষ্ঠ বরাবর বিশেষত কুচযুক্ত। স্পাইক ঘন, অনেক পুষ্পবিশিষ্ট, অস্পষ্ট ভাবে এক পার্শ্বীয়, রোমশ, নীল, মঞ্জরীপত্র এবং উপমঞ্জরীপত্র উপস্থিত। বৃতি ঘনভাবে কুচযুক্ত, বাইরের বৃত্যংশ ২.৫ সেমি লম্বা, প্রায় সমান তবে কখনও একটা সামান্যভাবে দ্বি-খন্ডিত, ডিম্বাকৃতি, সিলিয়াযুক্ত, অনুদন্তর, হালকা ভাবে কুচযুক্ত, শিরাযুক্ত (৯-১০ টি শিরা নিম্নাংশ থেকে বিচ্ছুরিত, ফলে স্কেরিয়াস), ভিতরের গুলি ১.৬ সেমি। লম্বা, রৈখিক-বল্লমাকার, সাদা রোমাবৃত। দলমণ্ডল ফানেল আকৃতির, ৩ সেমি লম্বা, খন্ড ডিম্বাকৃতি-দীর্ঘায়ত, স্থূলাগ্র। পুংকেশর ৪টি, ২টা সম্পূর্ণ এবং ২টা অবিকশিত। ফল ক্যাপসিউল, ৪-বীজবিশিষ্ট, মসৃণ, তীক্ষ্মাগ্র। বীজ রেশমি।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৪০ (Kumar and Subramaniam, 1986)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
এই প্রজাতিটি বনভূমিতে দেখা যায়। মূলত বন্য পরিবেশে ভালো জন্মে। বাড়ির বাগানে লাগাতে চাইলে যত্ন নিতে হবে। ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর-মার্চ। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: ভারত (উপরের গঙ্গা বাহিত এলাকা) এবং মায়ানমার। বাংলাদেশে ইহা চট্টগ্রাম বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
উদ্ভিদটি তিক্ত, তীব্র গন্ধযুক্ত। পুঁজস্রাবী ক্ষত, চর্মরোগে, লিউকোডারমা, ব্যথা, চুলকানি, প্রদাহ, ব্রংকাইটিস এবং দাঁতের অসুখে এই উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয় (Bakshi et al., 1999)। তাছাড়া বাগানের শোভাবর্ধক হিসাবে চাষ করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
সাঁওতাল এর জনগোষ্ঠী এই উদ্ভিদের মূল কাশি নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে। ভারতের – উড়িষ্যা প্রদেশের কিছু আদিবাসী এর মূলের নির্যাস কাশি, ব্রংকাইটিস, জ্বরে, এবং পাতার নির্যাস চর্মরোগ এবং দাঁতের মাড়ি ব্যথায় ব্যবহার করে (Bakshi et al., | 1999)
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠখণ্ডে (আগস্ট ২০১০) নীল ঝাঁটি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নীল ঝাঁটি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই তবে শোভাবর্ধনের জন্য চাষাবাদ দরকার।
তথ্যসূত্র:
১. মমতাজ বেগম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।