ভূমিকা: উমুল কুচি (বৈজ্ঞানিক নাম: Caesalpinia digyna) এক প্রকারের ভেষজ আরোহী গুল্ম। বাংলাদেশসহ উষ্ণাঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশে জন্মে।
উমুল কুচি- এর বর্ণনা:
বৃহৎ, বিশৃঙ্খলভাবে বেড়ে ওঠা আরোহী গুল্ম, বাকল গাঢ় বাদামী বা লাল, গাত্র কন্টক পশ্চাদমুখী বক্র, শাখা প্রশাখা রোমশ বিহীন বা পালকাবৃত।
পত্র যৌগিক, দ্বিপক্ষল, একান্তর, সোপপত্রিক, উপপত্র রৈখিক ভল্লাকার, সঁচাকৃতি, প্রায় ২ মিমি লম্বা, আশুপাতী, পত্রক অক্ষ ১৫-২০ সেমি লম্বা, রোমশ বিহীন বা স্বল্প রোমশ, পক্ষ ৬-১২ জোড়া, ৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা,
মূলীয় অংশে উপপত্রীয় কন্টক বিদ্যমান, পত্রক ৮-১২ জোড়া, ৮-১২ x ৩-৪ সেমি, প্রতিমুখ, অর্ধবৃন্তক, দীর্ঘায়ত, স্থূলা থেকে গোলাকার, মূলীয় অংশ সামান্য অসম, নিম্ন পৃষ্ঠ ধূসর।
পুষ্প বিন্যাস অতি অক্ষীয় থেকে শীর্ষীয় প্যানিকল, ১৬-৩০ সেমি লম্বা, তরুণ অবস্থায় রোমশ। পুষ্প উজ্জ্বল হলদে, আড়াআড়ি ৮-১০ সেমি, মঞ্জরীপত্র সূচাঁকৃতি প্রায় ৫ মিমি লম্বা, আশুপাতী, সন্ধিযুক্ত নয়।
বৃতি নালি অতি খাটো, নালিকাকার, বৃত্যংশ ৫ টি, দীর্ঘায়ত, স্থূলাগ্র, দাগযুক্ত, সর্বনিম্নেরটি ফণাকৃতি, রোমশ বিহীন। পাপড়ি ৫ টি, বৃতি নালির মুখে সন্নিবিষ্ট, বি ডিম্বাকার, দীর্ঘায়ত বা গোলাকার, ধ্বজক মধ্যস্থানে সঙ্কুচিত, দল বৃন্তের প্রান্ত বরাবর ভিতরের দিকে রোমশ, পশ্চাদমুখী বক্র।
পুংকেশর ১০ টি, মুক্ত, পুংদন্ড গোড়ার দিকে প্রসারিত এবং ঘণ পশমী রোমশ। গর্ভাশয় রোমশ বিহীন বা সন্ধিরেখা বরাবর, স্বল্প রোমশ।
ফল পড, ৪-৬ x ১.৫-২.০ সেমি, উপবৃত্তাকার দীর্ঘায়ত, রসাল, রস স্ফীত, দুই বীজের মধ্যবর্তী অংশ সামান্য সঙ্কুচিত, দুই সন্ধিরেখা বরাবর প্রান্ত স্ফীত, ঠোঁট যুক্ত, পাকানো খাটো বৃন্তক অবিদারী। বীজ প্রতি পডে ২-৪ টি, ১.২-২.০ x ০.৭-০.৯ সেমি, অর্ধগোলাকার।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
অরণ্যের গাছ-গাছড়া শুন্য ভূখন্ড, ঝোপ ঝাড়। ক্ষুদ্র ঝোপ, কখনও পাহাড়ী ঢাল এবং উন্মুক্ত শুষ্ক জায়গা। ফুল ও ফল ধারণ সময় জুলাই জানুয়ারি। বংশ বিস্তার হয় বীজের দ্বারা।
উমুল কুচি- এর বিস্তৃতি:
কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, লাওস, মালয় পেনিনসুলা, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার, ঢাকা ও ঠাকুরগাঁও জেলায় জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন, পশুখাদ্য ও ভেষজ ওষুধ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মূল সঙ্কোচক, বহুমূত্র ও যক্ষা রোগের চিকিৎসায় মূল ব্যবহার করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
মায়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে মূল পীষে পানির সাথে মিশ্রিত করে সেই পানি জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার প্রচলন বিদ্যমান (Caius, 1989)। পড় ট্যানিনের Een 5769 forgou.
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) উমুল কুচি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে উমুল কুচি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১০-১১১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি.দ্র ছবিটি ফেসবুক গ্রুপ ”বাঙলার গাছ-গাছড়া থেকে নেওয়া হয়েছে। আলকচিত্রী: Rupshikha Banoo
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।