ভূমিকা: কালোমরিচা (বৈজ্ঞানিক নাম: Clausena suffruticosa) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
কালোমরিচা-এর বর্ণনা:
সরল কান্ডবিশিষ্ট নিচুগুল্ম, ৩০-৪০ সেমি উঁচু, সমগ্র। অপরিণত অংশ কোমলভাবে রোমাবৃত। পত্র সচূড় পক্ষল, ৩০-৪০ সেমি লম্বা, ১১-১৭ পত্রক, পত্রক ২-৪ x ১-২ সেমি, সর্বনিম্নেরটি অর্ধপ্রতিমুখ, ডিম্বাকার, সম-পার্শ্বীয়, প্রান্ত অখন্ডিত, শীর্ষেরটি একান্তর, ডিম্বাকার-আয়তাকার থেকে চতুর্ভূজাকার-উপবৃত্তাকার, অসম-পার্শ্বীয়, কখনো সূক্ষ্মাগ্র, কখনো শীর্ষ গোলাকার, অপরিণত অবস্থায় ঘনভাবে কোমল রোমাবৃত, পরিণত অবস্থায় মসৃণ।
পুষ্পবিন্যাস সরল বা সরু প্যানিকল, কাক্ষিক। পুষ্প ছোট, ৪-অংশক, সবুজাভ-সাদা, পুষ্পবৃন্ত সরু। বৃত্যংশ ৪টি, বহির্ভাগে অণু রোমাবৃত। পাপড়ি ৪টি, প্রান্ত-আচ্ছাদী, প্রায় ৪ মিমি লম্বা, অণুরোমশ, অবতল।
পুংকেশর ৮টি। গর্ভাশয় ডিম্বাকার, ১.৫-২.০ x ১.১-১.৬ মিমি, ৪-প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড খাটো, বেলনাকার, ০.৪-০.৮ x ২.০ মিমি, শীর্ষ কর্তিতা, গর্ভমুন্ড খাঁজহীন, ডিম্বক প্রত্যেক কোষে উপরিপন্ন।
ফল আয়তাকার বা মুষলাকার, ০.৮-১.০ x ২.৫ সেমি, ঝুলন্ত, গ্রন্থিল, পাকলে উজ্জ্বল কমলা, রসালো, ১-বীজী। বীজ সবুজ।
আবাসস্থল:
অরণ্যাঞ্চলের পরিবেশে ভালোভাবে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ মার্চ-জুন। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি:
ভারত, মায়ানমার এবং চীন। বাংলাদেশের রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট এবং মৌলভীবাজার জেলার লাওয়াযছড়ায় পাওয়া যায়।[১]
কালোমরিচা-এর ব্যবহার:
পাতাগুলি বা শিকড় বিভিন্ন রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। জ্বর, নিউমোনিয়া, মাথা ব্যথা, নিম্ন রক্তচাপ, গলা এবং সাইনুসাইটিস, যৌনবাহিত রোগ, এফ্রোডিসিয়াক এবং অ্যান্থেলিমিন্টিক হিসাবে, গর্ভবতী মহিলাদের টনিক হিসাবে এবং শিশুদের রিককেটগুলি প্রতিরোধ করতে এবং খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য টনিক হিসাবে।
হাঁচি, কাশি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস এবং কিডনির অসুস্থতা, অনিয়মিত মাসিক, গর্ভপাত, চর্মরোগ ও মৃগী রোগ এবং সন্তান প্রসব সহজ করার জন্য এবং জরায়ু থেকে রক্ত বের করে দেওয়ার জন্য পার্থক্য হওয়ার আগে এবং মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য এই প্রজাতির মূল বেশ কার্যকর।
বদহজমের সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে শিকড় চিবানো হয়। এ গাছের চূর্ণ করা পাতাগুলি একটি অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যানালজেসিক হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং দুষ্ট ক্ষত, মুখের সংক্রমণ, ওটিটিস এবং ফোঁড়া, পোড়া স্থান, রক্তক্ষরণ, বাত ও শরীরের সাধারণ ব্যথায় প্রয়োগ হয়।
চূর্ণ করা পাতা গৃহপালিত প্রাণীতে ক্ষত সারানোর চিকিৎষার জন্য এবং একটি সাপের কামড় প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[২]
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কালোমরিচা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে এটা সংকটের কোনো সম্ভবনা নেই ও বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে কালোমরিচা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. https://www.flowersofindia.net/catalog/slides/Horsewood.html
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Anurag Sharma
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।