দিয়েং জুলকাহ পার্বত্যঞ্চলে জন্মানো ভেষজ ও শোভাবর্ধক গুল্ম

গুল্ম

দিয়েং জুলকাহ

বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum wallichii Merr., J. Arn. Arb. 33: 220 (1952), সমনাম: Clerodendron nutans Wall, (1825), Volkameria pendula Wall. ex Moldenke (1940). ইংরেজি নাম: Fire Bush, Nodding Tube Flower, Wallich’s Glory Bower. স্থানীয় নাম: দিয়েং জুলকাহ।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants অবিন্যসিত: Angiosperms অবিন্যসিত: Eudicots  বর্গ: Lamiales পরিবার: Lamiaceae গণ: Clerodendrum  প্রজাতি: Clerodendrum wallichii

ভূমিকা:  দিয়েং জুলকাহ (বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum wallichii) এটি লামিয়াসি পরিবারের ক্লেরোডেন্দ্রোম গণের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশের বনাঞ্চলে জন্মে। জংলী প্রজাতি হলেও ফুলের সৌন্দর্যের জন্য বাড়িতে বা বাগানে লাগানো হয়।

দিয়েং জুলকাহ-এর বর্ণনা:

দিয়েং জুলকাহ গুল্ম বিশেষ প্রজাতি। এটি ৩.৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু, বাকল লালাভ বাদামী, শাখাপ্রশাখা চারকোণাকার, রোমহীন। পত্র সরল, প্রতিমুখ, ১৫-২০ x ১.৫-৫.০ সেমি।

পাতা দেখতে বিডিম্বাকার-আয়তাকার বা বিবল্লমাকার বা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, দীর্ঘা, ঝিল্লিময়, প্রান্ত অখন্ডিত বা হালকা দন্তুর, রোমহীন; পত্রবৃন্ত ১-২ সেমি লম্বা, উপরিভাগ খাঁজযুক্ত।

পুষ্পবিন্যাস লম্বা, হালকা, ঝুলন্ত রেসিম। পুষ্প সাদা, বৃন্তক, পুষ্পবৃন্ত প্রায় ২ সেমি লম্বা, সরু, পুষ্পবৃন্তের গোড়ায় ২টি ক্ষুদ্র মঞ্জরীপত্রযুক্ত এবং মধ্যভাগে ২টি মঞ্জরীপত্রিকাযুক্ত।

বৃতি নলাকার, ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা, সংকুচিত, রক্ত-বেগুনি, রোমহীন, নল খুবই খাটো, গভীরভাবে ৫-খন্ডিত, খন্ডক ডিম্বাকার-বল্লমাকার, সূক্ষ্মাগ্র, লালাভ রক্ত-বেগুনি।

দলমন্ডল নলাকার, প্রায় ১.২ সেমি লম্বা, রোমহীন বা হালকা বা সূক্ষ্ম রোমশ, গ্রীবা সরু, ৫-খন্ডিত, খন্ডক ডিম্বাকার, গোলাকার, ছড়ানো।

পুংকেশর ৪টি, দীর্ঘদ্বয়ী, পুংদন্ড সরু, প্রায় ৩.৫ সেমি লম্বা, অধিক বহির্মুখী, দলমন্ডলের গ্রীবায় প্রবেশিত, পরাগধানী ছোট, ডিম্বাকার।

গর্ভাশয় ছোট, রোমহীন, গর্ভদন্ড পুংদন্ড থেকে খাটো, গর্ভমুণ্ড ক্ষুদ্র, গাঢ় রক্ত-বেগুনি । ফল ড্রপ, গোলাকার, ১.০-১.৫ সেমি চওড়া, মসৃণ, চকচকে, প্রসারিত বৃতির উপর অবস্থিত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৫২ (Sharma and Mukhopadhyay, 1963)

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

আদ্র এবং ছায়াযুক্ত এলাকা পছন্দকারী। ফুল ও ফল ধারণ মে থেকে নভেম্বর। বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং শাখা কলম দ্বারা।

আরো পড়ুন:  শিয়ালমুত্রা বা ডানকোনী গুল্মের ১৮টি ভেষজ গুণ

দিয়েং জুলকাহ-এর বিস্তৃতি:

হিমালয়ান ভারতের স্বদেশী, পাকিস্তান, ভূটানে বিস্তৃত, মালয়া পেনিনসুলা, ইন্দো-চীন, দক্ষিণ চীন, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ওয়েষ্ট ইন্ডিজের কিছু অংশ এবং ভেনিজুয়েলায় প্রাকৃতিক।

বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তৃত (Mia and Uddin, 2000)।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে আবাদ এবং সৌন্দর্যের জন্য টবে লাগানোর উপযোগী। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: সলোমন দ্বীপপুঞ্জে শিরোমাল্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দিয়েং জুলকাহ্ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে দিয়েং জুলকাহ্ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ইন-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৬২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Gita Arjun

Leave a Comment

error: Content is protected !!