ভূমিকা: কালিলতা বা পান লতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Derris trifoliata) এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। শোভা বর্ধনের জন্য লাগানো হয়।
কালিলতা বা পান লতা-এর বর্ণনা:
আরোহী গুল্ম অথবা লতা, শাখা মসৃণ, বাকল গাঢ় ধূসর, ছড়ানো বায়ুরন্ধ্র দ্বারা আবৃত। পত্র ১২-২০ সেমি লম্বা, পত্রাক্ষ রেখাযুক্ত, মসৃণ, পত্রক ৩-৭, ৫-১০ x ৩-৫ সেমি, শীর্ষেরটি বৃহত্তম, ডিম্বাকার অথবা ডিম্বাকার-দীর্ঘায়িত, প্রায় চর্মবৎ, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র অথবা দীর্ঘা, মাঝে মাঝে সামান্য খাতা, গোড়া গোলাকার অথবা হৃৎপিন্ডাকার, উভয় পৃষ্ঠ মসৃণ, উপরের পৃষ্ঠ খুবই চকচকে, অতি সূক্ষ্মভাবে জালিকাকার শিরাবিশিষ্ট, অণুবৃন্ত ৩-৬ মিমি লম্বা। পুষ্প অক্ষীয় রেসিমে বিন্যস্ত,পত্রাক্ষের পর্বে খাটো বৃন্তে তৈরী হয়, মঞ্জরীপত্র এবং মঞ্জরীপত্রিকা অতি সূক্ষ্ম, ডিম্বাকার-আয়তাকার, অর্ধসূক্ষ্মাগ্র।
বৃতি প্রায় ২.৫ মিমি লম্বা, মসৃণ অথবা কাছাকাছি, দন্তক কর্তিতাগ্র অথবা অস্পষ্ট, কিনারা সিলিয়াযুক্ত। দলমণ্ডল প্রায় ১ সেমি লম্বা, গোলাপের ন্যায় গোলাপি, যথাযথভাবে প্রায় ১.৩ সেমি লম্বা, বৃক্কাকার, খাতা, গোড়া চর্মবৎ নয়। পুংকেশর একগুচ্ছীয় । গর্ভাশয় লোমশ। ফল একটি পড, ডিম্বাকার। অথবা বর্তুলাকার, পাতলা, চ্যাপ্টা, জালিকাকার শিরাবিশিষ্ট, অল্প তীক্ষ্ম, মসৃণ, উপরের সন্ধিরেখা কোনক্রমে পক্ষযুক্ত, পরিপক্কতার পর ফ্যাকাশে হলুদ। বীজ ১-২, বৃক্কাকার, চাপা।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২০ (Fedorov, 1969) ।।
আবাসস্থল ও বিস্তৃতি:
পাহাড়ী বন, ম্যানগ্রোভ বন এবং কর্দমাক্ত সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল মার্চ-জুন। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি: মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং মাদাগাস্কার। বাংলাদেশে ইহা সুন্দরবন এবং চট্টগ্রামে বিস্তৃত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাকল বাত রোগে ব্যবহৃত হয়। অর্থনৈতিকভাবে আঁশ, গবাদি পশুর খাদ্য, ঔষুধ এবং মাঝে মাঝে বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: এর বাকল মাছ-বিষাক্তকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কালিলতা বা পান লতা-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কালি লতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণ বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কালি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি রক্ষার জন্য ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এ টি এম নাদেরুজ্জামান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৭১-৭২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।