পরিচিতি: ধুতরা বাংলাদেশ ও ভারতের সোলানাসি পরিবারে Datura বা ধুতুরা গণের একটি প্রজাতি। এরা শক্তিশালী বীরুৎ অথবা ছোট গুল্ম, ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু, মসৃণ অথবা অতি সূক্ষ্মভাবে লোমশ, শাখা সবুজ অথবা রক্তবেগুনি, বিস্তৃত, প্রায়শই কিছুটা জিগজ্যাগ, সবুজ অথবা হালকা লাল হতে প্রায় কাল। পত্র ৮-১৭ x ৪-১২ সেমি, ডিম্বাকার হতে ত্রিকোণাকার, প্রশস্তভাবে ডিম্বাকার, অখন্ড, তরঙ্গিত অথবা গভীরভাবে দন্তকযুক্ত, সূক্ষ্মাগ্র হতে দীর্ঘাগ্র, ঝিল্লিময়, গোড়া তির্যক, পত্রবৃন্ত ৫-১০ সেমি লম্বা।[১]
এদের পুষ্প অক্ষীয়, একক, পুষ্পবৃন্তিকা ১-২ সেমি লম্বা। বৃতি ৩-৮ সেমি লম্বা, নলাকার, মসৃণ অথবা অতি সূক্ষ্মভাবে লোমযুক্ত, অসমানভাবে শীর্ষে বিভাজিত, খন্ডক ০.৫-১.০ সেমি লম্বা, মুক্ত, ডিম্বাকার-ত্রিকোণাকার, সূক্ষ্মাগ্র হতে দীর্ঘাগ্র। দলমন্ডল ১-৭ সেমি লম্বা, চুঙি-আকৃতির, দলফলক আড়াআড়িভাবে ৫-৮ সেমি, মাখনের মত সাদা অথবা রক্তবেগুনি অথবা লাল ফিকে লালচে বেগুনি রেখাযুক্ত, মসৃণ অথবা অতি সূক্ষ্মভাবে লোমযুক্ত, খন্ডক সাধারণত ৫টি, কদাচিৎ ৬টি অথবা অধিক, ডিম্বাকার, দীর্ঘাগ্র অথবা তীক্ষ্মাগ্র, মাঝে মাঝে দ্বিগুণ গঠনবিশিষ্ট (দলমন্ডলের ভিতর দলমন্ডল) অথবা খুব কদাচিৎ তিন গুণ। পুংদন্ড পরাগধানী হতে বেশ লম্বা, উপরের অর্ধেক মসৃণ, নীচের অর্ধেক লোমযুক্ত, পরাগধানী আয়তাকার। গর্ভাশয় অধিগর্ভ, মসৃণ, গর্ভদন্ড সূত্রাকার, লম্বায় পুংদন্ডের সমান, মসৃণ, গর্ভমুন্ড স্ফীত, ২-খন্ডক।[১]
সাদা ফুলের গাছই যত্রতত্র দেখা যায়; বর্ষাকালে ঘণ্টার আকারে সাদা ফুল হয়, তাই তার এক নাম ‘ঘণ্টাপুষ্প’। লাড়ুর মত গোল ফলের চারিদিকে ছোট ছোট কাঁটা আছে, তাই এই গাছের আর একটি পর্যায় শব্দনাম ‘কণ্টফল’। গাছ, ফল, পাতা সবই সবুজ রং-এর; কোনো পশুপাখি এর পাতা বা ফল খায় না, ফলের মধ্যে গুচ্ছাকারে বহু সাদা বীজ হয়, এর ফল পাকলে ফেটে যায়, তখন ঐ বীজের রং পাংশুটে বা ছাই রং এর হয়।[২]
ধুতুরার ফল একটি উপগোলাকার ক্যাপসিউল, পরিপক্কতার পর সংনমিত, প্রায় সমান দৈর্ঘ্যের অসংখ্য মোচাকার গুটিকাযুক্ত বা কাঁটাযুক্ত, গুটিকা ০.৩-০.৫ সেমি অথবা অধিক লম্বা, ফলের গোড়া একটি ০.৫ সেমি অথবা অধিক প্রশস্ত স্থায়ী বৃতির কলারসহ সুশোভিত করা। ধুতরার বীজ ০.৪-০.৫ সেমি লম্বা, অসংখ্য, চাপা, মোটামুটিভাবে ত্রিকোণাকার, বাদামী, কুঞ্চিত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে।[১] ফল বিদারী। ফলে অসংখ্য বাদামি বীজ থাকে। ধুতুরার বীজ বিষাক্ত। বীজে চাষ করা যায়।[২]
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৪ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল: অযত্নে বেড়ে ওঠা এই গুল্মটি বর্জ্য পদার্থযুক্ত জায়গা, রাস্তার কিনারা, পরিত্যক্ত জমি, নদীর কিনারা এবং বালুচর।[১]
বিস্তৃতি: সম্ভবত আমেরিকাতে স্থানীয়, বাংলাদেশসহ ব্যাপকভাবে বালুতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে, সকল গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং অর্ধগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে আবাদ করা হয়। বাংলাদেশ, ভারতে প্রায় সকল স্থানেই এদেরকে দেখা যায়। এক একটা গাছ ৪ থেকে ৫ বছরও বেঁচে থাকে।[২]
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: ধুতুরার এর শুকনো পাতা ঐতিহ্যগতভাবে হাঁপানী নিরাময়ে “অ্যাজমা সিগারেটস” হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আরো কিছু ভেষজ গুনাগুণ রয়েছে। ধুতরা ভেষজগুণে অনন্য। ধুতুরার ভেষজ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ব্রুনাইতে পুষ্পের মিশ্রণ মানসিক ভারসাম্যহীনতা নিরাময়ে পান করা হয় (de Padua et al., 1999)।
প্রজাতিটির সংকটের কারণ: আপাতত কোনো হুমকি নেই।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে (আগস্ট ২০১০) ধুতুরাকে বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় আশংকামুক্ত (lc) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এটিকে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
বিবিধ তথ্য: কালো ধুতরাকে অনেকে কনক ধুতরাও বলে থাকে। এই ধুতরার শিরা, বোঁটা, গাছের ও ফুলের রং গাঢ় বেগুনি রং এর, বৃন্তে একটি ফুলও হয়, আবার একটি বৃন্তে অন্তঃপ্রবিষ্ট দুটি বা তিনটি ফুলও হয়; মনে হয় যেন একটির মধ্যে আর একটি গুঁজে দেওয়া। এরা প্রজাতিতে কিন্তু একই।
এছাড়াও ভারত নেপাল ও বাংলাদেশে রাজধুতরা বা রাজঘন্টা নামে একটি গাছ পাওয়া যায় যার বৈজ্ঞানিক নাম Brugmansia suaveolens. এরা বাংলাদেশে দৈবাত দেখা যায়। পেরু দেশের প্রজাতি। ২-৩ মিটার উঁচু গাছ, ফুল সুগন্ধি, ১৫-২০ সে.মি. লম্বা, ঝুলন্ত। ডাল মাটিতে লাগালে তাতে শিকড় গজায়। কলমে চাষ।
কাজী নজরুল ইসলাম ধুতরাকে নিয়ে লিখেছেন গান ‘কে দিল খোপাতে ধুতরা ফুল গো’। ধুতরা উত্তরবংগে যথেষ্ট পাওয়া যায়, বাংলাদেশের অন্যত্র এখন আর সহজলভ্য নয়।
তথ্যসূত্র:
১. এম মতিয়ুর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৯৮-২৯৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২৮০-২৮৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।