ভূমিকা: কাঁটা মুকুট (বৈজ্ঞানিক নাম: Euphorbia milii ইংরেজি: Hiptage) হচ্ছে ইউফরবিয়াসি পরিবারের ইউফরবিয়া গণের কাঁটাযুক্ত গুল্ম। টবে আবাদযোগ্য এই গাছ বাড়ি বা বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Euphorbia milii Des., Bull. Hist. Nat. Soc. Linn. Bordeaux 1: 27 (1826). সমনাম: Euphorbia splendens Boj. (1829), Euphorbia bojeri Hook. (1836). ইংরেজি নাম: Crown of Thorns. স্থানীয় নাম: কাঁটা মুকুট। জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাসজগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Magnoliophyta. বর্গ: Malpighiales. পরিবার: Euphorbiaceae. গণ: Euphorbia.প্রজাতি:Euphorbia milii.
কাঁটা মুকুট গাছের বর্ণনা:
কাঁটা মুকুট ঋজু বা লতানো গুল্ম। এই প্রজাতির শাখা রোমশ বিহীন কাঁটাযুক্ত। গুল্মটি প্রায় ৬০ সেমি লম্বা হয়; শাখা বাড়ে গোলাকার বা কোণাকৃতিভাবে। শাখা ১ সেমি পুরু হয় এবং ধূসর রঙের। কান্ডপত্র একান্তর, বিডিম্বাকার থেকে বিভল্লাকার। কান্ডের দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৬ সেমি ও প্রস্থ ০.৫ থেকে ২.০ সেমি। স্থূলাকার কান্ডের পার্শ্বীয় শিরা ১৫ জোড়া, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ ফ্যাকাশে, উপপত্র কন্টকিত, ১-২ সেমি লম্বা।
কাঁটা মুকুটের পুষ্পবিন্যাস সায়াথিয়া, কাক্ষিক মঞ্জরীদন্ড যুক্ত সাইম, প্রতিটি মঞ্জরী ২টি সায়াথোফিল যুক্ত, সায়াথোফিল অনুপ্রস্থ ডিম্বাকৃতি গোলাকার। ফুলের দৈর্ঘ্য ৪-৮ মিমি ও প্রস্থ ৫-১০ মিমি। ফুল স্থূলাগ্র থেকে গোলাকার, ফুলের উপরের দিক টকটকে লাল ও নিচের অংশ বেগুনি লাল। মঞ্জরীদন্ড প্রায় ৬.৫ সেমি লম্বা, গ্রন্থি অনুপস্থিত, ডিম্বাকার, বেগুনি লাল বা কমলাবর্ণ। গর্ভদন্ড মূলীয় অংশ যুক্ত, ২ মিমি লম্বা, ২ খন্ডিত, গর্ভমুন্ড স্ফীত, পশ্চাতমুখী বক্র। ফল ত্রিখন্ডিত, কোণাকৃতি, আকারে ৩.৫ x ৪.০ মিমি। ফলের ত্বক মসৃণ, রোমশ বিহীন, সায়াথিয়ামের অভ্যন্তরে পরিপক্ক হয়। বীজ দেখতে ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্য ২.৫ ও প্রস্থ ১.৭ মিমি, গুটিকাকার বাদামী, কেরাঙ্কল, যুক্ত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৪০ (Darlington and Wylie, 1955).
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার
কাঁটা মুকুট গুল্মটি টবে চাষ করা যায়। এটি শহরের বাড়ির বেলকোনিতে শোভা পাওয়ার মতো প্রজাতি। জৈব সার মিশ্রিত মাটিতে সতেজ থাকে; তবে এই গুল্ম ধীরে বাড়ে। স্যাঁতস্যাঁতে ছায়াযুক্ত স্থানে ফুলের গাঢ়ত্ব কম থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক ভবনের বাগান, বারান্দায় টবে লাগানো হয়। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও কর্তিত ডালের দ্বারা। প্রায় সারা বছর ফুল ও ফল ধরে।
বিস্তৃতি
আমেরিকার উষ্ণাঞ্চলে আদিনিবাস। বাংলাদেশের বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও রাজশাহী জেলায় জন্মে। অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাহারি উদ্ভিদরূপে রোপণ করা হয়। এই প্রজাতির আদি নিবাস মাদাগাস্কার। Baron Milius গবেষণা করে প্রজাতিটিকে ১৮২১ সালে ফ্রান্সে চাষ শুরু করেছিলেন। এজন্য তার স্মরণে এবং তার সম্মানার্থে প্রজাতির নামকরণ এমন করা হয়েছে।
কাঁটা মুকুট সম্পর্কে কথিত আছে যে, প্রজাতিটিকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রাচীনকালে থেকেই চাষ বা জন্মে থাকে। এই গাছের নানা ব্যবহারও ছিলো সেই সময় থেকে; এবং এই কথাও পৌরাণিক রূপ পায় যে, শাস্তি বা নির্যাতন হিসাবে যিশু খ্রিস্টের মাথায় কাঁটার মুকুট পড়ানো হয়েছিলো।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাঁটা মুকুট প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কাঁটা মুকুট সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৩৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: H. Zell
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।