ভূমিকা: খুসকা ডুমুর (বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus hirta) ফিকাস গণের মরাসিয়া পরিবারের গুল্ম। এই প্রজাতিটি পাহাড়ি জায়গায় অযত্নে জন্মে। এটি অনেক ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
খুসকা ডুমুর-এর বর্ণনা:
এই প্রজাতি গুল্ম অথবা ছোট বৃক্ষ আকারের। ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পল্লব সাদাটে থেকে গাঢ় বাদামী অণুরোমাবৃত থেকে অণুকন্টক রোমাবৃত এবং ফ্যাকাশে বাদামী থেকে হলুদাভ অণুকন্টক রোমাবৃত থেকে প্রায় খররোমাবৃত বা গাঢ় বাদামী খররোমাবৃত। পাতা সর্পিলাকারে সজ্জিত, অণুপর্ণী, উপপত্র ০.৮-৩.০ সেমি লম্বা, সিলিয়াযুক্ত, লাল, ডিম্বাকার ভল্লাকার, ঝিল্লিময়, রোমশ, আশুপাতী, ফলক বৃন্তক, বৃন্ত ১-৮ সেমি লম্বা, সাদাটে অণুরোমশ থেকে ফ্যাকাশে থেকে গাঢ় বাদামী অণুকন্টত রোমাবৃত থেকে খররোমাবৃত অথবা আংশিক বাদামী এবং আংশিক সাদা রেশমী, ফলক উপবৃত্তাকার থেকে দীর্ঘায়ত থেকে বিডিম্বাকার বা ডিম্বাকার থেকে হৃৎপিণ্ডাকার থেকে উপবর্তুলাকার, তরুণ অবস্থায় ৩-৭ করতল খন্ডিত, অথবা পক্ষল খন্ডিত, ৮-৩০ × ৪-১২ সেমি, কাগজবৎ থেকে অর্ধচর্মবৎ, শীর্ষ তীক্ষ্ণ থেকে দীর্ঘাগ্র, নিম্নপ্রান্ত কীলকাকার, গোলকাকার অথবা অগভীরভাবে হৃৎপিণ্ডাকার, কিনারা অখন্ড বা ক্ষুদ্রাকারে কচ, উপরের পৃষ্ঠ অণুকুর্চাবৃত থেকে অণূকন্টক রোমাবৃত থেকে খররোমাবৃত, নিম্নপৃষ্ঠ ঘন থেকে বিক্ষিপ্তভাবে সাদাটে অণুরোমাবৃত, পার্শ্বশিরা ৪-৭ জোড়া, মূলীয় জোড়া অধিকাংশক্ষেত্রে শাখান্বিত, মূলীয় পার্শ্বশিরার কক্ষে মোমতুল্য গ্রন্থি বিদ্যমান।
ফিগ সাধারণ পত্রবহুল বিটপে, কাক্ষিক, জোড়ায় জোড়ায়, অবৃন্তক অথবা খর্বাকার বৃন্ত বিশিষ্ট, লম্বা, দৃঢ় ও চেপ্টা সোনালী-হলুদ বা বাদামী রোমযুক্ত, কখনও অধমসৃণ, মূলীয় মঞ্জরীপত্র ৩টি, ডিম্বাকার-ভল্লাকার, ২-৬ মিমি লম্বা, স্থায়ী অথবা আপাতী, পুষ্পধার গোলকাকার, নিরেট ডিম্বাকার বা উপবৃত্তীয়, শুষ্ক অবস্থায় ০.৮-২.৪ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট, কখনও পার্শ্বীয় মঞ্জরীপত্র বর্তমান, পরিণত অবস্থায় লাল।
পুং পুষ্প: খর্বাকার বৃন্তবিশিষ্ট, বৃতি ৪-খন্ডিত, লাল, ভল্লাকার, পুংকেশর ২-৩টি, পরাগধানী উপবৃত্তীয়, পুংদন্ড অপেক্ষা বৃহত্র। গল পুষ্পের বৃতি ৪-খন্ডিত, গর্ভাশয় গোলকাকার বা নিরেট ডিম্বাকার-গোলকাকার, মসৃণ, গর্ভদন্ড পার্শ্বীয়, খর্বাকার, গর্ভমুও চুঙ্গি-আকার। স্ত্রী পুষ্প: অবৃন্তক বা খর্বাকার বৃন্তবিশিষ্ট, বৃতির খন্ডক ৪টি, গর্ভদন্ড স্থায়ী, লম্বা, একপাশে সংযুক্ত, কিছুটা অবতল, গর্ভমুন্ড মুষলাকৃতি। ফল অ্যাকিন, উপবৃত্তীয়, গোলকাকার, মসৃণ। ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৬ (Krause, 1930)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ:
খুসকা ডুমুর অরণ্য এবং অরণ্যের প্রান্তে জন্মে। এর ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর থেকে মে মাস। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি:
ভুটান, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামসহ বাংলাদেশে এই প্রজাতিটির বিস্তৃতি সিলেট জেলায় সীমাবদ্ধ (Alam, 1981)। এই গাছের পাতা গরুকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) খুসকা ডুমুর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই প্রজাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে খুসকা ডুমুর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালাতে হবে এবং ইহার প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণসহ স্ব-স্থানের বাইরে সংরক্ষণের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
তথ্যসূত্র ও টীকা:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ২২১-২২২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Saroj Kasaju
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
এই গাছটি খুব দেখা যায়। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।