সিম বুসাক এশিয়ার দেশসমূহে জন্মানো উপকারী গুল্ম। শিশু থেকে বয়স্কদের চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা আছে। এছাড়া আদিবাসীরা নানা প্রকার রোগ সারাতে এই প্রজাতিটি ব্যবহার করে।
সিম বুসাক-এর বিবরণ:
সিম বুসাক খাড়া ও অধিক শাখান্বিত গুল্ম। এটি ১.২-৩.০ মিটার উঁচু হয়। এর শাখা-প্রশাখা গোলাকার, অগ্রভাগে রোমশ। পাতা একফলক, পত্রক ডিম্বাকার-আয়তাকার, অর্ধ-চর্মবৎ, সূক্ষ্মভাবে গ্রন্থিল, সূক্ষ্মাগ্র, সবুজ, উপরের পৃষ্ঠ মসৃণ অথবা প্রায় মসৃণ, নিচের পৃষ্ঠের শিরার উপরিভাগ ফ্যাকাশে এবং কমবেশী রেশমী ক্ষুদ্র নরম রোমাবৃত, গোড়া গোলাকার বা কর্তিতা, প্রধান শিরা ৮-১০ জোড়া, নিম্নপৃষ্ঠে অত্যন্ত সুস্পষ্ট, পত্রবৃন্ত ০.৬- ২.৫ সেমি লম্বা, রোমশ, উপপত্র শুষ্ক ঝিল্লিময়, বল্লমাকার, শীঘ্রমোচী, উপপত্রিকা অনুপস্থিত।
পুষ্পমঞ্জরী অক্ষীয় ও প্রান্তীয় সরল বা শাখান্বিত রেসিম, ১৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা। ফুল সরু, রোমশ, আঁকাবাঁকা পত্রাক্ষ বরাবর ঘনভাবে বিন্যস্ত, মঞ্জরীপত্র বৃহৎ, ঝিল্লিময়, স্থায়ী, সচরাসর চওড়ায় লম্বা অপেক্ষা অধিক, গোড়ায় হৃদপিণ্ডাকার, সুস্পষ্টভাবে শিরাযুক্ত ও জালিকাকারে শিরা বিন্যস্ত, বৃন্তক, প্রত্যেক মঞ্জুরীপত্র আবর্তিত এবং ২টি অথবা অধিক সংখ্যক ক্ষুদ্র পুষ্পকে আবৃত করে রাখে।
বৃতি প্রায় ৬ মিমি লম্বা, রোমশ, দন্তক রেখাকার, সূক্ষ্মাগ্র, শিরাযুক্ত, নলের চেয়ে দীর্ঘতর। দলমণ্ডল সাদা, ধ্বজকীয় পাপড়ি আড়াআড়িভাবে ৮ মিমি, কর্ণসদৃশ অভিক্ষেপযুক্ত। ফল পড, প্রায় ১০ × ৫ মিমি, আয়তাকার, রসস্ফীত, সূক্ষ্ম খর্বাগ্র, ঘনভাবে রোমশ, মঞ্জুরীপত্র কর্তৃক সম্পূর্ণ লুক্কায়িত থাকে। বীজ ২টি, গাঢ় বাদামি। ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = 22 (Kumar and Subramaniam, 1986)।
আবাসস্থল: লাল অনুর্বর মৃত্তিকা। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল অক্টোবর ও ফেব্রুয়ারি মাস। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।
সিম বুসাক-এর বিস্তৃতি:
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, চীন এবং মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে ইহা ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম জেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাওয়া যায়।
জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার: ভারতে সাঁওতাল নামক আদিবাসী গোত্র কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় এর মূল ব্যবহার করে (Kirtikar et al., 1935)[১]
ভেষজ ব্যবহার:
এর শিকড় মৃগীরোগ, হিস্টিরিয়া এবং ঘুম বাড়াতে ব্যবহৃত হয়; জ্বরে শিকড় চূর্ণ দেওয়া হয়। পাতা শিশুদের জন্য একটি ভার্মিফিউজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের মারমা উপজাতিরা এই গাছটিকে মাছি তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে। ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার কারণে শরীরের ফোলা নিরাময়ের জন্য পাতার ক্বাথ ব্যবহৃত হয়; পাতা-সিদ্ধ জল দিয়ে গোসল করা অনুরূপ প্রভাব আছে। গাছটি বাতজ্বরের জন্যও ব্যবহৃত হয়।[২]
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) সিম বুসাক প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে সিম বুসাক সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এ টি এম নাদেরুজ্জামান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১০২-১০৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. Prashant Awale “Wild Hops”, flowersofindia.net, ভারত ইউআরএলঃ http://www.flowersofindia.net/catalog/slides/Wild%20Hops.html
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prashant Awale
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।