জবা বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ গুল্ম

জবা

বৈজ্ঞানিক নাম: Hibiscus rosa-sinensis L., Sp., Pl.: 694 (1753). সমনাম: জানা নেই। ইংরেজি নাম: China Rose, Shoe Flower. স্থানীয় নাম: জবা, রক্তজবা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস 
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malvales পরিবার: Malvaceae গণ: Hibiscus প্রজাতির নাম: Hibiscus rosa-sinensis.

ভূমিকা: জবা (বৈজ্ঞানিক নাম: Hibiscus rosa-sinensis) হচ্ছে ম্যালভেসিয়া পরিবারের হিবিসকাস গণের এক প্রকারের গুল্ম। এই প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মায়।

জবা- এর বর্ণনা :

জবা গুল্ম বিশেষ। এটি ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এদের কান্ড বহুল শাখান্বিত, কাষ্ঠল, মসৃণ। পাতা ২-৫ সেমি লম্বা বৃন্তযুক্ত, মসৃণ অথবা কিছু তারকাকার এবং সাধারণ রোমের মিশ্রণে রোমাবৃত, ফলক ২-১০ × ১.৫-৮.০ সেমি, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকার- ভল্লাকার অথবা উপবৃত্তাকার, কীলকাকার, দীর্ঘাগ্র, ক্রকচ থেকে দপ্তর, কিনারা কখনও অখন্ড অথবা শীর্ষের দিকে সভঙ্গ, নিম্নপ্রান্ত ৩-৫ করতল শিরিত, মসৃণ অথবা নিম্নপৃষ্ঠে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু তারকাকৃতি রোম বর্তমান, উপপত্র ৩-১০ মিমি লম্বা, রৈখিক থেকে রৈখিক-ভল্লাকার অথবা তুরপুন আকার, মসৃণ।

পুষ্প একক, কাক্ষিক, ঋজু থেকে অর্ধঝুলন্ত । পুষ্পবৃত্তিকা কমবেশী পত্রবৃন্তের সমান লম্বা, মধ্যাংশের উপরে সন্ধিত, রোমশ। উপবৃতির খন্ড ৫-৮টি, বৃতির প্রায় অর্ধেক লম্বা, ভল্লাকার, নিম্নপ্রান্ত যমক, বিক্ষিপ্ত কিছু তারকাকার রোমযুক্ত। বৃতি ঘন্টাকার, ৫-খন্ডকযুক্ত, খন্ডগুলো ১.৫-২.০ সেমি লম্বা, নিম্নাংশ মাঝখান পর্যন্ত যমক, ভল্লাকার থেকে ব-দ্বীপ সদৃশ, তীক্ষ্ণ থেকে দীর্ঘাগ্র, ক্রমশ: তারকাকার রোমশ।

দলমন্ডল আড়াআড়িভাবে ৫- ১০ সেমি, পাপড়ি ৫টি, বিডিম্বাকার, ৪-৬ × ২-৪ সেমি, নানান বর্ণের, সাধারণত লাল, গোলাপী হলুদ। পুংকেশরীয় স্তম্ভ ৫-৮ সেমি লম্বা, পাপড়ি থেকে কিছুটা লম্বা, পরাগধানীবাহক শুধুমাত্র উপরের অর্ধাংশে বিদ্যমান, পরাগধানী বৃক্কাকার। গর্ভাশয় ৫-কোষীয়, গর্ভদন্ড ১টি, দূরস্থ ৫-শাখান্বিত, গর্ভমুণ্ড চাকতিসম। বাংলাদেশে ইহার ফল ধরে না।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৬, ৪২, ৭২, ৯২ (Fedorov, 1969).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

বসতভিটার বাগান এবং নগরোদ্যানের একটি অতি পরিচিত শোভাবর্ধক উদ্ভিদ। ফুল ফোটে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস। শাখা কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয়।

আরো পড়ুন:  মালাঙ্গাকুরি বা চাপরা ঘাস বাংলাদেশের ভেষজ তৃণ

বিস্তৃতি:

জবার আদি নিবাস সম্ভবত চীন (Kirtikar et al., 1935), বর্তমানে গ্রীষ্মমন্ডল এবং অর্ধগ্রীষ্মমন্ডলের সর্বত্র শোভাবর্ধক হিসেবে লাগানো হয়। বাংলাদেশে ইহা একটি অতি প্রিয় শোভাবর্ধনকারী ঝোপ এবং দেশের সর্বত্র ফুলের বাগানে ইহা লাগানো হয়।

জবা- এর উপকারীতা :

উপপ্রজাতি rosa-sinensis এর বাকল থেকে এক প্রকার উত্তম তন্ত্র পাওয়া যায় (Khan and Mia, 1989), ইহার পাতা এবং পুষ্প উপশমকারী, পাপড়ির ক্বাথ জ্বরে আরামদায়ক এবং শীতলকারক পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Kirtikar et al., 1935).

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার :

বর্ণিত আছে ইহার পুষ্প গর্ভনিরোধক গুণাবলী সম্পন্ন (Paul and Nayar, 1988). চীনারা ইহার পাপড়ি থেকে চুল এবং চোখের ভ্রূ এর রং তৈরি করে। শিশুরা ইহার পুষ্প থেকে একটি লাল রং তৈরি করে যা কাগজকে রঙিন করতে ব্যবহৃত হয়। জুতা কালো করতে ইহার পাপড়ি ব্যবহৃত হয় আর এই জন্যই উদ্ভিদটির ইংরেজী নাম সু ফ্লাওয়ার।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ০৯ ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০ জবা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের এটি ঝুঁকি মুক্ত। বাংলাদেশে জবা সংরক্ষণের কোন প্রয়োজন নেই। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বিভিন্ন আকারের পাতা ও বিভিন্ন বর্ণের ফুল বিশিষ্ট আবাদী জাতকে স্ব-স্থানের বাইরে সংরক্ষণ করতে হবে।  

তথ্যসূত্র ও টিকা:

১. এম মতিয়ূর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ০৯ম, পৃষ্ঠা ২৫৩-২৫৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

টীকা: বাংলাদেশে এই প্রজাতির দুইটি উপপ্রজাতি বিদ্যমান যেমন উপপ্রজাতি rosa-sinensis এবং উপপ্রজাতি liloflorus (Griff. ex Mast.) Hochr., যারা পত্রকিনারার বৈশিষ্টে পার্থক্যমন্ডিত। বর্তমানে সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভূত অনেক আবাদী জাতের চাষ হচ্ছে যেগুলিতে নানা বর্ণে রঞ্জিত বিভিন্ন আকারের পাতা এবং নানা বর্ণের ফুল ফোটে।

আরো পড়ুন:  মুথা ঘাস বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro

Leave a Comment

error: Content is protected !!