মাধবীলতা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জন্মানো শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ উদ্ভিদ

ভূমিকা:  মাধবীলতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Hiptage benghalensis ইংরেজি: Hiptage) এটি ম্যালপিঘিয়েসি পরিবারের হিপটাগে গণের আরোহী গুল্ম। বাড়িতে বা বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।

বৈজ্ঞানিক নাম: Hiptage benghalensis (L.) Kurz, J. Asiat. Soc. Bengal 43 (2): 136 (1874). সমনাম: Banisteria benghalensis L. (1753), Hiptage madablota Gaertn. (1791), Hiptage parviflora Wight & Arn. (1874). ইংরেজি নাম: Hiptage. স্থানীয় নাম: মাধবীলতা, মাধুর্বলতা, বাসন্তী। জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাসজগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. বর্গ: Malpighiales. পরিবার: Malpighiaceae. গণ: Hiptage.প্রজাতি:Hiptage benghalensis.

বর্ণনা:

বৃহদাকার, চিরহরিৎ, কাষ্ঠল ও আরোহী গুল্ম, কচি অংশ ঘন কোমল রোমাবৃত। পাতা প্রতিমুখ, ডিম্বাকার, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত বা উপবৃত্তাকার, ৮-১৫ x ৩-৬ সেমি, উপচর্মবৎ পাদদেশ কীলকাকার, শীর্ষ তীক্ষ্ণ বা দীর্ঘাগ্র, পত্রবৃন্ত ৫-১০ মিমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস একটি অনির্দিষ্ট পুষ্পবিন্যাস, ঋজু, ঘন কোমল রোমাবৃত, পুষ্পবৃন্ত ১.৫ ও ২.০ সেমি লম্বা, শীর্ষ দিকে মোটা। পুষ্প উভলিঙ্গ, সুগন্ধি, ১.৫-২.৫ সেমি চওড়া। বৃত্যংশ ৫টি, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত, রেশমী রোমশ। পাপড়ি ৫টি, উপবর্তুলাকার থেকে বিডিম্বাকার, বৃন্তযুক্ত, বাইরের দিক রোমাবৃত, সাদা, সুগন্ধি।

পুংকেশর ১০টি, দীর্ঘতম পুংদন্ড প্রায় ১২ মিমি লম্বা এবং ক্ষুদ্রতম পুংদন্ড প্রায় ৬ মিমি লম্বা, পরাগধানী নিরেট ডিম্বাকার, প্রায় ২ মিমি লম্বা। গর্ভাশয় ৩-খন্ডীয়, রোমশ, গর্ভদন্ড বেলনাকার এবং ক্রমসরু, তীক্ষ্ণ, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার। ফল ৩টি পাখনাযুক্ত অ্যাকিন, আকার এবং আকৃতিতে পরিবর্তনশীল। বীজ অনেকটা গোলাকার।

ক্রোমোসোম সংখ্যা :

2n = ৪২, ৫৬, ৫৮, ৬০ (Kumar and Subramaniam, 1986).

মাধবীলতা গাছের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

মাধবীলতার বংশ বিস্তার হয় বীজের মাধ্যমে বা শাখা কলমের সাহায্যেও। ফুল ও ফল  মার্চ-মে।

মাধবীলতা গাছের বিস্তৃতি:

ভারত, মায়ানমার, চীন, তাইওয়ান ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং শ্রীলংকাসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ইহা শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে সর্বত্র পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

ইহার পাতায় ট্যানিন ও স্যাপোনিন বিদ্যমান। ইহার কান্ড ও কান্ডের বাকলে ফ্রিডেলিন এপি ফ্রিডেলিনোল, অক্টাকোসানোল, আলফা-অ্যামাইরিন, বিটা-সিটোস্টেরোল এবং ইহাদের গ্লুকোসাইড ও উপক্ষারের অবশেষ বর্তমান। মূলের বাকলে ম্যানগিফেরিন বিদ্যমান। ইহার বায়ব অংশের ইথানলিক নির্যাসে সিএনএস (CNS) বর্তমান এবং হাইপোটেনসিভ গুনাবলী সম্পন্ন। পাতার নির্যাস পুরনো বাতরোগ, অ্যাজমা পাঁচড়া এবং অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহৃত হয়। (Ghani, 2003).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  মাধবীলতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মাধবীলতা  সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম আহসান হাবীব (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj

আরো পড়ুন:  সাদা রঙ্গন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার আলংকারিক গুল্ম

Leave a Comment

error: Content is protected !!