ভূমিকা: মেহেদী হচ্ছে লেথারসিস পরিবারে লাউসনি গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই প্রজাতি বৃক্ষ ও গুল্ম উভয়ই হয়। বাগানের বা বাড়িতে লাগানো হয়ে মূলত রঞ্জন কাজের জন্য। এছাড়া এর নানা ঔষধি গুণ আছে।
বর্ণনা: মেহেদি পত্র আচ্ছাদিত গুল্ম, মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র বৃক্ষে পরিণত হয়। বাকল স্পষ্টভাবে মসৃণ, তামাটে-বাদামী, পার্শ্বীয় শাখা ৪-কোণাকার, প্রায়শই কণ্টকিত তীক্ষ প্রান্তে শেষ হয়। পত্র প্রতিমুখ, ১.০-৪.৪. x ০.৫-১.৮ সেমি, উপবৃত্তাকার, ডিম্বাকার বা বিডিম্বাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মা বা স্থূলা, গোড়া ক্রমশ সরু, মসৃণ, পত্রবৃন্ত অতি খাটো।
পুষ্পমঞ্জরী শীর্ষীয়। প্যানিকেল, ২৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা। পুষ্প সুগন্ধিময়, সবৃন্তক, পুষ্পবৃন্তিকা ২.০-৩.৫ মিমি লম্বা, সরু। বৃতি নল ঘন্টাকার, ৩-৫ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৪টি, ছড়ানো, ২.৫-৩.০ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র। পাপড়ি ৪টি, সাধারণত সবুজাভ হলুদ বা সাদা, ৩-৪ মিমি লম্বা, চওড়া দৈর্ঘ্যের সমান, উপবর্তুলাকার বা উপবৃক্কাকার, ভেতরের দিকে বক্র, অধিক প্যাচানো কিনারা যুক্ত ।
পুংকেশর ৮টি, পাপড়ি অপেক্ষা অধিকতর লম্বা, পুংদণ্ড হাইপ্যানথিয়ামের শীর্ষে সন্নিবেশিত, পরাগধানী আয়তাকার। গর্ভাশয় ৪-কোষ বিশিষ্ট, ডিম্বক প্রতি কোষে অনেক, অমরাবিন্যাস অক্ষীয়, গর্ভদণ্ড পুরু, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার।
ফল ক্যাপসিউল, ৪-৮ মিমি চওড়া, প্রথমে সবুজ ও উজ্জ্বল, তবে দ্রুত লালচে বর্ণে পরিণত হয়, পরিশেষে শক্ত, শুষ্ক ও বাদামি অসমভাবে বিদারী, চাপা গোলকাকার, বাইরে সামান্য শিরাযুক্ত, স্থায়ী বৃতি দ্বারা। সমর্থিত ও গর্ভদণ্ড সূচাগ্র। বীজ কৌণিক, প্রায় ২.৫ মিমি লম্বা, মসৃণ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৪ (Kumar and Subramaniam, 1986)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: উঁচু ভূমিতে মেহেদি গাছ লাগানো হয়। গোঁড়ায় পানি জমে গেলে দ্রুত পচে যায়। কান্ডের কলম ও বীজ দ্বারা নতুন চারা জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ মেহেদি গাছে ফুল ফোটে জুন থেকে ডিসেম্বর মাসে।
বিস্তৃতি: ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফ্রিকা, আরব এবং মিশর। বাংলাদেশে ইহা সর্বত্র পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে বা বেড়ার কাজে মেহেদী ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হয় এর ফুলের সুগন্ধির জন্য ইহা বেশ সমাদৃত। আঙ্গুলের নখ, হাতের তালু, পায়ের পাতা ও চুল রং করার জন্যে এর পাতা ব্যবহৃত হয়। ইহা রেশম, পশম ও তুলা রঞ্জিত করার জন্যেও ব্যবহার করা হয়।
মেহেদির ফুল থেকে সুগন্ধি তৈরী হয়। ঔষধ হিসেবে এর বাকল জন্ডিস এবং প্লীহার বৃদ্ধির চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়। মাথা ব্যথা উপশমে পাতা বহিঃস্থভাবে প্রয়োগ করা হয়। শরীরকে শীতল রাখার জন্য এর তৈল ও নির্যাস শরীরে মেখে দেয়া হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: মেহেদী বিভিন্ন উৎসবে বিশেষত মুসলমানদের বিয়েতে ব্যবহার করা হয়। কিছু মুসলিম দেশে বিশেষত ইরান ও আফগানিস্তানে পুরুষগণ তাদের দাড়ি রং করার জন্য ইহা ব্যবহার করেন। মরক্কোতে চামড়া রঞ্জিত করার জন্যে মেহেদী ব্যবহার করা হয়। ভারতের কংকান এলাকাতে পাতার রস পানি ও চিনির সাথে মিশ্রিত করে অতিরিক্ত ধাতু নির্গমনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কম্বোডিয়াতে এর মূল গনোরিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়। গুইনিয়াতে বাকলের কৃাথ ঋতুস্রাব উন্নতকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মেহেদি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মেহেদি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪২২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।