যূথিকাপর্ণী গুল্ম এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

৪ । ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণতঃ বেড়ার জন্য লাগানো হয়, কোথাও কোথাও ফুলের জন্যেও। কাণ্ড বেশ শক্ত। গাছটি বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। কাণ্ড থেকে উভয় দিকে পত্র বেরোয়। পাতার গোড়া থেকেই নতুন ডাল/শাখা গজায়। পাতা আয়তাকার, অগ্রভাগ ও বোঁটার দিকটা ক্রমশঃ সরু, ৩। ৪ ইঞ্চি লম্বা, কিনারা অসমান ঢেউ খেলানো। বোঁটা খুবই ছোট। পাতার গোড়া থেকেই পুষ্পদণ্ড বেরোয়। ফুল গুচ্ছবদ্ধ, ছোট ছোট, সাদা রঙের। ফল ক্যাপসুলের আকৃতি বিশিষ্ট, তাতে ৪টি বীজ থাকে। বীজ কালো রঙের, মসৃণ। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফুল ও ফলের সময়। পাতা মোচড়ালে একটা দুর্গন্ধ বেরোয়।

বৈজ্ঞানিক পরিচয়

Acanthaceae পরিবারের অন্তর্গত Rhinacanthus গণের মাত্র ৪টি প্রজাতি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে জন্মে। এই চারটির মধ্যে দু’টি ভারতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হলো যূথিকাপর্ণী অর্থাৎRhinacanthus nasutus Kurz, পূর্বে এটির নাম ছিল R. communis Nees; অপর প্রজাতিটির নাম R. calcaratus Nees, এটি দেখতে অনেকটা যূথিকাপর্ণীর মত, ফুল সাদা, আসাম ও বাংলার জঙ্গলে জন্মে।

যূথিকাপর্ণী-এর গুণপনা

এই ভেষজ প্রজাতিটি পাতা, মূল, বীজ প্রভৃতিকে নানা জায়গার লোকে যেসব রোগে ব্যবহার করে থাকেন। অনেকের মতে অব্যবহার্য একটি গাছ।

ইউনানী মতে এটি উষ্ণ ও অম্লরসযুক্ত। পাতার রস দেহের বিকৃত কালো দাগ এবং ছুলিতে লাগালে সেরে যায়। দক্ষিণ কোঙ্কণে দাদের পক্ষে এটি এক বিশিষ্ট ভেষজ। টাটকা মূল ও পাতা বেটে চূণের জল ও মরিচের সঙ্গে মিশিয়ে দাদ, চুলকানি, হাজা, একজিমা প্রভৃতিতে লাগালে উপকার হয়। থাইল্যাণ্ডে ক্যানসার রোগে এই পাতা ব্যবহৃত হয় সিন্ধু অঞ্চলে গাছের মূল অসাধারণ কামোত্তেজক ঔষধ হিসেবে পরিচিত। মূল দুধে সিদ্ধ করে সেই দুধ খেলে যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ইন্দোনেশিয়াতে পাতা ঘামাচিতে ব্যবহার করে। মূল সর্পবিষয় হিসেবে দঃ ভারতে প্রচলিত। মাদাগাস্কারে পাতার রস ও মূলের ছাল দাদ, একজিমা, বিসর্প প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বীজ বড় ক্রিমিনাশক। পাতা কটু স্বাদযুক্ত।

আরো পড়ুন:  কান্‌কানটী বা ডেংগা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ

আধুনিক ভৈষজ্য বিজ্ঞানীগণের মতে এর মূলে রিনাক্যানথিন নামক এক প্রকারের উপক্ষার আছে, তা অনেকটা Chrysophanic ও frangulic acid-এর ন্যায়, জীবাণু ও ব্যথানাশক গুণ-সম্পন্ন। উদ্ভিদটিতে প্রচুর পটাসিয়াম লবণ পাওয়া যায়।

এই গণের আর একটি প্রজাতি ভারতের আসাম ও বাংলার জঙ্গলে পাওয়া যায়, সেটির কোন ভারতীয় নাম নজরে পড়ে না। সেটিকে পলকই ভেদ বলা যেতে পারে। তার নাম R calcaratus পাতা খাওয়া যায়, ক্রিমিনাশক গুণ-সম্পন্ন। মূলের রস কামোদ্দীপক। মূল লেবুর রস ও মরিচচূর্ণ সহকারে লাগালে হার্পিশ আরোগ্য হয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৬২-২৬৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: LiChieh Pan

Leave a Comment

error: Content is protected !!