ভেন্না বা ভেরেন্ডা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ভেষজ উদ্ভিদ

ভেষজ উদ্ভিদ

ভেন্না বা ভেরেন্ডা

বৈজ্ঞানিক নাম: Ricinus communis L., Sp. Pl.: 1007 (1753). ইংরেজি নাম: Castor, Castor Bean, Castor-oil Plant. স্থানীয় নাম: ভেরেন্ডা, গাব ভেরেন্ডা, রেড়ি, ভেনা।

ভূমিকা: ভেন্না বা ভেরেন্ডা (বৈজ্ঞানিক নাম: Ricinus communis, ইংরেজি নাম: Castor, Castor Bean, Castor-oil) হচ্ছে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ভেষজ উদ্ভিদ।

ভেন্না বা ভেরেন্ডা-এর বর্ণনা:

ঋজু কান্ড, অশাখ বা প্রচুর শাখান্বিত, গুল্মবৎ বা বৃক্ষ সদৃশ, প্রায় ৪ মিটার উঁচু। কান্ড ফাঁপা, মূলীয় অংশ কাষ্ঠল, তরুণ বিটপ মোমসদৃশ পাউডার দ্বারা আবৃত। পত্র সোপপত্রিক, উপপত্র ডিম্বাকার, ১.৫ সেমি লম্বা, ঝরে পড়া উপপত্র কান্ডের গায়ে গোলাকার দাগ রেখে যায়, বৃন্ত ৫-২০ সেমি লম্বা, ৭-৯ খন্ডিত, মধ্যম খন্ড ১০-২০ x ২.৬ সেমি, পার্শ্বীয় খন্ড ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্রতর, পত্র ফলক ভল্লাকার, দীর্ঘাত্র থেকে সূক্ষ্মা, গ্রন্থিল দন্তযুক্ত, পার্শ্বীয় শিরা ১০-২০ জোড়া, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ ফ্যাকাশে। পুষ্প বিন্যাস ১২-১৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ১ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্রিকা ক্ষুদ্রতর।

পুংপুষ্প: বৃন্ত ১ সেমি লম্বা, বৃতি খন্ড উপবৃত্তাকার ডিম্বাকার, ৫-৮ X ৩-৪ মিমি, সূক্ষ্মাগ্র, হলদে সবুজ, পুংকেশর ৬ মিমি লম্বা, পরাগধানী ০.৫ মিমি লম্বা, ফ্যাকাশে হলুদ। স্ত্রী পুষ্প: বৃন্ত ৩-৪ মিমি লম্বা, ফলে ২০ মিমি পর্যন্ত বর্ধিত, বৃতিখন্ড ৪-৫ মিমি লম্বা, দীর্ঘগ্র, বেগুনি লাল, গর্ভাশয় ৩-কোষী, প্রতিকোষে ডিম্বক ১টি, অর্ধগোলাকার, গভদন্ড ৩-৬ মিমি লম্বা। ফল ১.০-১.৮ x ০.৮-১.৪ সেমি, মসৃণ বা শক্ত রোমশ। বীজ ৬-১০ x ৩-৫ মিমি, উজ্জ্বল, ধূসর বা রৌপ্যসদৃশ, সাধারণত দাগ বা রেখা যুক্ত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২০ (Bir and Sidhu, 1980).

আরো পড়ুন: ভেন্না বা রেড়ি গাছ, বীজ, মূল ও তেলের ৩২টি ঘরোয়া ঔষধি চিকিৎসা

ভেন্না বা ভেরেন্ডা-এর চাষাবাদ:

পতিত জমি, গ্রামের খানা খোন্দ, গুল্ম ভূমি, নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ মাটিতে ভাল জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ প্রায় সারা বর্ষব্যাপী তবে শীতকালে বেশি জন্মে। বংশ বিস্তার হয় বীজে দ্বারা।

আরো পড়ুন:  জামাল গোটা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের গুল্ম

বিস্তৃতি: উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সর্বত্র চাষাবাদ চলে। আদিনিবাস উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা (Airy-Shaw, 1972)। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

পাতা মাথা ব্যথা উপশমকারী, পুলটিসরূপে ফোড়ায় সেক দেয়া হয়। বীজ গ্রন্থি বাত ও কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী। বীজে রিসিন নামে বিষাক্ত পদার্থ বিদ্যমান, বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেল রেচক। মুলের কাথ দ্বারা পেশির স্ফীতি, বাত, হাপানি এবং শ্বাসনালির প্রদাহের চিকিৎসা করা হয় (Caius, 1998)।

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:

ভারতের মুন্ডা আদিবাসী সম্প্রদায় বাকল চূর্ণ পোড়া ঘায়ে এবং বাকলের আঁশ বমি রোধে ঘাড়ে বাঁধে। পাতার ক্বাথ ডিমের সাথে মিশ্রিত করে লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় শিশুদের রাতকানা রোগের চিকিৎসা করে। নাইজেরিয়ার অধিবাসীরা ক্যান্সারে রোগে পোড়া কান্ড ব্যবহার করে। কুয়েতে বীজ দ্বারা সিফিলিস রোগের চিকিৎসা করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকায় সিদ্ধ পাতা দ্বারা জ্বর নিরময় করে। সোমালিয়ায় বাত উপশমের জন্য মূল ব্যবহার করে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ভেন্না বা ভেরেন্ডা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ভেন্না বা ভেরেন্ডা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৪৮৪-৪৮৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Onjacktallcuca

Leave a Comment

error: Content is protected !!