ভূমিকা: বাঁধা গোলাপ(বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa centifolia, ইংরেজি: Cabbage Rose, Moss or Provence Rose) হচ্ছে রোজেসি পরিবারের রোজ গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। এই গুল্মটি বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করে।
বৈজ্ঞানিক নাম: Rosa centifolia L., Sp. Pl.: 491 (1753). সমনাম: জানা নেই। ইংরেজি নাম : Cabbage Rose, Moss or Provence Rose. স্থানীয় নাম: বাঁধা গোলাপ। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Edicots; বর্গ: Rosales ; পরিবার: Rosaceae; গণ: Rosa; প্রজাতি: Rosa centifolia
বর্ণনা:
এই গোলাপ দেখতে ছোট, খাড়া ও কাঁটা জাতীয় গুল্ম। শাখা প্রশাখা কোনো রোমশ নেই। এর গায়ে কাঁটা অসমান ও বড় হয়ে বড়শি আকৃতির ধারণ করে, অসংখ্য গ্রন্থিল রোমমিশ্রিত। পাতা গ্রন্থিল সিলিয়াযুক্ত। বাঁধা গোলাপের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ও দেখতে ছোট থেকে মধ্যম-আকৃতির ডিম্বাকার। ফুল বৃন্তক ও সুগন্ধযুক্ত। ফুল যখন ফুটে তখন এককভাবে বা ৩টি গুচ্ছাকারে থাকে ও এরা মঞ্জরীপত্র বিহীন। বৃতি গ্রন্থিল-সিলিয়াযুক্ত। ফুলের রং গোলাপী থেকে রক্ত-বেগুনি রঙের। বাঁধা গোলাপের ফল লোমহীন।[১]
বাঁধা গোলাপের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী শীতকাল থেকেই ফুল ধরা শুরু করে তবে বাঁধা গোলাপ গ্রীষ্মকাল মাঝামাঝি হয়ে থাকে। বাড়ির বা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বর্ধনে জন্য লাগানো হয়। এই উদ্ভিদ আংশিকভাবে আবাদী এবং ঝোপঝাড়ের আকারে হয় বলে বেড়ার জন্য উপযুক্ত।
বীজ বা শাখাকলম করে এর বংশ বিস্তার করা হয়। যেকোনো সময়ে চারার জন্য কলম করা যায় তবে অক্টোবর থেকে নভেন্বর মাস একাজের জন্য উপযোগী। কলম করার জন্য পরিপক্ক ডাল থেকে ২০-২৫ সেমি লম্বা ও পেন্সিলের মতো মোটা কান্ড নেওয়া উচিত।[২]
ক্রোমোসোম সংখ্যা:
2n = ২৮, ৪২.[৩]
বিস্তৃতি:
বাগানের জন্য উপযুক্ত বাঁধা গোলাপ (Matthew, 1999), বাংলাদেশে বাগানে খুব সাধারণ ও জনপ্রিয় (Dey, 2006). এশিয়া, ইউরোপসহ সারা পৃথিবীর অনেক দেশে এই সুগন্ধি প্রজাতিটি পাওয়া যায়।
বাঁধা গোলাপের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
এই উদ্ভিদ সাধারণত উন্নত শ্রেণীর গোলাপ এর জন্য জোড় কলমে ষ্টক হিসেবে ব্যবহৃত (Kanjilal et al., 1938). অনুষ্ঠানে ডেকোরেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাঁধা গোলাপ সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বাঁধা গোলাপ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বাঁধা গোলাপ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে এর সৌন্দর্যের কারণে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিঞা(আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ফুলের চাষ প্রথম সংস্করণ ২০০৩ ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা ১১৫। আইএসবিএন 984-483-108-3
৩. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।