ভূমিকা: নাগ টগর, জংলী টগর (বৈজ্ঞানিক নাম: Tabernaemontana alternifolia) হচ্ছে Apocynaceae পরিবারের Tabernaemontana গণের গুল্ম। এটি মূলত বন জঙ্গলে জন্মে থাকে অনেকে গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।
বর্ণনা: এই গুল্ম অনূর্ধ্ব ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। শাখাসমূহ ফ্যাকাশে বাদামি বর্ণের, প্রশাখার ত্বক মসৃণ হয়। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ২ থেকে ২০ মিমি লম্বা, পত্রফলকের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ২৪ ও প্রস্থ ১ থেকে ৯ সেমি, উপবৃত্তাকার বা সংকীর্ণভাবে উপবৃত্তাকার, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র, নিম্নাংশ । কীলকাকার, অখন্ড, মসৃণ।
পুষ্পবিন্যাস পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট সাইম, ২ থেকে ১৫ পুষ্পবিশিষ্ট, শিথিল, পুষ্পদন্ড ০.৫ থেকে ০.৭ সেমি লম্বা ও সরু। পুষ্প মঞ্জরীপত্রিকাযুক্ত, মঞ্জরীপত্র পর্ণমোচী, সবৃন্তক, পুষ্পবৃন্তিকা ৪ থেকে ১৫ মিমি লম্বা, সরু, সুগন্ধী, রাত্রে প্রস্ফুটিত হয়। বৃত্যংশ ৫টি, অসমান, ২ থেকে ১১ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার, আয়তাকার বা সংকীর্ণভাবে আয়তাকার, একটি স্পষ্ট মধ্যশিরা নিয়ে ক্রমান্বয়ে নিম্নাংশের দিকে সরু হয় বা হৃৎপিন্ডাকার ও আকস্মিকভাবে নিম্নাংশের দিকে সরু হয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থূলাগ্র, বহির্দেশ মসৃণ, সিলিয়াযুক্ত নয়। দলমণ্ডল পূর্ণতাপ্রাপ্ত অবস্থায় ১৪ থেকে ২৬ মিমি লম্বা ও তুলনামূলকভাবে একটি প্রশস্ত স্পষ্টতঃ ডিম্বাকার মুণ্ড তৈরী করে, সাদা খন্ডসমূহ বিষমাকারে উপবৃত্তাকার।
পুংকেশর শীর্ষ দলমণ্ডল নলের ১ থেকে ৫ মিমি নিচে সন্নিবেশিত, পুংদন্ড খাটো, সূত্রাকার, মসৃণ, পরাগধানী সংকীর্ণভাবে আয়তাকার, শীর্ষ তীক্ষ্মাগ্র বা সূক্ষ্মাগ্র। গর্ভকেশর ৭-১৫ মিমি লম্বা, মসৃণ, গর্ভাশয় ডিম্বাকার বা উপ-গোলীয়, গর্ভদণ্ড সূত্রাকার, ৫ থেকে ১৩ মিমি লম্বা।
ফল স্বতন্ত্র ফলাংশক বিশিষ্ট, কমলা বা লাল, শীর্ষ দীর্ঘা, বহু সংখ্যক বীজ বিশিষ্ট, বিদারী। বীজ গাঢ় বাদামি, বিষমাকারে উপবৃত্তীয়, আনুভূমিক খাঁজবিহীন, পিড়কাকৃতি।
ফুল ও ফল ধারণ: জংলী টগর এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসে ফুল ফোটে এবং বীজ হয়। ক্রোমোসোম সংখ্যা: জানা নেই।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বনাঞ্চল এই উদ্ভিদ জন্মে থাকে। বীজ দ্বারা এর বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি: ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, থাইল্যাণ্ড এবং ভিয়েতনাম। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইহা পাওয়া যায় (Khanam et al., 2003)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) জংলী টগর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থল বিনাশের কারণে সংকট দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটি প্রায় সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে জংলী টগর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ইন-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণের প্রয়োজন।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম ওলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২১০-২১১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।