ভূমিকা: রসিয়া টগর বা ফ্লাওয়ার অফ লাভ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tabernaemontana corymbosa) হচ্ছে Apocynaceae পরিবারের Tabernaemontana গণের গুল্ম। এটি মূলত বন জঙ্গলে জন্মে থাকে অনেকে গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।
বর্ণনা: এটি দেখতে ছোট গুল্ম আকারে; অনূর্ধ্ব ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, শাখা ফ্যাকাশে থেকে গাঢ় বাদামি, ক্ষুদ্র শাখা প্রস্থচ্ছেদে গোলাকার, মসৃণ, কখনও কখনও রোমশ।
পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ৩ থেকে ২২ মিমি লম্বা, পত্রফলক উপবৃত্তাকার, সংকীর্ণভাবে উপবৃত্তাকার বা কখনও কখনও বিডিম্বাকার, পাতার দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ৩০ ও প্রস্থ ২ থেকে ১৪ সেমি, শীর্ষ দীর্ঘা, নিম্নাংশ কীলকাকার, অখন্ড, উভয় পৃষ্ঠ মসৃণ বা কখনও কখনও অঙ্কীয় পৃষ্ঠ রোমশ, কখনও কখনও অঙ্কীয় পৃষ্ঠে বিক্ষিপ্ত কালো বিন্দু উপস্থিত বা অনুপস্থিত।
পুষ্পবিন্যাস পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, ২ থেকে ২৫টি পুষ্পবিশিষ্ট, শিথিল বা প্রায় তদরূপ, পুষ্পমঞ্জরী ২ থেকে ৬ সেমি লম্বা, মসৃণ বা কখনও কখনও রোমশ, মঞ্জরীপত্রিকা শুষ্ক সদৃশ, প্রায়শঃ অনুপস্থিত। পুষ্প সাদা।
বৃত্যংশ সবুজ, নিম্নাংশে যমক, ডিম্বাকার বা প্রায় তদরুপ, ২-৫ x ১-৩ মিমি, স্থূলাগ্র, মসৃণ বা কদাচ বাইরে রোমশ, সিলিয়াযুক্ত, অভ্যন্তরে মসৃণ। দলমণ্ডল পূর্ণতাপ্রাপ্ত মুকুলে ১৭-৩২ মিমি লম্বা, স্পষ্টতঃ একটি ডিম্বাকার বা উপ-গোলীয় মুণ্ড তৈরী করে, নল ১৫৩০ মিমি লম্বা, বেলনাকার, মূলীয় অংশে ১-৪ মিমি প্রশস্ত, খন্ড বিষমাকারে উপবৃত্তাকার, কমবেশী কাস্তে-আকৃতির, ৯১৫ X ৪-৭ মিমি, গোলাকার।
শীর্ষ বিশিষ্ট পুংকেশর দলনলের মুখের ১-৪ মিমি নিচে, দলনলের ০.৬-০.৮ মিমি দৈর্ঘ্যে প্রবেশকৃত। পুংদন্ড খর্ব, ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, সূত্রাকার, মসৃণ বা মাঝে মাঝে দীর্ঘ রোমাবৃত, পরাগধানী। সংকীর্ণভাবে আয়তাকার, ২-৫ x ০.৫-১.৫ মিমি। গর্ভকেশর গোল, গর্ভাশয় ডিম্বাকার বা উপ-গোলীয়, গর্ভদণ্ড সূত্রাকার, ১০-১৬ মিমি লম্বা।
দুইটি স্বতন্ত্র ফলাংশক বিশিষ্ট ফল, লাল বা হলুদ, বিষমাকারে উপবৃত্তাকার, শীর্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশ্চাদমুখী বক্র, দীর্ঘা, তীক্ষ্মাগ্র বা গোলাকার। বীজ ফ্যাকাশে বা গাঢ় বাদামি, বিষমাকারে উপবৃত্তাকার।
ফুল ও ফল ধারণ: এই গাছে ফুল ধরে এপ্রিল থেকে জানুয়ারি মাসে। প্রায় সারা বছর এই গাছে ফুল দেখা যায়।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বন এবং রাস্তার পার্শ্ব ও জঙ্গল এবং মাঝে মধ্যে সমতল ভূমিতে পাওয়া যায়। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি: চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যাণ্ড এবং ভিয়েতনামে উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের মধ্যে ইহা নতুনভাবে ফরিদপুর জেলায় পাওয়া যাচ্ছে বলে নথিভূক্ত করা হয়েছে (Khanam et al., 2004)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) জংলী টগর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থল বিনাশের কারণে সংকট দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটি প্রায় সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে রসিয়া টগর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ইন-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণের প্রয়োজন।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম ওলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২১০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।