ভূমিকা: গাঁদা একটি শীতকালীন মৌসুমি ফুল। গাছ থেকে উঠানোর পরেও এই ফুল দীর্ঘ সময় ধরে সজীব থাকে। তাই ব্যবসায়ীভাবে গাঁদার অনেক চাহিদা। এ ফুলের অনেক ভেষজ গুণাবলী রয়েছে। শরীরের কাটা ছিড়ায় পাতার রস রক্ত বন্ধ করে এবং ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। গাঁদার আদি নিবাস হলো মেক্সিকোতে। ইউরোপ হয়ে এটি আমাদের দেশে এসেছে।
বাংলাদেশে দুই ধরনের গাঁদা বেশ জনপ্রিয়। তাদের মধ্যে একটি আফ্রিকান গাঁদা (বৈজ্ঞানিক নাম: Tagetes erecta, ইংরেজি:African Marigold), অন্যটি ফ্রান্স বা ফরাসি গাঁদা (বৈজ্ঞানিক নাম: Tagetes patula, ইংরেজি:French Marigold)। এই দুই ধরনের গাঁদা এস্তারেসি পরিবারের টাগেটেস গণের গুল্ম। এটি অনেকে প্রতিষ্ঠানে বা গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।
ফরাসি গাঁদা উদ্ভিদের বর্ণনা:
ফরাসি গাঁদা ফুল ঋজু, সভঙ্গ, রোমশ ও একবর্ষজীবী বীরুৎ প্রজাতি। এই উদ্ভিদটি ৮০ সেমি বা ততোধিক উঁচু হতে পারে। পাতা পক্ষবৎ অতিখন্ডিত, পত্রক বল্লমাকার, সূক্ষ্মাগ্র, সূক্ষ্ম দস্তুর। পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, অসম জননকোষী, দীর্ঘ পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, দৈর্ঘ্য ১৮ ও প্রস্থ ১০ মিমি, একল, রে-বিশিষ্ট, একক বা দ্বিতীয়, মঞ্জরী পত্রাবরণ বেলনাকার। মঞ্জরীপত্র এককস্তরে বিন্যস্ত, নিচের অংশ যমক হয়ে একটি নল সৃষ্টি করে ও মসৃণ।
ফরাসি গাঁদার পুষ্পধার উত্তল, উন্মুক্ত, কূপযুক্ত। প্রান্ত পুষ্পিকা জিহ্বা-আকৃতি, ১ থেকে বহু-স্তরে বিন্যস্ত, স্ত্রী। মধ্য পুস্পিকা বহু-স্তরে বিন্যস্ত, উভলিঙ্গ। প্রান্ত পুষ্পিকার পাপড়িগুলো হলুদ বা মরিচার মতো লাল। ২ থেকে ৩ ভাগে ভাগ করা থাকে দলফলক। তবে মধ্য পুষ্পিকার দলমণ্ডল নলাকার, সমাঙ্গ, ৫-খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট হলুদ, অভ্যন্তর রোমশ। পরাগধানী উপাঙ্গযুক্ত, নিম্নাংশ বাণাকার, দীর্ঘ পুংদন্ডবিশিষ্ট। প্রান্ত পুষ্পিকার গর্ভদন্ডীয় বাহু দীর্ঘায়িত, সূচের মতো, মধ্য পুষ্পিকার গর্ভদন্ডীয় বাহু আয়তাকার, সূক্ষ্ম তুলিতুল্য।
ফরাসি গাঁদার ফল সিপসেলা, সংনমিত। ফলের আকার দৈর্ঘ্যে ৮ মিমি ও প্রস্থে ১.৫ মিমি। ফল দেখতে রৈখিক, মূলীয় ক্যালাস বিশিষ্ট, নিম্নাংশ সরু, পরিপক্ক অবস্থায় কাল। কিছুটা ঈষৎ রোমশ আছে, বৃতিরোম ৪-৫টি, শূকযুক্ত শুষ্ক বিশিষ্ট, কুচবৎ, ৩টি শূক সদৃশ।
ফরাসি গাঁদা উদ্ভিদের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
পুরো শীতকাল জুড়ে ফুল ফোটে। বাগান এবং নার্সারীর জন্য এই ফুল চাষ করা হয়। বাগানের জন্য এই গাছ বেশি লাগানো হয়। নরম মাটিতে ও সামান্য যত্ন নিলে গাছ ও ফুল দুটোই ভালো হয়। বীজ এবং কাণ্ড কাটিং দ্বারা নতুন চারা জন্মে। বীজ বা শাখা কলম থেকে নতুন চারা করতে হলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মধ্যে চারা করে নিতে হবে।
সব ধরণের জমিতে গাঁদা চাষ করা সম্ভব। তবে পানি নিষ্কাশন সুবিধা দো-আঁশ মাটি গাঁদা ফুল চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। সূর্যালোকযুক্ত জমিতে গাছের বৃদ্ধি ও ফুল উভয়ই ভালো হয়। জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। জমির রস বুঝে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। এতে ফুলের রং ও উজ্জ্বলতা উভয় বৃদ্ধি পাবে। জানুয়ারি মাস থেকে গাঁদা গাছে ফুল ফোটা শুরু করে।[২]
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৪৮ (Fedorov, 1969)।
বিস্তৃতি: মেক্সিকোতে স্থানীয়ভাবে জন্মে। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি সর্বত্র আবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক:
ফরাসি গাঁদা প্রজাতিটির ফুলে হলুদ রঙের কুয়ারসেটাগেটিন এবং বীজে তেল থাকে। পাতার রস রক্তপাত বন্ধ করে, যদি তা কাটা ও ঘায়ে প্রয়োগ করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: স্থানীয়ভাবে কাটা ও ঘায়ে ব্যবহৃত হয়।
ফরাসি গাঁদা উদ্ভিদের অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ফ্রান্স গাঁদা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ফ্রান্স গাঁদা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন এক্স-সিটু পদ্ধতি, বিশেষত ইহার ব্যাপক পরিমাণ আবাদের জন্য মাইক্রো-প্রপাগেশন পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭। আইএসবিএন 984-461-128-7
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।