ভূমিকা : লাল চন্দ্রপ্রভা বা টেকোমা (বৈজ্ঞানিক নাম: Tecoma capensis ইংরেজি : Cape Honey Suckle) এটি বিগনোনিয়াসি পরিবারের টেকোমা গণের এলোমেলোভাবে বেড়ে ওঠা গুল্ম। বাড়িতে বা বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Tecoma capensis (Thunb.) Lindl., Bot. Reg.: 13 (1828). সমনাম: Bignonia capensis Thunb. (1800), Tecomaria capensis (Thunb.) Spach (1840). ইংরেজি নাম: Cape Honey Suckle. স্থানীয় নাম: লাল চন্দ্রপ্রভা বা টেকোমা। জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাসজগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Tracheophyta. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Asterids. বর্গ: Lamiales. পরিবার: Bignoniaceae. গণ: Tecoma.প্রজাতি: Tecoma capensis.
লাল চন্দ্রপ্রভা গুল্মের বর্ণনা:
লাল চন্দ্রপ্রভা এলোমেলোভাবে বেড়ে ওঠা ঝপালো গুল্ম। এদের কান্ড সবুজ, প্রচুর বায়ুরন্ধ্র যুক্ত। পাতা প্রতিমুখ তির্যক, ১-পক্ষল যৌগিক, সচূড় পক্ষল, পত্রাক্ষ উপরে খাঁজ বিশিষ্ট। পত্রক ৭-৯ টি, প্রায় অবৃন্তক, ৩ x ২ সেমি, ডিম্বাকার, প্রশস্ত দপ্তর, মসৃণ। ফুলের বিন্যাস শীর্ষীয় প্যানিকেল। ফুল সবৃন্তক, উভলিঙ্গ, সম্পূর্ণ, সহপত্রী। বৃতি প্রায় ৭ সেমি লম্বা, ঘন্টাকার, খন্ড ৫ টি, অত্যন্ত খাটো, সূক্ষ্মাগ্র।
ফুলের পাপড়ি লম্বা নালিকাকার, নালি প্রায় ৩ সেমি লম্বা এবং ৫ টি ভাগে ছড়ানো থাকে। প্রতিটি পাপড়ি দেড় থেকে দুই সেমি লম্বা ও গাঢ় কমলা লাল রঙের। ফুলের পুংকেশর ৪ টি, এগুলো দেখতে দীর্ঘ এবং পাপড়ির সঙ্গে লাগানো থাকে। পুংদন্ড প্রায় সাড়ে তিন সেমি লম্বা, বহির্মুখী, পরাগধানী ২-কোষী। গর্ভপত্র ২ টি, যুক্ত, গর্ভদন্ড ১ টি, সাড়ে চার সেমি লম্বা, বহির্মুখী, পুংদন্ডের চেয়ে দীর্ঘতর, গর্ভমুন্ড দ্বিখন্ডিত। লাল চন্দ্রপ্রভার ফল ক্যাপসিউল, কদাচিৎ জন্মে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা:
2n = ৩৪ (Kumar and Subramaniam, 1986).
লাল চন্দ্রপ্রভা গুল্মের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
লাল চন্দ্রপ্রভার ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর-মার্চ। লাল চন্দ্রপ্রভা গাছের চাষাবাদ পদ্ধতি অনেক পুরনো। চিরসবুজ এই গুল্মটির শীতকালে পাতা ঝরে যায়। আধো ছায়া বা রোদযুক্ত স্থানে চারা লাগানো হয়। এই প্রজাতি মাঝারি উষ্ণ তাপমাত্রায়যুক্ত স্থানে জন্মে। শীতের সময় বাড়ির ভিতরে টবে লাগিয়ে চাষ করা যায়। এই প্রজাতি ঊর্ধ্ব ধাবক ও শাখা কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয়। উদ্যানের আলংকারিক উদ্ভিদ।
বিস্তৃতি:
দক্ষিণ আফ্রিকায় আদিনিবাস। বহু উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলীয় দেশ সমূহে দেশ্যভূত এবং চাষাবাদ করা হয়। বাংলাদেশে বাগানে চাষ হয়। এছাড়া ইসোয়াতিনি, মোজাম্বিক অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, হাওয়াই, ক্যালিফোর্নিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে চাষাবাদ করা হয়। অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক বিবেচনায় একে উদ্যানে রোপন করা হয়। এছাড়া এটি একটি অনন্য সাধারণ বাহারি উদ্ভিদ। বেড়ার ঝোপ তৈরিতেও ব্যবহার্য।
লাল চন্দ্রপ্রভা গুল্মের অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) লাল চন্দ্রপ্রভা বা টেকোমা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে লাল চন্দ্রপ্রভা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ০৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৮-২৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: tgrauros
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।