আপাং (বৈজ্ঞানিক নাম: Achyranthes aspera) একটি বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। আপাং সাধারণত অনমনীয়, ০.৩-১.০ মিটার উঁচু, কাণ্ড সাধারণত নিম্নাংশ হতে শাখাযুক্ত, সরেখ, কৌণিক, পর্বের উপরিভাগ পুরু । পত্র সরলনিম্নে আপাংয়ের বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার উল্লেখ করা হলো। আপাং-এর পরিচিতি সম্পর্কে জানতে পড়ুন
আপাং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ঔষধি উপগুল্ম
অর্শ রোগে: আপাং-এর বীজ তিন গ্রাম এবং আতপ চাল ধোয়া পানি দিয়ে ভালোভাবে বেটে সকালে একবার করে খেলে অর্শের যন্ত্রণা এবং রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়। মোট তিন থেকে চার দিন নিয়ম করে খাওয়া দরকার।
বেশি ঋতুস্রাব: ঋতুস্রাবের পরিমাণ অনুসারে দুই থেকে চার গ্রাম পরিমাণ আপাং-এর টাটকা মূল সামান্য পানি দিয়ে বেটে খেলে স্রাবের পরিমাণ নিশ্চয় কমবে। যদি দেখা যায় স্রাব স্বাভাবিক হয়নি, তাহলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বাদে একই পরিমাণ মূল বাটা আরও একবার খাওয়া দরকার। তবে এটা নির্ভর করে ঋতুস্রাবের পরিমাণের ওপর।
অকালপ্রসবে: অকালপ্রসবের সম্ভাবনা দেখা দিলে যে আপাং গাছের ফুল অর্থাৎ মঞ্জরী হয়নি এমন চারাগাছ গোড়া থেকে মূল সমেত তুলে গর্ভবতীর কটিদেশে বেঁধে দিলে অকাল প্রসবের ভয় থাকে না। এটা বহু পরীক্ষিত এবং সত্য ঘটনা।
গ্রহণী রোগে: রোগের অবস্থানুসারে অর্থাৎ একেবারে প্রথম দিকে, টাটকা আপাং মূল ২ গ্রাম, বেশ কিছুদিন ধরে ভুগলে ৩ গ্রাম পরিমাণ এবং রোগ বাড়াবাড়ি হলে ৪ গ্রাম পরিমাণ সামান্য ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তিন থেকে চারটি গোলমরিচসহ বেটে সেটা আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে দিনে একবার করে খেলে দুরারোগ্য গ্রহণী রোগেও উপকার হয়।
কাটা ও রক্তপাতে: আপাং গাছের টাটকা পাতার রস আঘাত লেগে কাটা অথবা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কাটা এবং রক্ত পড়লে প্রয়োগ করার সাথে সাথে রক্ত পড়া বন্ধ হয় এবং কাটা স্থান খুব শীঘ্র জুড়ে যাবে। তবে রসটা একটু বেশি পরিমাণে দেয়া দরকার।
ফোড়ার পুঁজ বের করতে: আপাং গাছের টাটকা পাতা আট থেকে দশটি এবং আতপ চাল চার গ্রাম, উভয়কে সামান্য ঠাণ্ডা পানি দিয়ে বেটে ফোঁড়ার চারপাশে প্রলেপ দিলে ভিতর থেকে পুঁজ ও দূষিত রক্ত বের হয়ে আসে। তবে দিনে দু-তিন বার প্রলেপ দেয়া দরকার।
বাগী রোগে: আপাং গাছের ডাল, পাতা এবং মূল (সবই টাটকা হওয়া দরকার) পরিমাণমত হুক্কার পানি দিয়ে বেটে সেটা বাগীর ওপর বারবার প্রলেপ দিলে বাগী নিশ্চয়ই বসে যাবে।
অঙ্গ ফুললে: আপাং গাছের কচি ডাল, পাতা ও মূল ২৫ গ্রাম পরিমাণ টাটকা তুলে একটা মাটির পাত্রে নিতে হবে; এগুলো কেটে ছোট টুকরা করে দিলে আরও ভালো হয়। এরপর পাত্রে ২০০ মি.লি. পানি দিয়ে মৃদু কাঠের জ্বালে সিদ্ধ করতে হবে। পনের থেকে বিশ মিনিট সিদ্ধ হলে পাত্রটি আঁচ থেকে নামিয়ে সকালে ৩০ থেকে ৪০ মি.লি. এবং সন্ধ্যায় একই পরিমাণে খেলে রোগীর খুব শীঘ্রই উপশম হয়। তবে চার পাঁচদিন রোগীকে সিদ্ধ করে সে পানি খেতে হবে। বাসি পানি খাওয়া উচিত নয়।
কলেরা রোগে: এ অসুখে আক্রান্ত হবার সাথে সাথে গাছের টাটকা মূল চার গ্রাম সামান্য পানি দিয়ে বেটে খেলে অবশ্যই উপকার হবে। তবে ওষুধ অল্প মাত্রায় বারে বারে খেতে হবে। বাটা মূল আধা কাপ পানিতে গুলে এক থেকে দু’চামচ পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় মিনিট অন্তর খেতে হবে। এভাবে খাওয়াবার উদ্দেশ্য হলো যাতে একসাথে ওষুধ খেলে পেটে চাপ পড়ে রোগীর মলের সাথে ওষুধ বেরিয়ে না যায়।
চুল পাকলে: আপাং-এর টাকা শিকড় বেটে (কতটা পরিমাণ বাটা হবে তা নির্ভর করছে কি পরিমাণ চুল পেকেছে তার ওপর, ছেলেদের কম লাগবে এবং মেয়েদের লম্বা চুলে বেশি লাগবে।) দুপুরে গোসল করতে যাবার দু-তিন ঘণ্টা আগে সারা মাথায় ব্যবহার করলে উপকারটা সহজেই বুঝতে পারা যাবে। এতে একদিকে চুলের রং যেমন কালো হবে, তেমনি নতুন চুলও গজাবে।
দাদ রোগে: আপাং গাছের শুকনা ডাটা আগুনে পুড়িয়ে ক্ষার তৈরি করে নিতে হবে। সে ক্ষার আট গ্রাম এবং জলপাই তিল তেল দিয়ে মেখে দাদের ওপর ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। তিন থেকে চারদিন লাগালেই দাদ ভালো হয়ে যাবে।
বিষাক্ত ক্ষতে: কোনো কারণে ক্ষতস্থান যদি বিষিয়ে যায় এবং নানা ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো না হয়, তবে আপাং গাছের পাতা ও কচি ডাল বেটে তার রস দশ-পনর মি.লি. এক থেকে দেড় চামচ গাওয়া ঘি দিয়ে ভেজে সেটা সকালে একবার, রাতে শোয়ার সময় আরও একবার ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষত দ্রুত সেরে উঠবে। তবে একটা পরিষ্কার ফালি কাপড় দিয়ে হালকাভাবে ক্ষতস্থান বেঁধে রাখলে ভালো। তা না হলে ঘুমের ঘোরে বিছানা নোংরা হবে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।