বন শুলফা গুল্ম-এর সাতটি ভেষজ গুণাগুণ

ঔষধার্থে ব্যবহারের জন্য শুকনো বন শুলফার (Fumaria indica) গাছের কথাই বলা হবে, তবে না পাওয়া গেলে বাজারে প্রাপ্ত শাহতরা ব্যবহার করলে কোন ক্ষতি নেই।

বন শুলফা গুল্ম-এর ঔষধি প্রয়োগ

১. যকৃতের ক্রিয়াহ্রাসে: হজম ভাল হচ্ছে না, সেইসঙ্গে দাস্ত অনিয়মিত, কখনো কখনো যকৃতে সামান্য ব্যথা, এক্ষেত্রে শুকনো বন শুলফা ৫ গ্রাম ছোট ছোট করে কেটে তিন কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ কাপখানিক থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, সেটিকে সকালে ও বিকালে দু’বারে খেতে হবে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মাত্রা থেকে ছোটদের মাত্রা এর সিকি অথবা অর্ধেক।

২. ঘুসঘুসে জ্বরে: কিছুতেই সারছে না, অথচ বহু চিকিৎসায় জ্বরের প্রাবল্যটা কমে গেছে, এদিকে খাচ্ছে-দাচ্ছে ঘুমুচ্ছে, শরীরে কখনো-কখনো দাহ হয়, অথচ কালাজ্বর, রাজযক্ষ্মা প্রভৃতিও নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে যকৃত-প্লীহাতে ভারবোধ, ব্যথা, শরীর ক্রমশঃ দুর্বল হচ্ছে ; এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে প্রস্তুত ক্বাথ দিনে ২ বার করে কিছুদিন খেতে হবে।

৩. প্রতিশ্যায়ে হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা: সর্দি কিংবা সর্দির প্রবণতা, এক্ষেত্রে বন শুলফা গুল্ম-এর ক্বাথ মাঝে মাঝে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

৪. মূত্রাল্পতায়: বন শুলফার ক্বাথ পূর্বোক্ত মাত্রায় কয়েকদিন খেলে কমে যায়। তবে অশ্মরী-জনিত হলে হয় না। জ্বর প্রভৃতির ক্ষেত্রে এই অবস্থার সৃষ্টি হলে কিংবা কোন জীবাণুঘটিত কারণে বস্তিপ্রদাহ (মূত্রাশয়ে প্রদাহ) হলে এ যোগটি ব্যবহার করলে কাজ হবে।

৫. কোষ্ঠবদ্ধতায়: যেক্ষেত্রে এটি স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে, সমস্যাটা সেখানেই। এই সমস্যা সমাধান করতে বনশুলফা ব্যবহার করতে পারেন। বন শুলফার ক্বাথ প্রত্যহ সকালে খালি পেটে লাগাতার ১০। ১৫ দিন খাওয়ার পর আরও কিছুদিন ২। ৩ দিন ছাড়া ছাড়া খেতে হবে।

৬. চর্মরোগে: চর্মরোগের তো আর প্রকৃত হিসাব-নিকাশ কিছুই নেই, হিসেব করতে গেলে বিশাল পুঁথি, তবে যেকোন চর্মরোগের সহায়ক ঔষধ হিসেবে এটি অমূল্য রক্তপরিষ্কারক ভেষজ । পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে প্রস্তুত বন শুলফার ক্বাথ সকালে ও বিকালে নিয়মিতভাবেই খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  করন কর্পুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলে জন্মানো গুল্ম

৭. বার্ধক্যের অস্বস্তি ঠেকাতে: বয়স ৬০-এর উপর গেলে স্বাভাবিকভাবে নানা অসুবিধা পর পর আসতে থাকে। কখনো হজম ভাল হচ্ছে না, কখনো দাস্ত অপরিষ্কার, হঠাৎ হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা, দুর্বলতা, অপুষ্টি, শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস হতেই থাকে। যেহেতু এগুলি স্বাভাবিকভাবেই আসে, সেহেতু এগুলির হাত থেকে একেবারেই হাই পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে অস্বস্তি কমাতে চাইলে প্রত্যহ সকালে অর্ধমাত্রায় বন শুলফার ক্বাথ খালিপেটে ১০। ১৫ দিন লাগাতার খাওয়ার পর ৫ । ৭ দিন করে বন্ধ রাখুন। অর্ধ মাত্রা বলতে ২। ৩ গ্রাম বনশুলফা এক কাপ জলে সিদ্ধ ক’রে আন্দাজ সিকি কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, ঠাণ্ডা হলে সেটিই খাওয়া ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২১৭-২১৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!