বড় জামুই গুল্ম হিমালয়ের ৫০০০ ফুট উচু পর্যন্ত স্থানে এবং ভারতের সর্বত্র অল্পবিস্তর জন্মে। সাধারণতঃ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র পতিত জমিতে, খালের ধারে হয়ে থাকে। বর্ষজীবী রসাল গুল্ম। কাণ্ড ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি হয়, কাণ্ড থেকে সরু, ছোট ছোট শাখা বেরোয়। সমগ্র কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা লালচে।
পাতা পরস্পর বিপরীত দিকে সমান্তরালভাবে থাকে, পাতা সরু, ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার মাথার দিকটা গোলাকার, বোঁটার দিকটা ক্রমশঃ সরু। ছোট ছোট ফুলগুলি পাতার কোলে লেপটে থাকে সাধারণতঃ বর্ষাকালে দেখা যায়। তারপর ফল হয়, পাকে শীতকালে, ফলের মধ্যে কালো রঙের বহু, বীজ থাকে।
নুনে শাক-এর অন্যান্য নাম:
এটিকে সংস্কৃতে লোণিকা, বাংলায় নুনে শাক, বড় লোনিয়া, বড় নানিয়া, মেদিনীপুরের অঞ্চল বিশেষে ননিয়া, হিন্দীতে খরসা, কুলফা, উড়িষ্যার অঞ্চল বিশেষে পুরনিশাক বলে। এর বোটানিক্যাল নাম: Portulaca oleracea Linn. বলে। ফ্যামিলি Portulacaceae. এছাড়া আকারে ছোট এক প্রকারের লেণিকা পাওয়া যায়, সেটির গাঁটে গাঁটে শিকড় বেরোয়, এর বোটানিক্যাল নাম Portulaca quadrifida Linn. ঔযধার্থ ব্যবহার্য অংশসমগ্র গাছ ও বীজ।
উপকারিতা:
১. তোতলামিতে: সব তোতলামি এক জাগয়া থেকে হয় না অর্থাৎ মুখে সব বর্ণ তো এক জায়গা থেকে উচ্চারিত হয় না, যেমন কতকগুলি আছে ওষ্ঠ বর্ণ, ঠোঁট যদি থাকে, তবে সেটা উচ্চারণ করা যায় না; কতকগলি আছে দন্ত্যবর্ণ, সেগলি দাঁত থাকলে উচ্চারণ স্পষ্ট বেরোয় না; কতকগুলি আছে মূর্ধা বর্ণ, সেগুলি জিহ্বা মূলীয় বর্ণ বিসর্গ, ছ, জ, এইসবে আটকে যায়, থেকে থেকে উচ্চারিত হয়।
এই ধরনের বর্ণ যাঁদের আটকে যায়, তাঁরা যদি এই নুনে শাকের রস ২ চা-চামচ মুখে ধরে খানিকক্ষণ করে বসে থাকেন, তাহলে উচ্চারণে ঐ বর্ণটা আটকাবে না। তবে এটা করা যদি অসুবিধে মনে হয়, তাহলে প্রত্যহ খানিকক্ষণ করে নুনেশাক চিবিয়ে ফেলে দিলেও একই কাজ হবে, রসটা গলাধঃকরণ করলে ক্ষতি নেই। এইভাবে অন্ততঃ মাসখানেক করলে জিহ্বমূলের ওই জড়তাটা কেটে যাবে এবং কথাটাও পরিষ্কার হবে।
২. প্রমেহ রোগে: প্রমেহ তো এক প্রকার নয়, ২০ প্রকার, তবে সব প্রমেহের একটি লক্ষণ প্রায় সমান প্রস্রাবটা ঘোলাটে হবে ও পিপাসা থাকবে। এসব ক্ষেত্রে নুনেশাক ১০ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, ঠাণ্ডা হলে সকালে ও বিকালে দু’বারে ওটাকে খেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়—উপরিউক্ত অসুবিধেগলি চলে যায়। যেসব ক্ষেত্রে রক্তে সোমধাতুর বিকৃতি যোগ (Blood sugar) আছে, সেসব ক্ষেত্রে যে যে উপসর্গ দেখা যায়, যেমন অধিক পিপাসা, হঠাৎ কেটে ছিড়ে গেলে শুকোতে চায় না, সেগুলিরও উপশম হয়।
৩. শিশুদের কাশিতে: নুনে শাকের রস একটু গরম করে ঠাণ্ডা হলে সেই রস ১০/১৫ ফোঁটা ও মধু ৪/৫ ফোঁটা একত্রে মিশিয়ে সারাদিনে ২/৩ বার খাওয়ালে ২/১ দিনের মধ্যেই অনেকটা উপশম হবে, কয়েকদিন খাওয়ালে ওটা আর থাকবে না।
৪. শিশুদের অতিসারে ও আমাশায়: শিশুদের দুধ খাওয়া বয়সে, তা মায়ের দুধ হোক আর বেবীফডেই হোক, পেটের দোষ মাঝে মধ্যে দেখা দেয়। যেসব শিশু, মায়ের দুধ খায়, সেক্ষেত্রে মায়ের অতিসার, আমাশায় বা অল্প হলে তার দ্বারা সন্তানও সে দোষে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, সেও অতিসার, আমাশা বা অম্ল রোগগ্রস্ত হয়; আবার স্তন্য ছাড়ার বয়সে ও দাঁত ওঠার সময়েও পেটের দোষ প্রায় হয়ে থাকে।
এসব ক্ষেত্রে পাতলা দাস্ত, ছাড়া ছাড়া মল, মলের রঙ কখনো সাদাটে, কখনো বা হলদে, তার সঙ্গে আম থাকে, পেটেও বায়ু জমে। তখন নুনেশাকের রস অল্প একটু, গরম করে ঠাণ্ডা হলে বয়সানুপাতে ৫-১৫ ফোঁটা মাত্রায় প্রত্যহ সকালে ও সন্ধ্যায় ২ থেকে ৪ ফোঁটা মধুসহ খাওয়ালে ধীরে ধীরে পেটের দোষটা চলে যায়।
নুনে শাক-এর বাহ-প্রয়োগ:
৫. চোখ উঠায়: এতে চোখ লাল হয়, করকর করে, জল পড়ে, চুলকায় এবং চোখটা ফুলে যায়। এক্ষেত্রে নুনেশাক থেতলে ন্যাকড়ায় পলি করে সেই পুটলিটা দিয়ে চোখ মুছলে চোখ উঠার উপশম হয়। যেক্ষেত্রে চোখ খুব লাল হয় সেক্ষেত্রে নুনেশাকের স্বচ্ছ রস ১ ফোঁটা ড্রপারে করে প্রত্যহ একবার চোখে দিলে ২/৩ দিনের মধ্যেই উপশম হবে।
অনেক ক্ষেত্রে চোখ রগড়ানোর ফলে চোখের পাতা লাল হয়ে ফুলে যায়, এটা শিশু ও কিশোরদের বেলায় বেশী ঘটে, এ অবস্থায় নুনেশাক বেটে অল্প গরম করে চোখের উপর ও নিচে প্রলেপ দিলে ওটা চলে যায়। তবে প্রলেপ দেওয়ার অসুবিধা থাকলে নুনেশাকের রস বের করে সেটাকে অল্প গরম করে ন্যাকড়ায় ভিজিয়ে বার বার ঐ স্থানগুলোতে লাগাতে হবে।
৬. বিষাক্ত পোকামাকড়ের বিষে: বোলতা বা মৌমাছি হলো ফোটালে, পিপড়ে কামড়ালে এবং শয়োপোকা লাগলে যে যন্ত্রণা হয় এবং ফলে যায়, সেসব ক্ষেত্রে নুনেশাক বেটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিলে ওসবের উপশম হবে। তবে ভীমরুল বা কাঁকড়া বিছের বেলায় এটা কতটা কাজ করবে, সেটা কিন্তু পরীক্ষা-সাপেক্ষ।
৭. বিছুটি লাগলে: এমন ধরনের যদি কোন ফলের বা পাতার ধোঁয়া গায়ে লেগে ফলে ওঠে এবং চুলকোয়, সেক্ষেত্রে নুনেশাক বেটে একটু গরম করে লাগালেও ফুলে এবং জ্বালা দু’টোরই উপশম হবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Portulaca oleracea Linn.
1. (a) Protein 2.4%, (b) Ether extract 0.6%, (c) crude fibre 1.3%, (d) carbohydrates 2.9%, (e) Moisture 90.5%, (f) Mineral matter 2.3% [calcium, magnesium, sodium, potassium and copper), (g) Sulphur 63%, (h) chlorine 63%. 2. Vitamins (mg/100 g) : (a) Thiamine 0.10. (b) Riboflavin 0.22, (c) Nicotinic acid 0.7, (d) vitamin C 29. 3. l-noradrenaline dopamine [4(2-aminoethyl) pyrocatechol] 4. DOPA [3(3, 4-dihydroxyphenyl) alanine]. 5. Unidentified catechol.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১২১-১২৩।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।