এর গাছ সাধারণতঃ ৫/৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল সাদা রঙের, ফল হয় থোকা থোকা সবুজ রঙের, পাকলে হলদে। ফুল ও ফল বৎসরের প্রায় সব সময়ই হয়ে থাকে। এর বীজকে বেগুন বা বৃহতীর বীজ থেকে পৃথক করা অসম্ভব। গুণাগুণের দিক থেকে এটি অনেকটা বৃহতীর (Solanum indicum) সমতুল্য। এটিও Solanaceae ফ্যামিলীর অন্তর্ভুক্ত গাছ।
অন্যান্য নাম:
বেগুনকে সংস্কৃতে বস্তাকী, বার্তাকু; বাংলায় বেগুন, উৎকলে ভণ্টা ও হিন্দীতে বইগন বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Solanum melongena Linn., পরিবার: Solanaceae. তবে Solanum torvum Swartz নামে একটি গাছ পশ্চিম বাংলার যেখানে সেখানে রাস্তার ধারে, কোথাও কোথাও জঙ্গলের ধারে হতে দেখা যায়, এটিকে বাংলায় গোষ্ঠ বেগুন বা গেঠ বেগন এবং সংস্কৃতে গোষ্ঠ বাতাকু বলে।
গোট বেগুন গুল্ম-এর উপকারিতা
১. কফজ কাসিতে: এই বেগুন অল্প জল দিয়ে থেঁতো ক’রে রস করতে হয়। এই রস যখনই ব্যবহার করতে হবে তখনই গরম করে খেতে দিতে হবে। তবে আধ চা-চামচ ব্যবহার করলেই চলে। এর সঙ্গে ১০/১৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে খাওয়ার বিধি। এই কফজ কাশি সম্বন্ধে একটু জানার আছে, এ কাসে অগ্নিমান্দ্য, অরুচি, গা বমিবমি এবং গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা অর্থাৎ শিহরণ আর সর্দিও ওঠে থোকো থোকো।
২. পাথুরীতে: তবে এই মুষ্টিযোগটি প্রথমাবস্থায় উপযোগী, দীর্ঘদিন হয়ে গেলে সেটাকে দ্রবীভূত করিয়ে দেওয়া খুবই দুঃসাধ্য। তবে এই পাথুরী শুক্রজন্যও হতে পারে, আবার প্রমেহ জন্যও হ’তে পারে; এক্ষেত্রে এই গোট বেগুন গুল্ম-এর মূলের ছাল চূর্ণ করে এক গ্রাম মাত্রায় প্রত্যহ দু’বেলা কুলখ কলাই ভিজানো জল দিয়ে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই মূত্ররোগের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে, তবে যেটা খুবই বড় হয় গিয়েছে সেটা আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে তবেই বেরিয়ে যাবে।
কুলথ ৫-১০ গ্রাম পর্যন্ত নেওয়া চলে, একে রাত্রে ১ গ্লাস গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরের দিন ঐ জল দিয়ে খেতে হবে, আর সকালে ভিজিয়ে রেখে বৈকালের দিকে সেই জলের সঙ্গে খেতে হবে। পর্বদিন রাত্রে ভিজিয়ে রাখা জল পরের দিন বিকালে খাওয়ালে চলবে না। এই যোগটা ব্যবহারে আর একটা কাজও হবে। সেটা হলো, পাথুরের মতো শক্ত পদার্থটি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম হয়ে বেরিয়ে যাবে।
৩. শিশুদের দুধ তেলায়: এই ক্ষেত্রে এই গোট বেগুনের রস ২ ফোঁটা ও মধু, ১০/১২ ফোঁটা মিশিয়ে প্রত্যহ একবার করে খেতে দিলে দুধ তোলাটা কমে যাবে।
৪. বিষক্রিয়ায়: কোন ক্রমে দেহে বিষ সঞ্চার হলে অর্থাৎ কোন প্রকার পোকামাকড় পেটে গিয়ে শরীর ফুলে যাওয়া, বমনভাব বা বমন হওয়া, শরীরে জ্বালা, অক্ষুধা প্রভৃতি বিষক্রিয়ার এইসব উপসর্গ দেখা দিলে, এক্ষেত্রে সাদা বেগুন হ’লেই ভাল হয়— যেগুলি দেখতে হাঁসের ডিমের মতো, তা না হলে এই গোট বেগুনের অথবা যেকোন প্রকার বেগুনের পাতার রস এবেলা এক চা-চামচ ও ওবেলা এক চা-চামচ রস একটু গরম করে খেলে পরে খাদ্যে বিষক্রিয়ার দোষগুলি অপসারিত হবে।
৫. জননদ্বারের চুলকানিতে: এটা খুবই কষ্টদায়ক, শুধু কষ্টদায়কই নয়- বড়ই লজ্জাজনক; এভিন্ন আর একটি লক্ষণও অনুভূত হয় যে ভিতরটা যেন অসাড়; এক্ষেত্রে ঐ গোটাবেগুনকে কুচিয়ে শুকিয়ে সেটার ধোঁয়া লাগালে সেরে যায়। সব থেকে সুবিধে হয় একটা বেতের চেয়ারে বসে ধোঁয়া লাগানো।
৬. সায়েটিকা রোগে: যাকে আয়ুর্বেদে গৃধ্রসী রোগ বলে। গোটাবেগুন ৪/৫টি, সিদ্ধ করে জলটা ফেলে দিয়ে সেই বেগুনগুলোকে এরন্ড তেলে ভেজে সেইটা কয়েকদিন একবার করে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই ঐ সায়েটিকার উপশম হয়।
৭. সংগ্রহ গ্রহণীতে: দিনের বেলায় দাস্ত বেশী হয়, আর ত্রিবেলায় এর উপদ্রব থাকে এখানে আয়ুর্বেদের মতে হলো—এক্ষেত্রে পিত্ত ক্ষয় হয়ে গিয়ে মোটা প্রধান হয়ে গিয়েছে। এটা পুরাতন আমাশয়েও হয়। এক্ষেত্রে যেকোন বেগুনই হোক না কেন, তার মূল চূর্ণ করে ১ গ্রাম মাত্রায় ঘোলের সঙ্গে মিশিয়ে একবার করে খেলে দুই তিন দিনের পর থেকে গ্রহণীর উপদ্রবটা কমে যাবে। পূর্বে নবপ্রসূতির এই গ্রহণীরোগ হলে সাধারণে ব’লতো সূতিকা হয়েছে, আর এই বেগুনের মুল চূর্ণ করে ঘোলের সঙ্গে খাওয়ানো হতো।
৮. মেদাহ্রাসে: প্রথম বয়সে ছিল দেহের সাধারণ গড়ন; তারপর বয়েস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংস ধাতু দ্রুত পুষ্ট হতে থাকলে মেদধাতুটাও বেড়ে যেতে থাকে। এই ধাতুটা বাড়ার প্রথম লক্ষণ হবে উদরটি ক্রমশঃ বেশ নিটোল হতে থাকে, তারপর পেটে থাক নামতে থাকে, তারপর দুটি নিতম্ব বেশ ভাগা কলসীর তলার মত হয়ে ওঠে, এবং কোমরটা বেশ ভরভরান্তি হয়; গাল দুটিও ভারী হয়ে যায়। প্রথম প্রথম দেখতে বেশ ভাল লাগে, কিন্তু ক্রমেই ভিতরটায় হৃদরোগের শিকড় গেড়ে বসে।
সেই সময় কর্তব্য হলো যে সামান্য নুন (লবণ) দিয়ে কিছুদিন বেগুন পোড়া খাওয়া। কিছুদিন খেতে পারলে ঐ বাড়-বাড়ন্তটা কমে যাবে। তবে আর একটা কথা জানিয়ে রাখি— এইক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকার পেতে হলে আলু, চিনি অথবা যেকোন মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে এবং একবেলা ভাত আর একবেলা কড়া সেকা রুটি। (পাঁপরের মত) খেতে হবে। এর দ্বারা মেদটা আস্তে আস্তে অবশ্যই কমে যাবে।
৯. অগ্নিমান্দ্য: ভাল ক্ষিধে হচ্ছে না, খাওয়ার রুচি নেই, সেক্ষেত্রে গোট বেগুন গুল্ম-এর পাতা ১০ গ্রাম বেটে ঘণ্টের মত রান্না করে খেলে ওটা কমে যায়। কোন কোন প্রাচীন বৈদ্য ওটাতে সিদ্ধ করে ওই জলটা খেতে দিতেন। এটা পরীক্ষিত।
১০. রক্তের স্বল্পতায়: যাকে বলবো রক্তধাতুটার বৃদ্ধি হচ্ছে না। এটার প্রধান উপসর্গ হতে দেখা যায়, দেহটা মোটা হলে হবে কি, মাথাটা হঠাৎ ঘরে গেল, গায়ে (ত্বকে) চিক্কণতার অভাব, পিত্তবধি, বুকের স্পন্দন হঠাৎ হঠাৎ কমে যায়, কিছুদিন বাদে পা-দুটো একটু, ফুলতে থাকে। এক্ষেত্রে কুলি বেগুন ১০/১২ গ্রাম কুচিয়ে ৩। ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে ওই জলটায় সামান্য লবণ মিশিয়ে প্রত্যহ একবার খেলে রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে বলাধান হয়।
CHEMICAL COMPOSITION
1. (a) Protein 1.4%, (b) Fat 0.3%, (c) Minerals 0.3%, (d) Fibre 1.3%, (e) Moisture 92.7%, (f) other carbohydrates 4.0 mg/100 g. 2. The mineral constituents present are :– (mg/100 g edible matter). Calcium 18, Magnesium 16, Phosphorus 47, Iron 0.9, Sodium 3, Potassium 200, Copper 0.17, Sulphur 44, Chlorine 57. 3. Vitamins present are : – Vitamin A, thiamine, riboflavin, nicotinic acid; Vitamin C, Chlorine. 4. Main pigments : – Delphinidin 3-bioside (anthocyanin), (Nasunin, Lycoxanthin). 5. Bitter principle :- Solasonine, Arginine glycoside. 6. Phenolic compounds : (a) Chlorogenic acid, (b) Neochlorogenic acid, (c) Scopoletin, (d) Caffeic acid. 7. (a) 5-hydroxy tryptamine, (b) Hydrocyanic acid (bases).
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১২৭-১৩১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।