গাঁদা গুল্ম-এর পাতা ও ফুলের নানাবিধি ভেষজ ব্যবহার

পরিচিতি

গাঁদা (Tagetes erecta) গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি ১.০ সে.মি. পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা বহু খণ্ডে বিভক্ত, পত্রকের ধার করাতের মতো খাঁজকাটা। গাছে ও পাতায় সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রোম ও একটি ঝাজানো গন্ধ আছে। সাধারণত অঞ্চলভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হলুদ থেকে কমলা রঙের ফুল হয়। শীতের মৌসুমি ফুলের মধ্যে গাদা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে।

গাঁদা গুল্ম-এর বিস্তৃতি:

উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে গাঁদা ফুলের আদি নিবাস মেক্সিকোর গেন্ডামেরিতে। সারা পৃথিবীতে গাঁদার ২০টি প্রজাতি থাকলেও ভারত ও বাংলাদেশে এর ৫টি প্রজাতি দেখা যায়।

বংশবিস্তার ও চাষ পদ্ধতি:

শীতকালে ফুল হয় এবং শীতের শেষে ফুলের বীজ পাকে, এটি সংরক্ষণ করে জুন-জুলাই মাসে বীজ দিয়ে নতুন চারা গাছ উৎপাদন সম্ভব।

এ ছাড়া অঙ্গজভাবে অর্থাৎ গাছের কাণ্ডের পর্ব ও মোটা ডাল থেকে ছোট ছোট শিকড় বের হয়। এ সব ডাল কেটে মাটিতে পুঁতলে নতুন গাছ হয়ে যায়। গাঁদা যে কোনো মাটিতেই হয় এবং চাষের ঝামেলা নেই।

ফুল দেখতে সুন্দর এবং তাজা থাকে অনেক দিন। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর বেশ চাহিদা আছে। বাণিজ্যিকভাবে এর চাহিদা বেশি। তোড়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার জন্য উপযোগী।

গাঁদা গুল্ম-এর ঔষধি গুণ:

গাদা কাজ করে রসবহ ও রক্তবহ স্রোতে এবং ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পাতা ও ফুলের পাপড়ি।

১. পেটের সমস্যা সারাতে: গুরুপাক খাবার খেয়ে অথবা বেশিক্ষণ উপবাস থেকে স্নেহ জাতীয় খাবার খেলে অজীর্ণ হয়। এটি সারতে না সারতে আবার গুরুপাক খাবার প্রথমে আমাশয় ও পরে রক্ত আমাশয় দেখা দেয়।

এক্ষেত্রে গাঁদা পাতার রস বেশ উপকারী। পাতার দেড় থেকে দুই চা চামচ রসে একটু চিনি মিশিয়ে দিনে দুই-তিন বার খেলে একদিনের মধ্যেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

২. অর্শে উপশম: গাঁদা ফুল ও পাতার রস ব্যবহারে অর্শের উপশম হয়। রক্তার্শে গাঁদা ফুলের রস এক চা-চামচ একটু মাখনের সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার করে দুদিন খেলেই যন্ত্রণা বা রক্ত পড়া দুই-ই বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও থাকে না।

আরো পড়ুন:  সাদা শিমুল গাছের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

৩. রক্ত পিত্ত: হঠাৎ করে রক্তবমি বা পায়খানা প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়া বা রক্ত পিত্ত শুরু হলে এক চা চামচ করে গাদা পাতার রস গরম করার পর ঠাণ্ডা হলে দিনে দুই-তিন বার খেলে। রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

৪. চোখের সমস্যা দূর করতে: যে কোনো কারণে চোখ লাল হলে গাঁদা ফুলের রস চোখে দিলে উপকার হয়।

৫. কানের সমস্যায়: কান টাটানি বা কটকটানি হলে গাদা পাতার রস একটু গরম করে সকালে বিকালে দুবার দু-একদিন দিলেই সেরে যায়।

৬. ফোঁড়া সারাতে: (ক) ফোড়া পঁচড়া সারাতেও গাদা পাতা ব্যবহার হয়। ফোঁড়া পাকছে না, শক্ত হয়ে আছে এরূপ ক্ষেত্রে গদা পাতা বাটা প্রলেপ দিলে শিগগিরই পেকে যাবে এবং যন্ত্রণাও কমে যায়।

(খ) শরীরে পাচড়া হলে গাঁদা ফুলের রস আধা চামচ করে ২ থেকে ৪ দিন দিনে দুইবার খেতে হবে এবং শরীরে লাগালে এতে পাচড়া সেরে যায়।

রাসায়নিক গঠন:

Flower contains : a) Quercetagetin (b) Quercetagetin-7-glucoside C) Carotenoids.

Leaf contains : essential oil. (Bhattacharia, 1982)

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. অবনীভূষণ ঠাকুর: ‘ভেষজ উদ্ভিদ ও লোকজ ব্যবহার’, অবসর প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০০৯, পৃষ্ঠা, ৯৮-১০০।

1 thought on “গাঁদা গুল্ম-এর পাতা ও ফুলের নানাবিধি ভেষজ ব্যবহার”

Leave a Comment

error: Content is protected !!