ভূমিকা: আদা (বৈজ্ঞানিক নাম: Zingiber officinale) জিঞ্জিবারাসি পরিবারের জিঞ্জিবার গণের ছোট রাইজোমসমৃদ্ধ বীরুৎ। এদের রাইজোম সুগন্ধী, ঝাঁঝালো স্বাদ, ভিতরের রং ফিকে হলুদ।
আদা-এর বর্ণনা:
আদা গাছের পত্রল-কান্ড প্রায় ০.৫- ১.০ মিটার লম্বা। আদা গাছের পাতা অবৃন্তক, রেখ-ল্যান্সাকার, দ্বীর্ঘাগ্র, মসৃণ বা অতি রোমশ, নিচে মধ্যশিরা বরাবর, লিগিউল ২৪ মিমি লম্বা, ঝিল্লিবৎ, অগভীরভাবে দ্বিখন্ড। স্পাইক মুলজ, ৪.৫-৭.০ X ২.০-২.৫ সেমি, ডিম্বাকার, মঞ্জরীদন্ড ১০-২০ সেমি লম্বা, খাড়া, ৩-৫ সেমি লম্বা ল্যান্সাকার সীথ দ্বারা আবৃত।
আদার মঞ্জরীপত্র উপবৃত্তাকার, কাসপিডেট, প্রায় ২.৫ x ৩.০ সেমি, সবুজ, কিনারা ক্রীম-হলুদ, নিচেরটি সাধারণত মিউক্রোনেট, ঘনভাবে প্রান্ত-আচ্ছাদী, উপমঞ্জরীপত্র মোটামুটি মঞ্জরীপত্রের সমান, প্রায় ২.৪ সেমি লম্বা কিন্তু অপেক্ষাকৃত চিকন, ঝিল্লিবৎ, পেচানো।
বৃতি স্ফীত, ১০-১২ মিমি লম্বা, ৩-দন্তুর, একপাশ বিদীর্ণ। দলনল ২.২-২.৫ সেমি লম্বা, পাপড়ি ৩টি, ক্রীম-হলুদ, পিঠেরটি প্রায় ২০ x ৮ মিমি, মাথার দিকে ক্রমান্বয়ে সরু। লেবেলাম বিডিম্বাকার, প্রায় ১.৫x১.০ সেমি, গাঢ় বেগুনী, মাঝে মাঝে ক্রীম-হলুদ ছোপ, অগ্র খাঁজকাটা। ষ্টেমিনোড ২, ডিম্বাকার, ৬-৭ X ৩-৪ মিমি, প্রায় নীচ পর্যন্ত মুক্ত।
পুংদন্ড প্রায় ১-২ মিমি লম্বা, পরাগধানী প্রায় ৮.৫ মিমি লম্বা, ক্রীম-হলুদ, ঠোট ৭-৮ মিমি লম্বা, কালচে বেগুনী। গর্ভাশয় ৩.০ x ২.৫ মিমি, মসৃণ, গর্ভমুন্ড ফানেলাকৃতি, কিনারা সিলিয়াযুক্ত, গর্ভাশয় উপরস্থ গ্রন্থি রেখাকার, প্রায় ৫ মিমি লম্বা, মুক্ত। ফুল ধারণ ঘটে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর।
ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২২ (Kumar and Subramanium, 1986).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার: উচ্চভূমিতে চাষ করা হয়। বিস্তৃতি ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় এশিয়ায় ব্যাপক চাষ হয়। বাংলাদেশে এটি সারাদেশেই চাষ হয়। রাইজোম দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক:
রাইজোম উত্তেজক, বায়ু নাশক, হজমকারক, পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক, যৌনশক্তি বর্ধক, রুচিকারক, মূত্র বর্ধক। মনে করা হয় এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, ঠান্ডা, কফ, ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানির প্রতিকার করে। বদহজম, পেটফাঁপা, বমি, খিচুনি এবং পাকস্থলির অন্যান্য যন্ত্রণাময় দেওয়া হয়।
এটি পিত্তরোগ, গলার ঘা, স্বরভঙ্গ এবং বাকশক্তি ব্যবহার হয়। এর রাইজোম একটি জনপ্রিয় মসলা, তরকারী, চাটনি ও অন্যান্য খাবার তৈরীতে ব্যবহার হয়। এর থেকে আচার করা হয় এবং বিভিন্ন পানীয় সুগন্ধী করতে ব্যবহার করা হয়। আদা চিবালে রুচি বাড়ে। আদার ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: লবণসহ আদা চিবালে বায়ুজনিত পেট ব্যথা উপশম হয়। আদা চা ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি এবং গলাব্যথা উপশমে একটি জনপ্রিয় পানীয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আদা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ ও বর্তমানে বিপদের আশঙ্কা নেই এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আদা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ নিপ্রয়ােজন।[১]
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ ইউসুফ, (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৯১-৪৯২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।