বাংলা আদা বা মুরগা গাছ বাংলাদেশ ভারত ভুটানের কন্দজ গুল্ম

আদার প্রজাতি

বাংলা আদা

বৈজ্ঞানিক নাম: Zingiber rubens Roxb. Asiat. Res. 11: 348 (1810). সমনাম: জানা নাই। ইংরেজী নাম: Bengal Ginger. স্থানীয় নাম: বাংলা আদা বা মুরা গাছ বা মুরা আদা বা মুরগা গাছ।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Angiosperms, অবিন্যাসিত: Monocots, অবিন্যাসিত: Commelinids, বর্গ: Zingiberales, গোত্র: Zingiberaceae, গণ: Zingiber, প্রজাতি: Zingiber rubens Roxb.

ভূমিকা: বাংলা আদা বা মুরা গাছ বা মুরা আদা বা মুরগা গাছ বাংলাদেশ, ভারত এবং ভুটানের কন্দজ গুল্ম। বাংলাদেশে গাছটি চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির উদ্ভিদ জিঞ্জিবার গণের রাইজোমসমৃদ্ধ বীরুৎ।

বর্ণনা: বাংলা আদা বা মুরা গাছ বা মুরা আদা বা মুরগা গাছের রাইজোম অনুভূমিক, লম্বা, শাখান্বিত, ভিতরে নীলাভ, অনেক আঁশ সম্পন্ন ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। পত্রল-কান্ড প্রায় ১.০-১.৫ মিটার লম্বা। পাতা অবৃন্তক, চওড়া-ল্যান্সাকার, দীর্ঘাগ্র, ৩০-৬০ X ৭-১০ সেমি, নীচতল হাল্কা রোমশ। লিগিউল প্রায় ২ সেমি লম্বা, অখন্ড বা অগভীর দ্বিখন্ড, লম্বা রোম যুক্ত। কয়েকটি স্পাইক গোড়ায় উৎপন্ন হয় এবং আংশিক মাটিতে প্রবিষ্ট থাকে, স্পাইক আয়তাকার, ৭-৮ সেমি লম্বা, ঢিলাভাবে অনেকগুলি সোজা, রেখ-ল্যান্সাকার, সুক্ষাগ্র, পেঁচানো, লাল মঞ্জরীপত্র দ্বারা টাইল্স এর মত আবৃত, মঞ্জরীদন্ড ৩-৫ সেমি লম্বা, ৩-৪ টি সীথ দ্বারা আবৃত থাকে। বাহিরের মঞ্জরীপত্র রোমশ, লাল, ভিতরের মঞ্জরীপত্র ল্যান্সাকার, পেঁচানো, লাল, রোমশ, প্রতিটি একটি ফুল ধারণ করে, উপ-মঞ্জরীপত্র ডিম্ব-আয়তাকার, ৩.৮ x ০.৯ সেমি, ভাজ করা, অল্প দ্বিখন্ডিত, প্রতি খন্ড আবার খাঁজকাটা, উপরের অংশ লাল, অগ্র লোমশ।

এই প্রজাতির বৃতি সাদা, নলাকার, ৩ দন্তুর, প্রায় ২.৬ সেমি লম্বা, একপাশে অর্ধেকের বেশি বিদীর্ণ, অগ্র এবং গোড়া রোমশ। দলনল ৪.৩-৪.৫ সেমি লম্বা, প্রায় মসৃণ, পাপড়ি ৩টি, প্রায় সমান, সরু, দীর্ঘাগ্র, রক্ত-লাল, উপরের খন্ড ৩.৭ X ০.৭ সেমি, পাশের দুটি ৩.৬ x ০.৫ সেমি, গোড়ায় সংযুক্ত। লেবেলাম চিকন-আয়তাকার, অগ্র অখন্ড, প্রায় ৩x১ সেমি, রক্ত-লাল, দুই পার্শ্ব হলুদ দাগে সুন্দরভাবে সাজানো, আগার দিকে হলুদ ছোপ, নিচের মাঝের অংশ সাদা। ষ্টেমিনোড ২টি, ক্ষুদ্র, লেবেলামের গোড়ার দুই পার্শ্বে থাকে। পুংকেশর লেবেলামের উপর ধনুকের মত বেকে থাকে, পরাগধানী প্রায় অবৃন্তক, কমবেশী ১.৭ সেমি লম্বা, লাল, ঠোট খুব চিকন, উজ্জ্বল লাল, প্রায় ১ সেমি লম্বা। গর্ভাশয় ৪.৫ x ৩.০ মিমি, অতি রোমশ, গর্ভদন্ড বাঁকানো, সিলিয়াযুক্ত। ক্যাপসিউল ডিম্বাকার, তিন কোনাকার, ৩-৪ x ১.৭-২.০ সেমি, ৩-ভাল্ব সম্পন্ন, লাল, ভাল্বের ভিতর উজ্জ্বল লাল। বীজ আয়তাকার থেকে বিডিম্বাকার, ৬-৭ X ৩.৫-৪.০ মিমি, সাদা আঁশময় এরিল দ্বারা আবৃত, সারিবদ্ধভাবে সাজানো। ফুল এবং ফল ধারণ ঘটে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

আরো পড়ুন:  আদা খাওয়ার বহুবিধ উপকারিতা, গুণাগুণ এবং ব্যবহার

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Kumar and Subramanim, 1986).

আবাসস্থল: ছায়াযুক্ত বনতলে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: জানা নাই।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: রাইজোমের মন্ড মাথা ঘুরানি ও ঠান্ডার জন্য মাথায় প্রলেপ দেওয়া হয়।

বংশ বিস্তার: রাইজোম দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।

অন্যান্য তথ্য

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২শ খণ্ডে  (আগস্ট ২০১০)  বাংলা আদা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বন ধ্বংস এদের সংকটের কারণ এবং এটি বাংলাদেশে সংরক্ষণ নির্ভর (cd) প্রজাতি। বাংলাদেশে বাংলা আদা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিগাছটি in-situ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে।   

তথ্যসূত্র:

১. মোহাম্মদ ইউসুফ, (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৯৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!