একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গুল্ম

আদার প্রজাতি

একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা

বৈজ্ঞানিক নাম: Zingiber zerumbet (L.) Smith, Exot. Bot. 2: 105, t. 112 (1806). সমনাম: Amomum zerumbet L. (1753), Zingiber spurium koen, (1783). ইংরেজী নাম: জানা নাই। স্থানীয় নাম: মহাবরি-বচ, একাঙ্গী, বন আদা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Angiosperms, অবিন্যাসিত: Monocots, অবিন্যাসিত: Commelinids, বর্গ: Zingiberales, গোত্র: Zingiberaceae, গণ: Zingiber, প্রজাতি: Zingiber zerumbet (L.) Smith, Exot.

ভূমিকা: একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গুল্ম। এই প্রজাতির বিস্তৃতি ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং শ্রীলংকা পর্যন্ত। বাংলাদেশে গাছটি সারাদেশের বনে এবং গ্রামের জঙ্গলে জন্মায়। এই প্রজাতির উদ্ভিদ জিঞ্জিবার গণের রাইজোমসমৃদ্ধ বীরুৎ।

বর্ণনা: একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা জিঞ্জিবার গণের ভূমিবস্থ কন্দময় রাইজোম এবং বর্ষজীবি পত্রল কান্ডসম্পন্ন বীরুৎ, রাইজোম ভিতরে ফিকে হলুদ। পত্রলকান্ড ০.৬-২.০ মিটার লম্বা। পাতা অবৃন্তক বা প্রায় অবৃন্তক, ২০-৩০ x ৪-৮ সেমি, বল্লমাকার বা উল্টা বল্লমাকার, দীর্ঘাগ্র, নিচে সাধারণত কিছু রোম থাকে, কচি অবস্থায় সিল্কি, লিগিউল ১.৫-৩.০ সেমি লম্বা, ঝিল্লিবৎ, অখন্ড, কিছু বিক্ষিপ্ত রোম সম্পন্ন।

একাঙ্গীর ফুল, আলোকচিত্র: Vinayaraj

একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদার পুষ্পবিন্যাস মুলজ, মঞ্জরীদন্ড ৩০-৭০ সেমি লম্বা, ৪-৬ সেমি লম্বা মঞ্জরীপত্র দ্বারা আবৃত থাকে, হাল্কা রোমশ, অত্র রোমশ, স্পাইক ৭-১২ x ৪-৬ সেমি, ডিম্ব-আয়তাকার, প্রায়ই মাথা গোলাকার। মঞ্জরীপত্র প্রায় ৩.০ x ২.৫ সেমি, সবুজ, ঘনভাবে প্রান্ত-আচ্ছাদী, ডিম্বাকার, অগ্র গোলাকার, মোটামুটি মসৃণ, কিনারা ঝিল্লিবৎ, ফিকে, অতি রোমশ, পরিপক্ক অবস্থায় লাল, উপমঞ্জরীপত্র ২.৯ x ১.৫ সেমি, ডিম্ব-আয়তাকার, দলনলের চারিদিকে পেঁচানো, সাদা, রোমশ। বৃতি স্পেথ সদৃশ, প্রায় ২ সেমি লম্বা, খাটভাবে ৩-দন্তুর, গোড়া রোমশ এবং আগায় কিছু রোম থাকে, একপাশ বিদীর্ণ। দলনল ২.৫- ৩.০ সেমি লম্বা, পাপড়ি ৩টি, সাদা বা হলুদাভ, ২.০-২.৩ সেমি লম্বা, মাথার দিকে সরু। লেবেলাম হাল্কা হলুদ বা ক্রীম রঙের, ৩-খন্ড, মাঝ-খন্ড প্রায় ১.৮ সেমি লম্বা, চওড়া, উপবৃত্তাকার, দ্বিখন্ড, মাঝের অংশ উত্থিত, কিনারা কুঞ্চিত, পার্শ্ব-খন্ড (স্টেমিনোড) গোলাকার বা ডিম্বাকার। পুংদন্ড খুবই খাট, প্রায় ৩ মিমি লম্বা, পরাগধানী প্রায় ১ সেমি লম্বা, ঠোট প্রায় ৭ মিমি লম্বা, বাঁকানো। গর্ভাশয় ৪ x ২-৩ মিমি, মসৃণ, গর্ভাশয় উপরস্থ গ্রন্থি হলুদ, ৩-৫ মিমি লম্বা, রেখাকার, মুক্ত। ফুল ধারণ ঘটে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে।

আরো পড়ুন:  জংলি আদা বাংলাদেশ ভারত নেপাল ও ভুটানের কন্দজ গুল্ম

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Kumar and Subramanim, 1986).

আবাসস্থল: বনের এবং গ্রামের জঙ্গলের হাল্কা ছায়ায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: গাছটি “একাঙ্গি” নামে বাজারে বিক্রি হয়, যা আয়ুর্বেদ ও ইউনানী পদ্ধতির ঔষধ প্রস্তুতে লাগে। ভারতে রাইজোম কফ, পেট ব্যথা, হাঁপানী, কৃমি, কুষ্ঠ এবং চর্মরোগে ব্যবহার হয়। রাইজোমের শুকনো গুড়া ফিলিপাইনে ডায়েরিয়া বিরোধী হিসাবে ব্যবহার হয়। ক্কাথ হাঁপানি এবং বাতের জন্য ব্যবহার হয়। ভারতে বিভিন্ন জীবানুর উপর গাছটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ভাইরাস এবং প্রটোজোয়ার উপর রাইজোমের কার্যকারিতার এবং পাতার মুত্রবর্ধক গুণের প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। রাইজোমে উদ্বায়ী তৈল আছে, যার প্রধান উপাদান zerumbone (৩৫.৪৮%), অন্যান্য প্রধান প্রধান উপাদানগুলি হলো humulene ১৭.২৯% এবং camphene ১৬.০৪% (Oliveros Cantoria, 1982: Prakash and Mehrotra, 1996; Riswan and Setyowati, 1996)।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা কফ এবং ঠান্ডার জন্য এর রাইজোম ব্যবহার করে।

বংশ বিস্তার: রাইজোমের টুকরা দ্বারা সহজেই বংশ বিস্তার করা যায়।

অন্যান্য তথ্য

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২শ খণ্ডে  (আগস্ট ২০১০) একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আপাতত সংকটের কারণ নেই এবং এটি বাংলাদেশে আশংকামুক্ত (lc) প্রজাতি। বাংলাদেশে একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য আশু কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন নাই।   

তথ্যসূত্র:

১. মোহাম্মদ ইউসুফ, (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৯৩-৪৯৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!