পরিচিতি: শিয়াকুল বা শিয়ালকুল বা শেকুল বা জংলী কুল বা বন বরই বা গোট বরই ( বৈজ্ঞানিক নাম: Ziziphus 0enoplia, ইংরেজি: Indian Jujube, Indian Cherry, Green Palm) হচ্ছে রামনাসি পরিবারের জিজিফাস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এদের হিন্দি নাম মকোরা (मकोरा)। চট্টগ্রামে এটি আবার পরিচিত গোট বরই নামে। এটি একটি জংলী প্রজাতি। গাছ দেখতে লতানো গুল্ম প্রকৃতির। এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, কখনও কখনও লতানো, কাঁটা ঝোপঝাড় যারা ১.৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। [১] আরো পড়ুন
আরো পড়ুন কুল বা বরই বেশ কয়েক প্রজাতির উপকারি ভেষজ ফল
আরো পড়ুন কুল বা বরইয়ের ২২টি ভেষজ গুণাগুণ
বিবরণ: শিয়াকুল কন্টকিত বিক্ষিপ্ত ছড়ানো গুল্ম, শাখাপ্রশাখা প্রায় আরোহী। অপরিণত শাখাপ্রশাখা কন্টক রোমশ বা মরিচা ঘন সূক্ষ্ম রোমাবৃত। শিয়াকুলের পাতা সরল, একান্তর, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকার-বল্লমাকার, ভোঁতা দস্তুর-করাতদপ্তর, সূক্ষ্মাগ্র বা অর্ধসূক্ষ্মাগ্র, পাদদেশ তির্যক, ২.৫-৬.৫ x ২.০-২.৫ সেমি, উপরিভাগ কোমল রোমাবৃত, নিম্নে কোমল চাপা রোমশ, গোড়া থেকে ৩-৫টি প্রধান শিরাবিশিষ্ট। এদের কাঁটা একল, সংক্ষিপ্ত এবং পশ্চাৎ বক্র। এদের পাতার বোঁটার কাছে শক্ত ও খাটো কাঁটা থাকে।
শিয়াকুলের পুষ্প উভলিঙ্গ, অবৃন্তক কাক্ষিক সাইম। বৃত্যংশ ৫টি, পাপড়ি দ্বারা আচ্ছাদিত এবং প্রতিমুখ। গর্ভপত্র ২টি, যুক্ত, গভাশয় ২-কোষী, গর্ভদণ্ড ২টি, মধ্যভাগের উপরে যুক্ত। ফুল সবুজ হয়। ফল ড্রুপ, গোলাকার বা বিম্বিকার, কালো এবং চকচকে। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর মাসে।[২] পাকলে ফলের রং হলুদ কিংবা কালো হয়ে যায়। পাকা ফল স্বাদে খুব টক। ফলে শাঁস খুব কম, বিচি বড় এবং একটি মাত্র বীজ থাকে। বনে জঙ্গলে ও পতিত জমিতে জন্মে।[১] ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২০, ৪৮ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: গৌণ বনাঞ্চল। সাধারণত শিয়াকুল আবাদ করা হয় না।
বিস্তৃতি: উষ্ণমন্ডলীয় এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশে বারিন্দ অঞ্চলের অন্তর্গত গৌণ বনাঞ্চলে খুবই সাধারণ।
ঔষধি ব্যবহার: শিয়াকুল এর মূল অতিরিক্ত অম্লতা এবং Ascaris সংক্রমনে ব্যবহৃত হয়। ফল পেটের পীড়ায় ব্যবহৃত হয়। মূলের বাকল ক্ষত পূরণে ব্যবহৃত হয় (Sinha, 1996). এই উদ্ভিদ গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটি স্যান্ডালউড উদ্ভিদের একটি ভালো পোষক (Sengupta and Saful, 1997). জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে দেখা যায় বিভিন্ন জাতির লোকেরা ফল ভক্ষণ করে এবং স্থানীয় জনগণ এটি খায়।[২] উদ্ভিদ সাইক্লোপ্যাপটাইড আলকালাইডস উৎপন্ন করে যা জিজিফাইন নামে পরিচিত এবং একটি ভেষজ ঔষধ হিসাবে ভারতে এদের ব্যবহারে এদের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। শিকড় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ভারতের মহারাষ্ট্রের কোঙ্কানি লোকজন চিবানো পাতাকে জখমের জন্য ড্রেসিং হিসাবে ব্যবহার করে।[১]
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের খণ্ডে ১০ম (আগস্ট ২০১০) শিয়ালকুল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এটির সংকটের কারণ দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটি বিপদমুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে শিয়ালকুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণ প্রয়োজন নেই।[২]
তথ্যসূত্রঃ
১. মৃত্যুঞ্জয় রায়; বাংলার বিচিত্র ফল, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৭, পৃষ্ঠা, ২৫৯।
২. এম. এ. হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১২-১৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।