পরিচয়: ফলের খোসা কাঠের মতো শক্ত বলে ইংরেজিতে বেলকে বলে ‘Wood Apple’ আর বাংলায় ফলটির এত কদর দেখে বিদেশিরাও ওকে ডাকত ‘Bengal quince’ বলে।বেল গাছ বড় ধরনের বৃক্ষ । উচ্চতায় প্রায় ১০ থেকে ১৬ মিটার। শীতে সব পাতা ঝরে যায়, বসন্তে আসে নতুন পাতা। পাতা ত্রিপত্র যুক্ত, সবুজ, ডিম্বাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সঁচাল। ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের। বোঁটা ছোট ৪ থেকে ৫টি পাঁপড়ি থাকে, পুংকেশর অসংখ্য, গর্ভাশয় বিস্তৃত ও কেন্দ্রস্থল খোলা। ফুলে মিষ্টি গন্ধ আছে। ফল বড়, গোলাকার, শক্ত খোসাবিশিষ্ট। ফলের ভিতরে শাঁস ৮ থেকে ১৫টি কোয়া বা খণ্ডে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি ভাগে বা খণ্ডে চটচটে আঠার সাথে অনেক বীজ লেগে থাকে। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায় । ভিতরের শাঁসের রঙ হয়ে যায় কমলা বা হলুদ। পাকা বেল থেকে সুগন্ধ বের হয়। পাকা বেল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। গাছ যখন ছোট থাকে তখন তাতে অনেক শক্ত ও তীক্ষ কাঁটা থাকে। গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায়।
ঔষধি গুণ: দেশি ফলের মধ্যে বেলের মতো পুষ্টিকর আর উপকার অন্যটিতে নেই। পেট গোলমাল হলেই খোঁজ করা হয় বেলের। কাঁচা পাকা দুটোই সমান উপকারী। বেল ডায়রিয়া ও আমাশায়র জন্য ভালো। পাকা বেলের শরবত যেমন মজাদার তেমনি শরীরের জন্য ভাল। বেলের ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পড়ুন
উপাদান: বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মতো মূল্যবান পুষ্টি উপাদান।
ব্যবহার: বেলকে বলা হয় শ্রীফল। কেননা হিন্দুদের পুজা অর্চনায় বেলের পাতা, বেলের ফল লাগেই। বেল কাঠও তাদের কাছে পবিত্র। তারা কখনো বেল কাঠ পুড়িয়ে রান্না করেন না।
বিস্তৃতি: প্রায় সব জায়গাতেই বেল গাছ আছে এ দেশে। তবে তা অনেকটা বসত বাড়ি ও তার আশপাশেই। অথচ এ ফলটিই এখন গুরুত্ব দিয়ে ভাল জাতের বড় বড় বেল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে থাইল্যান্ড ও ভারতে। তারা রপ্তানিও করছে। চাষ হচ্ছে পাকিস্তান ও মায়ানমারেও। অনেক দেশে বেল চাষ করা হচ্ছে আয়ুর্বেদ শিল্পের কাঁচা মাল হিসেবে। সেসব সম্ভাবনা এ দেশেও আছে। একটি পূর্ণফলধারী বেল গাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকার বেল বিক্রিও সম্ভব।
চাষাবাদ: গাছ এত কষ্ট সইতে পারে যে কোনো মতে সে একটু দাঁড়াবার জায়গা পেলেই ফল নিয়ে হেসে উঠবে। এমনকি নিচু জলাভূমিতেও বেলের গাছ দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তেমনি চুনা বা ক্ষারীয় মাটিও বেলের জন্য সমস্যা না। তবে সবচেয়ে ভাল হয় দোঁয়াশ মাটিতে।
তথ্যসূত্রঃ
১. মৃত্যুঞ্জয় রায়; বাংলার বিচিত্র ফল, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৭, পৃষ্ঠা, ২৮০-২৮১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।