আঁকুরা-এর বর্ণনা:
ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ, প্রশাখার সর্বত্র জুড়ে ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, কখনও কণ্টক-শীর্ষ। পত্র সরল, ১৪.০ X ২.৫ সেমি, খর্ব, সবৃন্তক, আয়তাকার-বল্লমাকার, অর্ধচর্মবৎ, নিম্নাংশ থেকে ৩-৫টি শিরাবিশিষ্ট। পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক গুচ্ছ সাইম। পুষ্প প্রায় ১.৫ সেমি প্রশস্ত, সবৃন্ত, উভলিঙ্গ, গর্ভশীর্ষপুষ্পী, সাদা, মিষ্টি গন্ধযুক্ত। বৃতি ৫-১০টি বৃত্যংশযুক্ত, তলীয় অংশে যমক, পেয়ালাকৃতি নল গঠন করে, গর্ভাশয়ের লগ্ন, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, ত্রিভূজাকৃতি-ডিম্বাকার। দলমণ্ডলে ৫-১০ টি দল, দল ২.৫ x ০.২ সেমি, রৈখিক-আয়তাকার, পুষ্পেদগমের পর বাঁকানো, চাকতি স্পষ্ট।
পুংকেশরের সংখ্যা সাধারণত দলের দ্বিগুণ বা কখনও বেশী, পুংদন্ড ১ সেমি দীর্ঘ, নিম্নাংশে অতিরোমশ, যমক, পরাগধানী ১ সেমি দীর্ঘ, অনুদৈর্ঘ্য চীড় দ্বারা উন্মুক্ত। গর্ভাশয় অধোবর্তী, একপ্রকোষ্ঠী, ডিম্বক ১টি, দোলকী, গর্ভদণ্ড দীর্ঘ, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার। ফল ১-বীজবিশিষ্ট বেরী, বৃত্তাকার, পরিপক্ক অবস্থায় লাল বা কালো। বীজ ডিম্বাকার।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২২ (Kumar and Subramaniam, 1986)
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার: আঁকুরা গাছটি সমতল এবং পর্ণমোচী অরণ্যে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারী-জুন মাসে ধরে। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলংকা, টান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে ইহা সাধারণভাবে ঢাকা ও এর সংলগ্ন এলাকা এবং চট্টগ্রাম বনাঞ্চলে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
মূল ঝাঁঝালো তিক্ত, কৃমিনাশক, অল্টারেটিভ, বাতবিসর্প রোগের নিরাময়ক, পিত্তদুষ্টতা এবং প্রদাহের নিরাময়ক। এর রস বমনোদ্রেকর, ইলেক্সিফার্মিক, ফল মিষ্টি, রেচক, কফ নিঃসারক, বায়ুরোগহর এবং কৃমিনাশক, এর কাজে বাকল অতিশয় তিক্ত বা ইপোপুয়ানহা এর একটি ভাল বিকল্ক (Kirika at al., 1935)। পত্র, মূল ও বীজে বিভিন্ন উপক্ষার রয়েছে, যেমন আনকোরান, মারকিডাইন, মারকাইন টিউবলেসাইন, এ্যালানজিসাইন, সিফাইলাইন, সাইট্রেইন প্রভৃতি এবং স্টেরয়েডস ট্রাইটারপেনয়েডস (Ghan, 2003).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বোম্বেতে বাতজনিত ব্যথা প্রশমনে পুলটিস হিসেবে ইহার পাতা ব্যবহার করা হয়। ভারতের ছোট নাগপুরে মুণ্ডা জাতির আদিবাসীরা অজীর্ণ এবং গেঁটেবাত জাতীয় রোগের বিশোধক হিসেবে এর মূল ব্যবহার করে (Kirtikar et al., 1935)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আঁকুরা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আঁকুরা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির আবাসস্থল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ৮৬-৮৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।