ভূমিকা: শিল কড়ই বা শীল কড়ই বা মটর কড়ই (বৈজ্ঞানিক নাম: Albizia lucidior) এশিয়ায় জন্মানো উপকারি সপুষ্পক বৃক্ষ। পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মে; গাছের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র, গৃহ নির্মান হয়।
বর্ণনা: শিল কড়ই অর্ধচিরহরিৎ বৃক্ষ, ৮-১৮ মিটার উঁচু, ছড়ানো চূড়াবিশিষ্ট। বাকল প্রায় মসৃণ, ধূসরাভ থেকে গাঢ় বাদামী, আনুভূমিকভাবে কুঞ্চিত এবং কর্ক সদৃশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি দ্বারা আবৃত। কচি বিটপ এবং পুষ্পমঞ্জরী রেশমী ও বাদামী রোমে আবৃত।
পাতা দ্বি-পক্ষল যৌগিক, পত্রাক্ষ ৪-১২ সেমি লম্বা, পত্রবৃন্তের গোড়ায় একটি প্রলম্বিত উপবৃদ্ধি বর্তমান এবং প্রায়ই প্রান্তীয় পক্ষদ্বয়ের পাদদেশের মাঝখানে অন্য একটি উপবৃদ্ধি বর্তমান, পক্ষ ১ জোড়া, কদাচিৎ ২ জোড়া, ৪.০-৮.৫ সেমি লম্বা, সর্ব উপরের পত্রক জোড়ার পাদদেশে সচরাচর একটি উপবৃদ্ধি বর্তমান, পত্রক ২-৩ জোড়া, ৫-১০ x ১.৮-৪.৫ সেমি, উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত বা দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার, অখন্ড, শীর্ষ ভোতা দীর্ঘাগ্রবিশিষ্ট, নিম্নপ্রান্ত তির্যক কীলকাকার বা গোলাকার, মসৃণ, উপরের পৃষ্ঠ চকচকে এবং গাঢ় সবুজ, নিম্নপৃষ্ঠ ফেকাশে সবুজ, পাতলা কাগজবৎ, প্রান্তীয় পত্রক জোড়া সর্বদা নিচের পত্রক জোড়া থেকে বৃহদাকার।
পুষ্পমঞ্জরী প্রান্তীয় ছত্রমঞ্জরীবৎ বা সমভূমঞ্জরীবৎ বা মঞ্জরীদন্ডক শিরবিশিষ্ট যৌগিক মঞ্জরী, মঞ্জরীদন্ড ১.৮-৩.০ সেমি লম্বা, ২ বা ততোধিক মঞ্জরীদন্ড একসাথে একটি গুচ্ছে, সরু, মসৃণ, প্রতিটি শির ৬-১০টি পুষ্পের সমন্বয়ে গঠিত। পুষ্প দ্বি-রুপী, ৫-গুণিতক, ননীবৎ সাদা থেকে হলুদাভ সাদা, প্রায় অবৃন্তক।
বৃতি যুক্তবৃতি, ৪৫ মিমি লম্বা, ঘন্টাকার থেকে সরু চোঙাকতির, দন্তক ৫টি, অতি খর্ব, ১.৫ মিমি থেকে কম লম্বা, অস্পষ্ট, বাইরে অণুরোমশ। দলমন্ডল যুক্তদল, ৪.৫-৬.০ মিমি লম্বা, চুঙ্গিআকৃতির, খন্ডাংশ ৫টি, ১.৫-২.৫ মিমি লম্বা, ভল্লাকার, তীক্ষ, ঝিলিময়, বাইরের পৃষ্ঠ বাদামী রেশমী।
পুংকেশর একগুচ্ছীয়, পুংদন্ডের সংখ্যা ১৫টি পর্যন্ত হতে পারে, ২.০২.৫ সেমি লম্বা, ফিকে হলুদ, তুরপুন আকার, শেষ মাথায় গাঢ় লাল বর্ণের একটি চক্র বর্তমান, পরাগধানী ক্ষুদ্র, দ্বিখন্ডিত, পুংকেশরীয় নল ৪ মিমি (প্রায়) লম্বা। গর্ভাশয় প্রায় অবৃন্তক, মসৃণ, গর্ভদন্ড ২.৫-৩.০ সেমি লম্বা, মসৃণ।
ফল পড, ১৫-১৮ x ৩.৫ সেমি, চেপটা, রৈখিক-দীর্ঘায়ত, সোজা, উভয়প্রান্ত ক্রমসরু, নমনীয়, লালচে বাদামী এবং বীজের উপরিভাগে বৃত্তাকার চিহ্ন লক্ষণীয়, বিদারী। বীজ প্রতি পডে ৬-৮টি, ১০ মিমি (প্রায়) ব্যাসবিশিষ্ট, ১.৫ মিমি (প্রায়) পুরু, বর্তুলাকার, চেপটা, উভয়পৃষ্ঠ উত্তল, প্লিউরোগ্রামসহ অ্যারিওল বীজের কিনারার সাথে সমান্তরাল।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৬ (Bir and Kumari,1980).
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: চিরহরিৎ অরণ্য থেকে শুষ্ক পত্রঝরা অরণ্য, প্রায়শই বনের মধ্যে পরিষ্কৃত ভূমিতে জন্মে। এছাড়াও প্রজাতিটি পার্বত্য বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল-অক্টোবর। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: আদি নিবাস হিমালয় পর্বতমালার ছোট ছোট পাহাড়, আসাম, মায়ানমার, চীন, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়ায় বিস্তৃত। বাংলাদেশে ইহা সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার পাওয়া যায়। ইহা কখনও কখনও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর গ্রাম-গঞ্জেও দেখা যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ইহার কাঠ শক্ত এবং টেকসই এবং আসবাবপত্র নির্মাণের উপযোগী, কাঠ ভাল মসৃণ হয়। ইহার কাঠ অবকাঠামো নির্মাণ ও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: থাইল্যান্ডে বৃক্ষটি রেশম পোকার পোষক উদ্ভিদ হিসেবে চাষ করা হয় (Nielsen, 1985).
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শিল কড়ই প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মাত্রাতিরিক্ত আহরণের জন্য বর্তমানে ঝুঁকির মুখে এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে শীল কড়ই সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির জন্য স্ব-স্থানে এবং স্ব-স্থানের বাইরে উভয় ধরনের সংরক্ষণ ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ১৬২-১৬৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
ছবিটি নেওয়া হয়েছে ফেসবুকের ”বাঙলার গাছ-গাছড়া (Banglar gach-gachra)” গ্রুপ থেকে। আলোকচিত্রীর নাম: Ahsan Habib
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।