ভূমিকা: আতা বা নোনা আতা হচ্ছে এনোনাসি পরিবারের সপুষ্পক একটি উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি ফল গাছ হিসাবে লাগানো হয়ে থাকে।
আতা নোনা বা আতা-র বর্ণনা:
নোনা আতার ছোট বৃক্ষ আকৃতির গাছ। এদের কাণ্ড মসৃণ, কচি শাখাসমূহ রোমশ, উচ্চতায় ১.২ থেকে ১.৫ সেমি লম্বা। পত্রবৃন্ত সহ পত্র, পত্রফলক দৈর্ঘ্য ১৩.৫-১৭.০ ও প্রস্থ ২.৫-৪.৫ সেমি লম্বা, বল্লমাকার থেকে বিবল্লমাকার, তলীয় অংশ গোলাকার থেকে কীলকাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ, উপরিভাগ মসৃণ, তলীয় পৃষ্ঠ অল্প পরিমানে বিক্ষিপ্ত রোমশযুক্ত, কচি পাতার উভয় পৃষ্ঠ রোমশ।
আরো পড়ুন: আতা বা নোনা আতার ঔষধি গুণাগুণ
পুষ্পবিন্যাস পত্র-প্রতিমুখ বা একস্ট্রা-এ্যাক্সিলারী, সাধারণত ২-৩টি পুষ্প বিশিষ্ট, কখনও কখনও শাখা বিশিষ্ট। মঞ্জরীপত্র আশুপাতী, মঞ্জরীপত্রিকা ব-দ্বীপ সদৃশ, প্রায় পুষ্পবৃন্তিকার মাঝামাঝি পর্যন্ত ঘন রোমশ। পুষ্পবৃন্তিকা ২.৫-৩.০ সেমি লম্বা, সাধারণত দোলকী।
বৃত্যংশ স্পষ্টতঃ ব-দ্বীপ সদৃশ তলীয়ভাবে যমক, কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত। দলসমূহ ৬টি, ২ স্তরে সজ্জিত, বহির্দেশীয় দলসমূহ ১৭-১৯ x ০.৬-০.৭ সেমি, ডিম্বাকার, ত্রিকোণাকৃতি, স্থূলাগ্র, অন্তঃস্থলে তলীয়ভাবে যমক, অধিকতর নিকটবর্তী দলসমূহ অতি ক্ষুদ্র বা অনুপস্থিত। পুংকেশর বহু সংখ্যক, ১-২ মিমি লম্বা, রৈখিক, পুংদণ্ডের দৈর্ঘ্য পরাগধানীর অর্ধেক, সংযোজক শীর্ষ গোলাকার। গর্ভপত্র বহু সংখ্যক, নিম্নাংশে যমক, গর্ভাশয় কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত, গর্ভমুণ্ড দীর্ঘায়িত।
নোনা আতার ফল ১০-১৫ x ৭.৫-১২.৫ সেমি, অর্ধ-গোলাকার থেকে ঈষৎ হৃৎপিন্ডাকার, প্রায় মসৃণ, অ্যারিওল দৃশ্যমান জালিকাকার বা গুটিকাকার কপাটিকা দ্বারা পৃথককৃত, পরিপক্ক অবস্থায় লালচে-বাদামি, আঁশালো অংশ সাদা বা ক্রীম রং, সুগন্ধ যুক্ত, দানাদার, বীজের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। বীজ মসৃণ, কৃষ্ণবর্ণ। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৪, ১৬ (Fedorov, 1969)। আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমতল অঞ্চল। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি:
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আমেরিকায় দেশজ কিন্তু বিশ্বের সমগ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এর ব্যাপক চাষ করা হয়। বাংলাদেশে ইহা বসত বাড়ীর বাগানের সাধারণ ফল এবং সমগ্র দেশজুড়ে পাওয়া যায়।
খাদ্য উপাদান:
পরিপক্ক ফল মিষ্টি এবং খনিজ, আঁশ আমিষ, ফ্যাট, শর্করা, ক্যালসিয়াম, আয়রন, কেরোটিন, ভিটামিন বি-2 এবং ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস।
আতার ঔষধি ব্যবহার:
ফলের কোমল ও রসালো আর্শালো অংশ প্রায়শই আইসক্রীম এবং শরবত এ ব্যবহার করা হয়। ফলের কোমল ও রসালো এবং আশালো অংশ ডায়রিয়া ও আমাশয় এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। ফল এবং বাকল এর নির্যাস ভালো কৃমিনাশক। পাতা টিউমার এর প্রদাহ প্রশমনে ব্যবহার করা হয়। বাকল একটি শক্তিশালী সংকোচক। বীজ এর নির্যাস বিষাক্ত, কীটনাশক গুণসম্পন্ন এবং উকুন নির্মূলে কার্যকর।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: কাণ্ডের বাকল মাঝে মাঝে জোড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) টক আতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে টক আতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৩৫-১৩৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।