ভূমিকা: ক্ষুদিজাম (বৈজ্ঞানিক নাম: Antidesma ghaesembilla) হচ্ছে এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের উদ্ভিদ। ফল হিসাবে খাওয়া যায়। গাছের পাতা ভেষজ ঔষধ হিসাবে বেশ কার্যকরী।
ক্ষুদিজাম-এর বর্ণনা:
পর্ণমোচী গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ, প্রায় ৮ মিটার উঁচু, ছোট শাখা ঘনক্ষুদ্র কোমল বাদামী রোমাবৃত। পত্র প্রশস্ত, দীর্ঘায়ত, ৪-১০ x ২-৬ সেমি, স্থূলাগ্র, মূলীয় অংশ গোলাকার বা অর্ধ-তাম্বুলাকার নিচের পৃষ্ঠ অণুরোমশ বা ঘনক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, বৃন্ত ০.৬-১.৫ সেমি লম্বা, মরচে রোমাবৃত।
পুষ্প বিন্যাস স্পাইক, ৩-৭ সেমি লম্বা, প্রচুর শাখায়িত, রোমশ। পুষ্প অবৃন্তক। পুংপুষ্প সরু, বৃতি গভীর ৫ খন্ডিত, ক্ষুদ্র; পুংকেশর ৪-৫টি, পুংদন্ড ০.৫ মিমি লম্বা, অতিশয় সরু, পরাগধানী ০.৩ মিমি লম্বা, ব্যাস বিশিষ্ট, শুষ্ক অবস্থায় কালো। স্ত্রী পুষ্পের বৃন্ত খাটো, ০.৮ মিমি লম্বা, গর্ভাশয় রোমশ। ফল ৪ মিমি লম্বা, অর্ধগোলাকার, রোমশ বিহীন, ১-বীজী, গাঢ় বেগুনি লাল।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
এই প্রজাতি বনাঞ্চলের পরিবেশে ভালো জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারি-মে মাস। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়। বিস্তৃতি: কম্বোডিয়া, মালয় ও ভারত। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাকল সঙ্কোচক ও টনিকরূপে ব্যবহৃত। পাতা চূর্ণ করে সদ্যজাত শিশুদের ওপর প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া ডেঙ্গু বা ঠান্ডায় আক্রান্ত ছোট ছেলে মেয়েদের মাথায় পাতাচূর্ণ ব্যবহার করা হয়। বাকল সহ কাষ্ঠ ও তরুণ কান্ড রক্তস্রাব নিরাময়ে উপকারী।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় গাছের পাতা ফোড়া সারানোর ভেষজ ওষুধরূপে এবং ফল বায়ুরোগে ওষুধ রূপে ব্যবহার করে।
সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায় ছাগলের পাকস্থলীর পীড়ায় লবণসহ ফলের ক্বাথ ব্যবহার করে। কম্বোডিয়ায় বাকল, পাতা এবং কাঠ ভেষজ ওষুধ রূপে প্রচলিত।
ক্ষুদিজাম-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ক্ষুদিজাম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে ক্ষুদিজাম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৩৯৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।