কেচুয়ান দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ

উদ্ভিদ

কেচুয়ান

বৈজ্ঞানিক নাম: Aporosa aurea Hook. f., Fl. Brit. Ind. 5: 351 (1887). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: কেচুয়ান। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Angiosperms.অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Malpighiales. পরিবার: Phyllanthaceae. গণ: Aporosa, প্রজাতি: Aporosa aurea.

ভূমিকা: কেচুয়ান (বৈজ্ঞানিক নাম: Aporosa aurea) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এই গাছ জন্মে। আসবাব তৈরিতে এর কাঠ ব্যবহৃত হয়।

কেচুয়ান-এর বর্ণনা:

এই প্রজাতি ছোট থেকে মধ্যম আকৃতির বৃক্ষ। উচ্চতার দিক থেকে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। দেখতে রোমশ বিহীন, শাখা সাদা বা ধূসর।

গাছের পাতা সরল, ডিম্বাকার থেকে উপবৃত্তাকার ৬-২৫ x ২.০-৯.৫ সেমি, কাগজবৎ, শুষ্ক অবস্থায় হলুদ থেকে সবুজাভ, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র থেকে তীক্ষ্ণাগ্র;

মূলীয় অংশ গোলাকার থেকে সূক্ষাগ্র, মূলীয় গ্রন্থি সুস্পষ্ট, কালচে, প্রান্ত অর্ধ অখন্ড, প্রান্তীয় গ্রন্থি বিরল, চাকতি সদৃশ গ্রন্থি স্বল্প সংখ্যক, পার্শ্বীয় শিরা প্রতি অর্ধাংশে ৮-১২ টি;

বৃন্ত ০.৭-৩.৫ সেমি লম্বা, বৃক্কাকার, স্ফীত পত্রাধার সুস্পষ্ট, উপপত্র ত্রিকোণাকার, ৪-৫ x ২-৩ মিমি, আশুপাতী।

পুষ্পবিন্যাস অক্ষীয়। পুং পুষ্পবিন্যাস ২-৭টি একত্রে বিন্যস্ত, ১০.০-১৮.৫ x ১.৫-২.০ মিমি, রোমশ, মঞ্জরীদন্ড অনুপস্থিত, মঞ্জরীপত্র ত্রিকোণাকার, ০.৬-১.০ মিমি লম্বা, মঞ্জরী অক্ষে পুষ্প ৮-১০টি।

পুংপুষ্প ০.৬-১.০ মিমি লম্বা, সুগন্ধী, অবৃন্তক, বৃত্যংশ ৪টি, বিডিম্বাকার ১.০১.৫ মিমি লম্বা, বন্ধ্যা গর্ভকেশর অনুপস্থিত।

স্ত্রী মঞ্জরী ১-৩ টি একত্রে, ২-৪ মিমি, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, পুষ্প প্রায় ৫টি। স্ত্রী পুষ্প ১.৮-২.৫ মিমি, বৃন্ত ক্ষুদ্র, রেশমি, বৃত্যংশ ৪টি বা ৫টি, ডিম্বাকার থেকে উপবৃত্তাকার, ছড়ানো, ০.৭-১.২ মিমি লম্বা।

পাপড়ি অনুপস্থিত, গর্ভাশয় ২ কোষী, রোমশ বিহীন, গর্ভদন্ড অনুপস্থিত, গর্ভমুন্ড ০.৪-০.৫ মিমি লম্বা, ২-খন্ডিত।

ফল গোলাকার, ৮-১১ x ৮-১১ মিমি, গাঢ় তাম্রবর্ণ, বৃন্ত বিহীন, শুষ্ক অবস্থায় বাদামী থেকে কালো, রোমশ বিহীন, রসালো নয়। বীজ ৭ মিমি ব্যাস যুক্ত, কমলা বর্ণ।

আরো পড়ুন:  কালকেয়া বা কেলেওকড়া উদ্ভিদের সাতটি ভেষজ গুণাগুণ

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

প্রাথমিক চিরহরিৎ, মিশ্র পর্ণমোচী, গৌণ ও বিশৃঙ্খল অরণ্য এবং অরণ্যের কিনারা। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী। বীজ থেকে বংশ বিস্তার।

কেচুয়ান-এর বিস্তৃতি:

ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয় পেনিনসুলা ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

অতিশয় কটুফল কাচা খাওয়া হয়। কাষ্ঠ গৃহের আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

সাপের বিষের প্রতিষেধক রুপে ব্যবহার করা হয়।

কেচুয়ান-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কেচুয়ান প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের জন্য এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে কেচুয়ান সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রজাতিটির বিস্তৃতি জানা জরুরি।

এটি যাতে বিলুপ্ত না হয় সে বিষয়ে যত্ন নেয়া আবশ্যক। যথাস্থানে এবং যথাস্থানের বাইরে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৩৯৬-৩৯৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি http://crassa.cocolog-nifty.com থেকে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!