সুপারি গাছ চাষ, পরিচর্যার এবং সংগ্রহ পদ্ধতি

সুপারি গাছ ( Areca Catechu ) বেশ শক্ত, সরু ও লম্বা; নারিকেল গাছের মতো শাখা-প্রশাখাহীন গাছি। তবে বাঁশের মতো মোটা হয়। লম্বায় সচরাচর ৮ বা ১০ মিটার হলেও অনেক ক্ষেত্রে ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। নারিকেল পাতার মতো পত্রদণ্ডের পরস্পর বিপরীত দিকে পত্রকগুলো থাকে এবং লম্বায় ৫০-৬০ সে. মি. পর্যন্ত হয়; আর পত্রদন্ড লম্বায় ২/৩ মিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। পুষ্পদণ্ডও প্রায় নারিকেলের পুষ্পদণ্ডের মতো বা বহু শাখা-প্রশাখা বিভক্ত পুষ্পমঞ্জরিসম্পন্ন। প্রতিটি মঞ্জরির গোড়ায় ৩৫০টি স্ত্রী ও আগায় প্রায় ৪৮,০০০ পুরুষ ফুল থাকে। ফল (সুপারি) কাচা অবস্থায় সবুজ ও পাকা অবস্থায় গাঢ় হলুদ বা কমলা রং ধারণ করে। সুপারি গাছের বর্ণনা দিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- সারি দেওয়া সুপারির আন্দোলিত সঘন সবুজে জোনাকি ফিরিতেছিল অবিশ্রান্ত কারে খুঁজে খুঁজে।

বিস্তৃতি:

বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই সুপারি গাছ কমবেশি দেখা যায়। চট্টগ্রাম, সিলেট ও উপকূলীয় জেলাসমূহে সুপারি ভালো জন্মে। সুপারির কয়েকটি জাত আছে। চট্টগ্রাম, টেকনাফ অঞ্চলে চাষ হয় A. triandre– যা দেখতে লাল বর্ণের। সিলেট অঞ্চলে ভালো হয় A. gacilis জাতের সুপারি। এ জাতের গাছে বছরে প্রায় সব সময় ফুল ও ফল হয়। মালয়েশিয়া বা ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ সুপারির আবাসভূমি বলে ধরে নেওয়া হয়। Areca গণে প্রজাতির সংখ্যা ৫৪।[১]

সুপারি গাছ-এর চাষাবাদ:

ভারতের উষ্ণ-প্রধান অঞ্চল সমূহের প্রায় সর্বত্রই এটির চাষ হয়ে থাকে; এমনকি ৩০০০ ফুট উচুতে পর্যন্তও চাষ হয়। তবে স্থানে স্থানে এর বাড়-বন্ধি বেশী, কোথাও আবার খুবই কম। সাধারণতঃ অল্প লোনা বেলে মাটিতে এটির বাড়-বাড়ন্ত, এবং অধিক ফলনের পক্ষে অনকল। বাংলায় এটির চাষ হলেও পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে পূর্ববঙ্গ ও উত্তরবঙ্গে বেশী হয়। ৭ থেকে ৮ বছরের গাছ না হলে ফল হয় না, ফল হওয়া আরম্ভ হলে তারপর ৮/১০ বছর ভাল ফল হয়, তারপর থেকে ফলন কমতে থাকে।[২]

আরো পড়ুন:  জগতমদন দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ গুল্ম

বীজ সংগ্রহের সময় অক্টোবর-ডিসেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ)। বীজ আহরণ ও চারা উত্তোলন। সাধারণত মে-জুন মাসে সুপারি গাছে ফুল ধরে ও অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে। ফল পাকলে গাছ থেকে আহরণ করে ১৫ সে.মি. দূরত্বে ৫ সে.মি. গর্তে মুখ। উপরের দিকে রেখে বীজতলায় বপন করতে হয়। বীজ বপনের পর বীজতলায় ছায়া ও পানি সিঞ্চনের প্রয়োজন। সাধারণত ৫০ দিনে চারা গজায়।[১]

তথ্যসূত্রঃ

১. অবনীভূষণ ঠাকুর: ‘ভেষজ উদ্ভিদ ও লোকজ ব্যবহার’, অবসর প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০০৯, পৃষ্ঠা, ৬৩-৬৫।

২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৩২-৩৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!