বর্ণনা: কাঁঠাল মোরাসি বা তুঁত পরিবারের আর্টোকারপাস গণের একটি মাঝারি থেকে বৃহদাকার, অর্ধ-চিরহরিৎ বৃক্ষ। উদ্ভিদটির কোনো অংশ কর্তিত হলে সাদা বর্ণের আঠালো তরুক্ষীর নিগর্ত হয়। উপপত্র বৃহৎ, ১.৫-৮.০ x ০.৫-৩.০ সেমি, ডিম্বাকার-তীক্ষ, পাতী। পাতা সরল, একান্তর, বৃন্তক, চর্মবৎ, ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকর থেকে উপবৃত্তাকার, ৫-২৫ X ৩-১২ সেমি, নিম্নপ্রান্ত কীলকাকার, কিনারা অখন্ড, শীর্ষ স্থূলা, গোলাকার এবং খর্বাকার সূচালো অগ্রভাগবিশিষ্ট, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ এবং নিম্নপৃষ্ঠ ফ্যাকাশে সবুজ। স্ত্রী এবং পুং পুষ্পমঞ্জরী একই উদ্ভিদ থেকে জন্মায়।
স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী সচরাচর প্রধান কান্ড ও বয়ষ্ক শাখা থেকে উত্থিত বিশেষ ধরনের পার্শ্বীয় এবং খর্বাকার পত্রবহুল বিটপের কক্ষ থেকে জন্মায়। পুং পুষ্পমঞ্জরী আকৃতিতে খর্ব, সচরাচর উপরের এবং খর্ব শাখা থেকে জন্মায়। পুষ্পেদগমের পরে পুং পুষ্পমঞ্জরী কালো বর্ণ ধারণ করে এবং ঝরে পড়ে। মাছি, গোবুরে পোকা অথবা বায়ু দ্বারা পরাগায়ন ঘটে থাকে। স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর পুষ্পগুলো নিষেকের পরে সম্পূর্ণ পুষ্পমঞ্জরিটি ফলে পরিণত হয় এবং ৩-৫ মাস পরে পরিণত হয়। ফল পিপা অথবা নাশপাতি আকৃতির, ৩০-১০০ x ২৫-৫০ সেমি, বাইরের পৃষ্ঠ খর্বাকার আঁচিল বিশিষ্ট এবং ভেতরে একটি কেন্দ্রীয় ধারক বর্তমান। কাঁঠাল-এর ফুল ও ফল ধারণ ঘটে ফেব্রুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত।
অন্যান্য নাম: কাঁঠালের পর্যায়িক নাম- মহাসর্জ, ফলিন, স্থূল, কন্টাফল, মূল ফলদ, অপুষ্পফলদ, পূতফল, কণ্টকিফল, আমাশয় ফল। বিভিন্ন ভাষায় এর নাম- হিন্দিতে কটহল; গুজরাটে- ফনস, উড়িষ্যায়- পনস; সাঁওতাল- কাণ্ঠার; ইংরেজি- Jack fruit.
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৫৬ (Verheij and Coronel, 1992).
আবাসস্থল: সুনিষ্কাশিত উচ্চভূমি, জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
বিস্তৃতি: আদিনিবাস খুব সম্ভবত ভারতের ওয়েষ্টার্ণ ঘাট। পরবর্তীতে ইহা অধিকাংশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান দেশসমূহে ও গ্রীষ্মমন্ডলের অন্যান্য স্থানে প্রবর্তিত এবং দেশ্যভূত। বাংলদেশে প্রজাতিটি সারাদেশে সহজ প্রাপ্য নীচু অঞ্চলের বন্যাপ্রবণ এলাকা ব্যতিত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: সুগঠিত কচি ফল (স্থানিয় নাম ইচর) সজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়, পাকা ফলের পাল্প টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়, কখনও নানান ধরনের সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করা হয়। বীজ সজি হিসেবে রান্না করে, সিদ্ধ এবং ভেজে খাওয়া হয়ে থাকে। ফলের বাকল একটি উত্তম গো-খাদ্য। অন্যান্য জীব-জন্তুও ইহা খেয়ে থাকে। পাকা ফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপাযোগী পাল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমান শর্করা (১৮৩৮ মিগ্রা), ক্যালসিয়াম (২২-৩৭ মিগ্রা), ফসফরাস (১৮৩৮ মিগ্রা), লৌহ (০.৪-১.১ মিগ্রা), পটাশিয়াম (৪০৭ মিগ্রা) এবং ভিটামিন-এ (১৭৫-৫৪০ আই ইউ) বর্তমান।
সার কাঠ অত্যন্ত মজবুৎ, হলুদ এবং উঁইপোকা প্রতিরোধী, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার পচনরোধী, ভাল পলিশ নেয় এবং আসবাবপত্রের জন্য খুবই উপযোগী। করাতের গুঁড়া থেকে এক প্রকার হলুদ রং নিষ্কাশন করা হয় যা রেশমী ও সুতার কাপড় রঙিন করতে ব্যবহৃত হয়। পাকা ফল পুষ্টিকর এবং রেচক, কাঁচা ফল কোষ্ঠবদ্ধতাকারী, পাকস্থলীর বায়ুনাশক এবং বলবর্ধক। পাতা ভষ্ম আলসার নিরাময়ে উপকারী এবং কচি পাতা চর্মরোগ, অ্যাজমা এবং ডায়ারিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় (Ghani, 2003).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: গ্রামাঞ্চলে কাঁঠাল গাছের তলা থেকে শুষ্ক পুষ্পমঞ্জরী (অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুং পুষ্পমঞ্জরী) সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়ে ছাইয়ে পরিণত করে ঐ ছাই ডিটারজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাতা ছাগলের একটি প্রিয় খাদ্য। পরিণত ফলের সাদা তরুক্ষীর দ্রব্যাদি জোড়া দিতে ব্যবহৃত হয়।
বংশ বিস্তার: বীজ দ্বারা। অঙ্গজ জনন অতি দুস্কর। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বংশবিস্তার পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়েছে। প্রজাতিটির সংকটের কারণ: কোনো বিপদ নেই।
সংরক্ষণ ও বর্তমান অবস্থা: আশংকা মুক্ত (lc).
গৃহিত পদক্ষেপ: সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপ: বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান, (আগস্ট ২০০৯)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৯৮-১৯৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।