চা পানের বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা

চা গাছ বা চিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Camellia sinensis, ইংরেজি নাম: Tea Plant) হচ্ছে সপুষ্পক একটি গুল্ম আকারের সবুজ উদ্ভিদ। এটির পাতা থেকে উৎপন্ন চাপাতি জনপ্রিয় পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চা শুধু বাঙালিরই নয় সারা ভারতেরই জাতীয় পানীয় হয়ে গেছে আজকাল। শুধু ভারতীয় কেন সারা পৃথিবীরই প্রিয় পানীয় এই চা-কে বিশ্বপানীয় আখ্যা দিলেও ভুল হবে হবে না। চা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

চা-এর উপাদানের অপকারিতা:

১. চায়ে আছে ক্যাফিন, ট্যানিন আর উদ্বায়ী তেল। চায়ের পাতা থেকেও তেল বের করা হয়। এই তেল ওষুধে ব্যবহার করা হয়। অনেকের মতে ক্যাফিন ও ট্যানিন শরীরে বিষের কাজ করে। চা থেকে যে সুগন্ধিত তেল হয় তা অনিদ্রা রোগ উৎপন্ন করে। চা প্রাকৃতিক স্থিতির বিরুদ্ধাচরণ করে বুক ধড়ফড়ানি বাড়িয়ে দেয়।

২. ফোটানো চায়ে ট্যানিক অ্যাসিড বেশি মাত্রায় থাকে। ট্যানিক অ্যাসিড যকৃৎ (লিভারের) স্রাবের ক্ষতি করে, রক্তবাহিনী ধমনী শক্ত করে দিয়ে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত করে। বিশেষত কম দামের বেশিবার ফোটানো ডাস্ট চায়ে ট্যানিক অ্যাসিড এত বেশি থাকে যে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষের মতো ক্ষতিকারক।

৩. যারা বুদ্ধিজীবী, মাথার কাজ করেন বা ঠাণ্ডা দেশে থাকেন তাঁদেরই জন্যে যেন নির্দিষ্ট একটা পানীয়। বুদ্ধিবৃত্তি বা জ্ঞানতন্তুকে চা উত্তেজিত করে। চাপাতাকে সব সময়ে টাটকা জলে সেদ্ধ করা উচিত। তবে খুব বেশি ফোটানো কড়া লাল চা কখনোই খাওয়া উচিত নয়।

দেশি চায়ের গুরুত্ব

দেশী চা: শীতকালে বা বর্ষাকালে গরম চায়ের স্বাদ নিতে ইচ্ছে করলে দেশী চা বা এর বিকল্প কিছু পান করতে পারেন। শুঁঠ অর্থাৎ শুকনো আদা, তেজপাতা, পুদিনা ও তুলসী পাতা, এলাচ, লবঙ্গ মিশ্রি চূর্ণ করে ফুটন্ত জলে দিয়ে ছেকে নিয়ে দুধ মিশিয়ে বা দুধ না মিশিয়ে পান করুন। এই দেশী চা অত্যন্ত উপকারী। এর অনেক গুণ। সহজে হজম হয়, সর্দি, পীড়া, অখিদে (মন্দাগ্নি) প্রভৃতি দূর করে।

আরো পড়ুন:  গুড় বাংলাদেশের সহজলভ্য ও প্রচলিত মিষ্টান যাতে আছে নানা গুণ

আরেক রকম দেশী চা: অর্জুন গাছের ছাল, শুঠ, তেজপাতা, গোলাপ ফুলের পাপড়ি সেটা টাটকা বা শুকনো হতে পারে, তুলসী পাতা, এলাচ, সব কিছু একসঙ্গে নিয়ে থেঁতো করুন। পরিমাণে অর্জুন গাছের ছাল সবচেয়ে বেশি নেবেন। ফুটন্ত জলে সব কিছু ফুটিয়ে ছেকে নিয়ে মিশ্রি বা চিনি মিশিয়ে ইচ্ছে হলে দুধ মিশিয়ে পান করুন।

অপকারিতা

১. চা বেশি খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং যিনি বেশি পান করেন তিনি সাধারণত রোগা হয়ে যান।

২. হজম শক্তি কমে যায় ও ঢিমে হয়ে যায়।

৩. কোষ্ঠ কাঠিন্য দেখা দেয় ও রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়।

৪. নিদ্রা কমে যায়, বীর্য পাতলা হয়ে যায়।

৫. সহ্য শক্তি বা সহনশীলতা কমে যায় অথাৎ স্বভাব খিটখিটে হয়ে যায়।

৬. হৃৎক্রিয়া অনিয়মিত হয়ে যায়।

৭. বুকে ব্যথা ও বুকের দোষ দেখা দেয়। যাঁদের হজমশক্তি কম বা খিদে ঠিক মতো হয় না তাঁদের বেশি চা খাওয়া উচিত নয়। অনিদ্রা রোগীদেরও চায়ের অভ্যাস এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ।

বৈজ্ঞানিক মতে চায়ের মুখ্য দ্রব্য হলো ক্যাফিন। এর প্রভাব তিন ধরনের। মূত্র বৃদ্ধি করে, উত্তেজনা সৃষ্টি করে, মাংসপেশিতে বলের অনুভূতি হয়। ক্যাফিন শরীরে তাড়াতাড়ি শোষিত হয়ে যায়। ঘাম হয়ে বা প্রস্রাবের সঙ্গে ক্যাফিন বেরিয়ে যায়। ক্যাফিনের জন্যে উত্তেজনা বা স্ফূর্তির অনুভূতি হয়। ক্যাফিন হৃদয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। মাথা ব্যথা, মূত্রকৃচ্ছতা (প্রস্রাব কম হওয়া), হার্ট ও নাড়ির দুর্বলতা, ফুসফুসের স্ফীতি, হার্টের অসুখের জন্যে ফুলে যাওয়া, কিডনির জ্বালা করা প্রভৃতি কমিয়ে দেয়। চায়ের দ্বিতীয় দ্রব্য হল ট্যানিন। ট্যানিন শরীরের বেশি ক্ষতি করে।

কাজেই দেখা যাচ্ছে দোষ-গুণ মিলিয়ে আমাদের প্রতিদিন সকাল বিকেলের এই চায়ের কাপ। পরিমিত পরিমাণে খেলে যা টনিকের কাজ করে বেশি খেলে সেইটেই হয়ে যায় বিষ।

আরো পড়ুন:  স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি অনুসারে খাদ্য উপাদান হচ্ছে ছয় ধরনের খাদ্যের সমষ্টি

তথ্যসূত্রঃ

১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,৫৪-৫৬।

1 thought on “চা পানের বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা”

  1. আমরা যে চায়ের টেস্ট পেয়ে থাকি তা কীটনাশক সহকারে তৈরি টেস্ট। কেমিক্যাল ব্যবহার না হলে চায়ের স্বাদ অন্যরকম হত। উৎপাদন কম হত বলে দামও বেশী হতো। চায়ের লিকার ঘন করতে সাধারণ চা-পাতা যেখানে লাগে ৪ চামচ, সেখানে অরগানিক চা-পাতা লাগে মাত্র ১.৫ -২ চামচ।

    কিন্তু কোথায় পাব সেই কেমিক্যাল/রাসায়নিক মুক্ত অরগানিক চা? সুলভ মূল্যে খুব সহজেই Tea Point আপনার হাতে পৌঁছে দিবে সেই কাঙ্ক্ষিত চা। শ্রীমঙ্গল থেকে সংগ্রহীত বিশুদ্ধ চা-পাতা ক্রয় করতে পারেন আমাদের ফেসবুকের ‘Tea Point’ পাতা থেকে। লিংকঃ https://www.facebook.com/bdteapoint/

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!