ভূমিকা: পিতাং বা বকমম (বৈজ্ঞানিক নাম: Caesalpinia sappan) এক প্রকারের ভেষজ বৃক্ষ। বাংলাদেশসহ উষ্ণাঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশে জন্মে।
পিতাং বা বকম-এর বর্ণনা:
গাত্রকন্টক যুক্ত গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ, প্রায় ৬ মিটার উঁচু, ব্যাস ১৫-২৫ সেমি। পত্র যৌগিক, সোপপত্রিক, উপপত্র ২ টি, প্রায় ৩-৪ মিমি লম্বা, আশুপাতী, পত্রক অক্ষ ১৫-৪০ সেমি লম্বা, পক্ষ ১০-১৩ জোড়া, প্রতিমুখ,
পত্রক ১০-১৮ জোড়া, ১-২ x ০.৬-১.০ সেমি, উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত, মূলীয় অংশ অতি তির্যক, অবৃন্তক, স্থুলাগ্র, শীর্ষ সামান্য খাতা, কাগজ তুল্য, চাপা রোমশ।
পুষ্পবিন্যাস অতি অক্ষীয় থেকে শীর্ষীয় প্যানিকল, ৩০-৪০ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ভল্লাকার, দীর্ঘা, ৬ মিমি লম্বা, আশুপাতী, মঞ্জরীদন্ড ১.৫-২.০ সেমি লম্বা, রোমশ, উপরে সন্ধিযুক্ত।
পুষ্প হলদে, রোমশ। বৃতি নালি খাটো, অর্ধচন্দ্র পেয়ালাকৃতি, বৃত্যংশ ৫ টি, স্বর্ণালু বাদামী, বহিভাগ, রোমশ এবং ভিতর রোম বিহীন, সর্বনিম্নেরটি অবতল ও বৃহত্তর।
পাপড়ি ৫ টি, হলুদ, বিডিম্বাকার, ধ্বজক ক্ষুদ্রতর, একটি দলবৃন্ততে সংকুচিত, অভ্যন্তরভাগের মাঝামাঝি রোমশ, উপরের পাপড়ি ফ্যাকাশে লাল।
পুংকেশর ১০ টি, পুংদন্ড পাপড়ির চেয়ে সামান্য দীর্ঘতর, সাদা, নিম্নের অর্ধাংশ পশমী রোমশ। গর্ভাশয় ধূসর মখমল সদৃশ, ৩ থেকে ৬ টি ডিম্বক যুক্ত।
ফল পড, ৭-১২ x ১.৫-২.০ সেমি, বিডিম্বাকার, তির্যক কর্তিতাগ্র, কাষ্ঠল, দীর্ঘায়ত, চ্যাপ্টা, নিম্নাংশ অবৃন্তক, উপরের অংশ লেজ সদৃশ। বীজ প্রতি পডে ৩-৪ টি।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (Ghose,1952),
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
ছোট গুল্মোর জঙ্গল, চুনা পাথরের পাহ্য কখনও গ্রামাঞ্চলে চাষাবাদ করা হয়। ফুল ও ফল ধারণ সময় জুন-মে। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
পিতাং বা বকম-এর বিস্ততি:
কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, লাওস, মালয়েশিয়া, মালয় পেনিনসুলা, মায়ানমার, শ্রীলংকা, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের একমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে নথিভূক্ত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
রাসায়নিক দ্রব্য, ভেষজ ওষুধ এবং কাঠের জন্য গুরুত্বপূণ। কাঠ থেকে তৈরি ক্বাথ লাইকেন ঘটিত চর্মপীড়া নিরাময়ে ব্যবহৃত। বাহারি উদ্ভদরূপেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
সার কাঠ থেকে প্রাপ্ত রং রেশম বস্ত্র রংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। ইন্দোচীনে কাঠের ক্বাথ রজবর্ধক রূপে ও রজ:স্রাব সংক্রান্ত অনিয়মে ব্যবহার করা হয়। চীনে কাঠের ক্বাথ আমাশয় ও উদরাময় নিরসনে ব্যবহৃত।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পিতাং বা বকম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও আবাসভূমি ধ্বংসের কারণ বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে পিতাং বা বকম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে অবস্থান চিহ্নিত প্রয়োজন এবং যথাস্থানে সুরক্ষা জরুরি।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।