ধূপ গাছের বিবরণ:
ধূপ বড় আকৃতির এবং ডালপালায় বিস্তৃত সুগন্ধি বিশিষ্ট চিরসবুজ বৃক্ষ, উচ্চতায় ২৫-৩০ মিটার এবং গাছের বেড় ১৮০-২৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গাছের গোড়াতে ঠেসমূল (buttress) দেখা যায়। এদের গুঁড়ি কাণ্ড সরল, সোজা ও নলাকার। বাকল পুরু, সবুজাভ ধূসর বর্ণ,আঁশ ও সুগন্ধিযুক্ত এবং বাকলের উপরিভাগ লম্বালম্বিভাবে ফাটল ও খাঁজযুক্ত। গুঁড়ি কাণ্ড কাটলে গাঢ় বাদামি থেকে কালো বর্ণের রেজিন (resin) নির্গত হয়।
ধূপের পাতা যৌগিক, পত্র ফলক লম্বায় ৩০-৬০ সেন্টিমিটার এবং ৩-১৩টি পত্রকযুক্ত। পত্রকগুলো বোটাযুক্ত, উপবৃত্তকার, লম্বায় ৮-২০ সেন্টিমিটার, কিনারা মসৃণ ও আগা সূচালো। ধূপ জুন-জুলাই মাসে ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার লম্বা শাখান্বিত পুষ্পবিন্যাসে হলুদাভ বা হালকা সাদাটে ঘ্রাণযুক্ত ফুল ফোটে। এদের ফল ড্রুপ ধরনের ডিম্বাকার, লম্বায় ২.৫-৫.০ সেন্টিমিটার ও চওড়ায় ২.১-২.৩ সেন্টিমিটার এবং স্থায়ী বৃতিযুক্ত।
ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পরিপক্ক ফল নীলচে-কালো থেকে গাঢ় ধূসর বর্ণের হয়। ফলগুলোর মধ্যস্ত্বক মাংসল ও সুমিষ্ট ঘ্রাণযুক্ত। ফল একক বীজ বিশিষ্ট। বীজগুলো ত্রিকোণাকার বিশিষ্ট, লম্বায় ৩.৫-৩.৮ সেন্টিমিটার, উভয় প্রান্ত সূচালো, বাদামি বর্ণ ও শক্ত ধরনের। প্রতিটি বীজ ওজনে ২.৫-৩.৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
ভৌগোলিক বিস্তৃতি:
ধূপ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউগিনি, ফিজি, সামোয়া, তঙ্গা, সলোমোন দ্বীপপুঞ্জ, নাইজেরিয়া, মাদাগাস্কার ও অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশে অস্তিত্বমূলক অবস্থা:
২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে ধুপ গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ (Protected Plant) হিসেবে অভিহিত। বাংলাদেশে ধূপ একটি বিরল প্রজাতির গাছ।
বাংলাদেশে বিস্তৃতি ও প্রাপ্তিস্থান:
চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের মিশ্র চিরসবুজ বনের পাহাড়ের ঢালুতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কদাচিৎ ধূপ গাছ দেখা যায়। পুরাতন ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনে এবং চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে লাগানো ধূপের কিছু গাছ রয়েছে।
প্রজনন ও বংশবিস্তার:
সাধারণত বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বীজ থেকে ধূপের চারা ও গাছ জন্মায়। ধূপের সংগৃহীত পরিপক্ক ফলের মাংসল মধ্যস্ত্বক চাকু দিয়ে ছিলে ফেলে বীজ বের করে ছায়া জায়গায় শুকাতে হয়। বীজের আবরণ শক্ত বিধায় ২৪ ঘন্টা ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে নার্সারিতে পলিব্যাগে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা গজাতে থাকে এবং চারা গজানোর বা অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ।
গুরুত্ব ও ব্যবহার:
কাঠ ধূসর-সাদাটে বর্ণের। ঘুণ ও কাঠ ছিদ্রকারী পোকায় সহজে আক্রান্ত করে বিধায় ধূপ কাঠ সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। সিজনড ধূপ কাঠ দিয়ে ভিনিয়ার, প্লাইউড, সিলিং, ফ্লোরিং, পার্টিশন, প্যাকিং বক্স, চায়ের বক্স ইত্যাদি তৈরি করা যায়। বাকলের কেটে যাওয়া ক্ষত থেকে প্রচুর কালো আলকাতরা সদৃশ রসালো পদার্থ (রেজিন) বের হয় যা শুকালে ধূপ নামক শক্ত ভঙ্গুর পদার্থে পরিণত হয়। অনেকে সন্ধ্যায় বাসা বাড়ি তথা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধূপ জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিয়ে থাকে। এতে করে ধূপের ধোঁয়ায় ঘরের দূর্গন্ধ দূরীভূত হয় ও মশা তাড়াতে সহায়তা করে। এ ছড়া মশাল জ্বালাতে ধূপ ব্যবহার করা হয়। রেজিন পাউডার বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। বীজের শাঁস খাওয়া যায় এবং বীজের তেল কফেকশনারীতে ব্যবহৃত হয়।
সংরক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ:
পুরাতন ঢাকার ওয়ারীর বলধা গার্ডেনে এবং চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে লাগানো ধূপের কিছু গাছ সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া আরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ধূপের চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।