ভূমিকা: পেঁপে হচ্ছে সপুষ্পক উদ্ভিদের কেরিকাসি পরিবারের একটি প্রজাতি। এটি সারা পৃথিবীতে মানুষসহ অন্যান্য বেশ কিছু প্রাণীর কাছে খুব জনপ্রিয়।
বিবরণ: পেঁপে বৃক্ষ, প্রায় ৫ মিটার বা ততােধিক লম্বা, সর্বাঙ্গে তরুক্ষীর বিদ্যমান। কান্ড ধূসর বর্ণের, কদাচিৎ শাখান্বিত, পত্রমূলের ক্ষতচিহ্নযুক্ত, বাকল পাতলা। পেঁপে গাছের পাতা বৃহৎ, করতলাকার ৭-৯ খন্ডিত, দেহকান্ডের শীর্ষে গুচ্ছবদ্ধ, বৃন্ত অতিশয় লম্বা, পত্ৰ খন্ড দীর্ঘায়ত, সূক্ষাগ্র, গভীরভাবে দন্তুর।
পেঁপে গাছে সাধারণত পুং ও স্ত্রী পুষ্প ভিন্ন উদ্ভিদে জন্মে কিন্তু কখনও একই উদ্ভিদেও জন্মিতে দেখা যায়। পুষ্প সুগন্ধি নৈশ উম্মীলনি। কিছু গাছ সহবাসী, পুষ্প বন্ধ্যা, বীজহীন ফল। পুংপুষ্প প্যানিকল মঞ্জরীতে বিন্যস্ত (কদাচিৎ পত্র অক্ষে এক জম্মে), ১.৫ x ০.৫ সেমি। বৃতাংশ ছােট, ৫-দন্তুর, যুক্ত বৃতি। পাপড়ি ৫টি, গৌরবর্ণ, প্যাঁচানো, প্রায় ১ সেমি লম্বা। পুংকেশর ১০টি, দলমন্ডলের অভ্যন্তরে ২ সারিতে বিন্যস্ত। স্ত্রীপুষ্প ৩.৯ সেমি লম্বা, অক্ষীয়, একল বা স্বল্প সংখ্যক পুষ্পের গুচ্ছ, কখনও পুং প্যানিকলের শাখার শীর্ষে জন্মে, অবৃন্তক বা সবৃন্তক, সাদা। বৃত্যংশ ৫টি, ছােট, যুক্ত বৃতি। পাপড়ি ৫টি, যুক্তদল। গর্ভপত্র ৫টি, যুক্ত গর্ভপত্রী, গর্ভাশয় বৃহৎ, অধােগর্ভ, গর্ভমুন্ড ৫টি, অবৃন্তক, প্রতিটি গর্ভমুন্ড প্রশস্ত পাখা আকৃতি, গর্ভদন্ড প্রায় অনুপস্থিত, ডিম্বক অসংখ্য, অমরাবিন্যাস গাত্রীয়।
ফল রাসালাে বেরি, সবুজ, পরিপক্ক অবস্থায় হলুদ বা কমলা হলুদে পরিবর্তিত। বীজ কালাে, কুঞ্চিত, প্রতিটি বীজ বীজ উপাঙ্গ থেকে নির্গত আঠাযুক্ত ঝিল্লিদ্বারা আবৃত। পেঁপের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সারা বর্ষ ব্যাপী।
পেঁপের ক্রেমােসােম সংখ্যা:2n = ১৮ ( Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল: বাসগৃহ সংলগ্ন তরিতরকারির ক্ষেত, মাঠ ঘাট। প্রধানত বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি: মেক্সিকো, কোষ্টারিকা। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: পেঁপের ফল আহার্য। অপরিপক্ক সবুজ ফল থেকে বাণিজ্যিক প্যাপেইন তৈরি করা হয়। সবজিরুপেও রান্না করা হয়। শক্ত মাংস সুসিদ্ধ করতে সবুজ পেপে ব্যবহার করা হয় (Kirtikar et al., 1935). জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে বলা হয় যে পেঁপে বীজ গােলমরিচের ভেজালরূপে ব্যবহার করা হয়। তরুক্ষীর চিউংগাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পাকা ফল রেচক। আরো পড়ুন
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পেঁপে প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংসংকটের কারণ ও বর্তমানে বিপদের আশঙ্কা নেই এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে পেঁপে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ নিপ্রয়ােজন।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।