ভূমিকা: দেশি সাগু পাম (বৈজ্ঞানিক নাম: Caryota urens) এরিকাসি পরিবারের উপকারী বৃক্ষ। ভেষজগুণ সম্পন্ন এই উদ্ভিদ এশিয়ার দেশসমূহে জন্মে। শোভাবর্ধনের জন্য রাস্তা বা উদ্যানে লাগানো হয়।
দেশি সাগু পাম-এর বর্ণনা:
একল, ঋজু বেলনাকার পাম, প্রায় ১৬ মিটার উঁচু এবং গোড়ার দিকে ৬০ সেমি পুরু। বর্ণ ধূসর, পত্রাবরণের ক্ষত চিহ্নের জন্য বলয়ী। প্রতি বৃক্ষে পত্র ১০-১৫ টি, দ্বিপক্ষল, প্রশস্ত, প্রায় ৭ মিটার x ৮-১৫ সেমি।
পাতা দেখতে গাঢ় সবুজ, কীলকাকার, তীর্যকভাবে কর্তিতা, সূক্ষ দেঁতো প্রান্ত, বৃন্ত প্রায় ২ মিটার লম্বা এবং ৩০ সেমি প্রশস্ত, বাহির গাঢ় সবুজ এবং ভিতর হলুদাভ সবুজ, মসৃণ, কিনারা তন্তুময়, দৈর্ঘ্যের সিংহভাগ কান্ডের সাথে এঁটে থাকে।
পুষ্পবিন্যাস চমসা মঞ্জরী, আন্ত:পত্রীয়, প্রকান্ড আকৃতির ৩-৪ মিটার লম্বা, মঞ্জরীদন্ড দৃঢ়, বাঁকানো, ১.০-১.৫ মিটার x ৫ সেমি, সবুজ, গোলাকার, শাখাসমূহ রজ্জবৎ, প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা, সরল, বৃন্তের শেষাংশ থেকে ঝুলন্ত, তরুন অবস্থায়।
ফুল হালকা এবং পরিণত অবস্থায় গাঢ় সবুজ, মঞ্জরীদন্ডে পুষ্পের সংখ্যা অসংখ্য, পুষ্প সহবাসী, ৩টি করে একত্রে, স্ত্রীপুষ্প ২টি পুং পুষ্পের মধ্যে অবস্থিত। চমসা ৫ টি, অসম্পূর্ণ, নলাকার, সবুজ, প্রায় ৪৫ সেমি লম্বা, মসৃণ।
পুংপুষ্প প্রায় ১.০ x ০.৪ সেমি, হালকা সবুজ, বৃত্যংশ গোলাকার, প্রান্ত আচ্ছাদী, পাপড়ি রৈখিক-দীর্ঘায়ত, প্রান্ত স্পর্শী, পুংকেশর ৪০-৪৫, পুংদন্ড অতিশয় খাটো, পরাগধানী লম্বা, হলুদ।
স্ত্রী পুষ্প অর্ধ-বর্তুলাকার, বৃত্যংশ গোলাকার, প্রান্ত-আচ্ছাদী, পাপড়ি গোলাকার, প্রান্তস্পর্শী, গর্ভাশয় ৩-প্রকোষ্ঠী, গর্ভমুণ্ড ৩ খন্ডক, ডিম্বক ঋজু।
ফল গোলাকার বেরি, ১-২ বীজী, ২ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, পরিপক্ক ফল লাল বর্ণের, মূলীয় অংশ সূচ্যাকার, বীজ বহিস্ত্বক আসঞ্জিত, বীজ ঋজু, ভ্রুণ পৃষ্ঠীয়।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩২ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গিরিশীর্ষ এবং পাহাড়ী ঢালে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস। বীজের সাহায্যে বংশবিস্তার হয়।
বিস্তৃতি:
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভুত, এশিয়ার উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। প্রধান প্রবেশ পথ বা রাজপথের উভয় পার্শ্বের তরু রূপে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশি সাগু পাম-এর ব্যবহার:
এই গাছ থেকে প্রাপ্ত দৃঢ় তম্ভ থেকে রজ্জু বুরুশ ইত্যাদি সামগ্রী তৈরি হয়। কান্ডমজ্জা সাগুর মতো ব্যবহার করা হয়। কোন কোন অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসীদের কান্ড মজ্জা একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য উপাদান।
চমসামঞ্জরী আঘাত করে সংগৃহীত রস তাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এবং এর এক একটি গাছ থেকে প্রতিদিন ১২ গ্যালন পর্যন্ত তাল মিছরি উৎপাদন করা হয়। এর অগ্রস্থ কুড়িও আহার্য।
এদের বীজ দ্বারা মুসলমান সম্প্রদায় তসবী তৈরি করেন। বীজের ভেষজ গুণও বর্তমান। ফলের আঁশালো অংশ শক্তিবর্ধক।[১] দাঁতের সমস্যা সারাতে এর মূল ব্যবহৃত হয়।
গাছের ছাল এবং বীজ ফোঁড়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। কচি ফুল চুলের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পাতা থেকে খুব শক্ত, সূক্ষ্ম, নরম এবং টেকসই ফাইবার পাওয়া যায়।
এটি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় বিশেষত ঝাড়ু, ব্রাশ, দড়ি, ঝুড়ি ইত্যাদি। বিভিন্ন অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী ভবন তৈরিতে গাছটি ব্যবহার করা হয়; এছাড়া ছাদ, বর্শা, বেড়া ইত্যাদি বানানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।[২]
জাতিতাত্ত্বি ব্যবহার: সদ্য প্রস্তুত তাড়ি রেচক হিসেবে। গ্রামের অধিবাসীরা গ্রহণ করে থাকেন ।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দেশি সাগু পাম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বনাঞ্চল উজাড় করার ফলে আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া প্রধান হুমকি এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে দেশি সাগু পাম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে অধিকমাত্রায় চাষাবাদ প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম জসিম উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. 2019.06.13 “Caryota urens”, Useful Tropical Plants, URL: http://tropical.theferns.info/viewtropical.php?id=Caryota+urens
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forest and Kim Starr
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।