লাল সোনাইল দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

বৃক্ষ

লাল সোনাইল

বৈজ্ঞানিক নাম: Cassia nodosa Buch.-Ham. er Roxb., Fl. Ind, 2 336 (1832), সমনাম: Cassia javanica L. var. agness de Wit (1955), Cassia javanica L. subsp. nodosa (Buch.Ham, er Roxb.) K. Larsen (1974). ইংরেজি নাম: Pink Cassia, Pink Mohur, Pink Shower, White Shower. স্থানীয় নাম: লাল সোনাইল, বন সোনালু, বানর লইট্যা, লোফাথা, বানর লাঠি, লাল সোনালু, বানর লুটিয়া।
জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Rosids. বর্গ: Fabales.পরিবার: Fabaceae. গণ: Cassia. প্রজাতি: Cassia nodosa.

ভূমিকা: লাল সোনাইল (বৈজ্ঞানিক নাম:Cassia nodosa) ফেবিয়াসি পরিবারের অর্ধচিরহরিৎ বৃক্ষ। এর মধ্যে নানা ভেষজ গুণ আছে। এছাড়াও বাড়ি, উদ্যান ও বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।

লাল সোনাইল-এর বর্ণনা:

অর্ধচিরহরিৎ বৃক্ষ, ১০-২০ মিটার উঁচু, দেহকান্ড ঋজু, উপরিভাগ চ্যাপ্টা, শীর্ষ শামিয়ানা সদৃশ, বাকল ধূসর বাদামী ও মসৃণ, তরুণ বিটপ রেশমী সাদা রোমশ। পত্র দ্বিপক্ষল যৌগিক, পত্রক অক্ষ ১২-৩০ সেমি লম্বা, পত্রক ৪-১৪ জোড়া, ৪-১২ x ২.০-৪.৫ সেমি, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত থেকে ভল্লাকার, অখন্ড, সূক্ষ্ম উপরিভাগ চর্মবৎ ও উজ্জ্বল, নিম্নতল বিবর্ণ, অণুবৃন্ত ০.২-০.৩ সেমি লম্বা, শক্ত, উপপত্র ২ টি, ২ x ১ সেমি, অর্ধচন্দ্রাকৃতি বা সরু কাস্তে আকৃতি, মধ্যবর্তী অংশে সন্নিবিষ্ট।

রেসিম শীর্ষীয়, করিম্ব সদৃশ, ছড়ান, প্রাচুর্যপূর্ণ, মঞ্জরীদন্ড ২.৫-৩.০ সেমি। পুষ্প হালকা থেকে গাঢ় ফ্যাকাশে লাল বা গোলাপী বর্ণ যুক্ত, সুদর্শণ, প্রস্ফুটন প্রাচুর্যপূর্ণ, আড়াআড়ি ৪.৫-৬.০ সেমি, মঞ্জরীপত্র ১.৩-১.৫ সেমি, সরু ভল্লাকার, রোমশ, মঞ্জরীপত্রিকা ৪-৫ মিমি, ডিম্বাকার থেকে রৈখিক-দীর্ঘায়ত, বৃন্ত ২.৫-৪.৫ সেমি লম্বা, ফ্যাকাশে লাল, সামান্য পালকাবৃত, মঞ্জরীপত্রের মূলীয় অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

বৃত্যংশ ৫টি, মুক্ত, ৬-১০ x ২.৫-৩.০ মিমি, ডিম্বাকার, সুক্ষাগ্র, চকচকে ঘন লালচে বাদামী, বহির্ভাগ মখমল সদৃশ। পাপড়ি ৫টি, মুক্ত ১.৫-২.৫x ০.৬-০.৯ সেমি, বিডিম্বকার থেকে দীর্ঘায়ত, উভয়প্রান্ত তীক্ষ্ণ, দলবৃন্ত ৩ মিমি, সাধারণত কালো শিরাল, পাতলা রোমশ।

আরো পড়ুন:  নুনে শাক-এর সাতটি ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ

পুংকেশর ১০টি, অসম, ৩টি নিচের পুংদন্ড হলুদ, ২ সেমি, মাঝখানে বিপরীতমুখী দ্বিবক্র এবং নিম্নাংশ দ্বিবক্র, পরাগধানী ৪ মিমি, উপর পৃষ্ঠ স্বল্প রোমশ, শীর্ষীয় ছিদ্র এবং মূলীয় চিড় দ্বারা উন্মুক্ত, ৪টি ক্ষুদ্রতর পুংদন্ডের প্রতিটি ১ সেমি, পরাগধানী বৃহৎ, মুলীয় ছিদ্রে উন্মুক্ত, হ্রাসপ্রাপ্ত পুংকেশর ৩টি, ১০ মিমি, পরাগধানী বন্ধ্যা।

গর্ভাশয় রোমশ, সরু, সম্মুখে বা পাশ্চাতে বক্র, দন্ড সরু, গর্ভমুণ্ড সুস্পষ্ট। ফল পড়, ২০-৩০×১-২ সেমি, বেলনাকার-দীর্ঘায়াত, কাষ্ঠল, ঝুলন্ত, মসৃণ, পরিপক্ক অবস্থায় গাঢ় বাদামী থেকে চকচকে কালো, অভ্যন্তরে করিযুক্ত, বহুবীজী, আবিদারী। বীজ চ্যাপটা, চকচকে বাদামী, কর্ক সদৃশ, মোটামুটি গোলাকার, অনুপ্রস্থ বিভেদ প্রাচীর দ্বারা পৃথকীকৃত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (Atchison, 1951).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে বিভিন্ন উচ্চতা ও আবহাওয়ায় বিশেষ করে শুষ্ক ভূখন্ডে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল ফেব্রুয়ারি-নভেম্বর। বীজে বংশ বিস্তার হয়।

লাল সোনাইল-এর বিস্তৃতি:

আফ্রিকা, ভুটান, চীন, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, পাকিস্তান, ফিলিপাইনস, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, মালয় পেনিসুলা, নিউগিনি, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। আদিনিবাস বাংলাদেশের চট্টগ্রামে।

এছাড়া চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের অরণ্যে পাওয়া যায় (Heinig, 1925), ঢাকা শহরের পার্ক ও উদ্যানে প্রায়ই দেখা যায় (Khan and Huq, 1981)।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

অন্যতম বাহারি বৃক্ষ। পার্ক ও পথিপার্শ্বে এভিনিউ গাছরূপে রোপণ করা হয়। ভেষজ ওষুধ, কাঠ ও বিবিধ ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ (Kumar and Sane, 2003)। পড রেচক রূপে ব্যবহার করা হয়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বাংলাদেশের স্থানীয় অধিবাসীরা শুষ্ক পড ও কাঠ জ্বালানিরূপে ব্যবহার করে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) লাল সোনাইল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে লাল সোনাইল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ব্যাপক চাষাবাদ প্রয়োজন।  

আরো পড়ুন:  শ্যাওড়া দক্ষিণ এশিয়ার চিরসবুজ পত্রবহুল ঔষধি গাছ

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১২০-১২১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Jan Smith

Leave a Comment

error: Content is protected !!