ভূমিকা: বিলাতি ঝাউ (বৈজ্ঞানিক নাম: Casuarina equisetifolia) সমুদ্র তীরের শোভাবর্ধক বৃক্ষ। এছাড়াও বাড়ি, উদ্যান ও বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়। তবে গাছটি পরিবেশের জন্য উভক্ষতি করে। উভক্ষতি মানে কোন উদ্ভিদ থেকে এমন একপ্রকার রস নির্গত হয় যার কারণে সেই গাছের নিচে বা পাশে অন্য গাছ জন্মাতে পারে না।
বিলাতি ঝাউ-এর বর্ণনা:
প্রসারিত বৃক্ষ, ৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, ক্ষুদ্র শাখা লম্বা, সরু, বেলনাকার, সন্ধি বা খাঁজযুক্ত পর্বমধ্য ৩-৮ মিমি লম্বা, ৭টি খাঁজ বিশিষ্ট এবং পর্ব অঞ্চলে সম সংখ্যক শল্ক পত্র যুক্ত।
পুষ্প একলিঙ্গ। পুংপুষ্প ১.৪-৩.০ সেমি লম্বা, পার্শ্বীয় ক্ষুদ্র শাখার শীর্ষে জন্মে, প্রতিটি পুষ্প ২টি মঞ্জরী পত্রিকা যুক্ত, পুষ্পপুট ক্ষুদ্র। পুংকেশর একল, সরু পুংদন্ড প্রায় ২ মিমি লম্বা, পরাগধানী দীর্ঘায়ত পালগ্ন, ২-খন্ডিত, লম্বালম্বি উন্মুক্ত।
স্ত্রীপুষ্প উন্মুক্ত, পল্লবে জন্যে, ঘন গোলাকর শীর্ষ মঞ্জরীতে সন্নিবিষ্ট, গর্ভপত্র ২টি, যুক্ত গর্ভাশয় ১ কোষী, ডিম্বক ১-২ টি, গর্ভদন্ড শীর্ষীয়, গর্ভমুক্ত ২টি, ৬ মিমি লম্বা। কোণ উপবৃত্তাকার, ১.৫-২.০ X ১.২১.৫ সেমি, কাষ্ঠল মঞ্জরী পত্রে আবৃত। ফল সামারা, ১ বীজা, ৭ মিমি লম্বা।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2 = 28 (Kunitr and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
উদ্যান, পথিপার্শ্বে, বালুকাময় স্থান। কক্সবাজার সমুদ্রতীরের বালুয়াড়ি রক্ষার্থে এই প্রজাতির গাছ রোপণ। ফুল ও ফল ধারণ সময় নভেম্বর-মার্চ। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
বিলাতি ঝাউ-এর বিস্তৃতি:
অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সমুদ্র তীরে আদিনিবাস। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্রবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ঢাকা, কক্সবাজার ও যশোর জেলায় জন্মে।
ব্যবহার:
এর কাষ্ঠ শক্ত হওয়ায় কড়িকাঠ রূপে ব্যবহার্য কাষ্ঠ উত্তম জ্বালানিরূপেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে (Das and Alam, 2001).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বাকল থেকে ভাল রজন উৎপন্ন হয়। যা টেনিন রূপে গুরুত্বপূর্ণ। এর সরু শাখা প্রশাখার মৃদুমান্দ বায়ু দূর সমুদ্রের মর্মর ধ্বনি স্মরণ করিয়ে দেয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বিলাতি ঝাউ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে বিলাতি ঝাউ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ব্যাপক চাষাবাদ প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৯৩-১৯৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forest & Kim Starr
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।