ভূমিকা: রাম তেজপাতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum bejolghota) উষ্ণমণ্ডলীয় চিরহরিৎ অরণ্যের বৃক্ষ। গাছে যেমন ভেষজ গুণ আছে তেমনি বাণিজ্যিক চাহিদাও আছে।
রাম তেজপাতা-এর বর্ণনা:
বৃহৎ আকৃতির বৃক্ষ, ২৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু, বাকল ধূসর বা প্রায় বাদামি-সাদা, সুগন্ধিযুক্ত। পত্র একান্তর, ১৫-৩০ X ৪-৯ সেমি, উপবৃত্তাকার-আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার, স্থূলা, সূক্ষ্মাগ্র বা দীর্ঘা, মসৃণ, মাঝে মাঝে নিম্নপৃষ্ঠ চকচকে, দৃঢ় চর্মবৎ, গোড়া ৩-শিরাযুক্ত, পত্রবৃন্ত।
১.২-১.৭ সেমি লম্বা, শক্ত। পুষ্পমঞ্জরী প্যানিকেল, সমাকীর্ণ, ১৭-২৫ সেমি লম্বা, লম্বা মঞ্জরীদণ্ড বিশিষ্ট, প্রায় শীর্ষীয়, ধূসরাভ রোমশ অথবা অণুরোমশ। পুষ্প ক্ষুদ্র, প্রায় ০.৬ সেমি চওড়া, হলুদাভ-সাদা বা সবুজাভ-সাদা, পুষ্পবৃন্তিকা খাটো, ১.২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, সাধারণতঃ রেশমি রোমসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শুভ্র রোমাবৃত।
পুষ্পপট স্থায়ী, খণ্ড উভয় পৃষ্ঠে রেশমি। পুংকেশর ও গর্ভাশয় তীক্ষভাবে রোমশ। ফল ০.৬১.২ সেমি লম্বা, উপবৃত্তীয় বা উপগোলাকার, অল্প বর্ধিত পুষ্পপুটে অবস্থিত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২ = ২৪ (Kunar and Subramaniam, 1986)
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
মিশ্র পত্রঝরা ও উষ্ণমণ্ডলীয় চিরহরিৎ অরণ্য, সাধারণত নদীর কিনারা বরাবর। ফুল ও ফল ধারণ সময় জানুয়ারি-জুলাই। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও কলমের দ্বারা।
বিস্তৃতি:
মধ্য ও পূর্ব হিমালয়, আন্দামান এবং মায়ানমার। বাংলাদেশে ইহা চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাকল, পাতা ও মূল সুগন্ধ পূর্ণ করার জন্য খাদ্যাদিতে মেশানো হয় (Kunkel, 1984)। কাষ্ঠ কড়িকাঠ, তক্তা ও বাক্স তৈরীতে ব্যবহৃত হয় এবং এর দ্বারা কাঠ কয়লা তৈরী করা হয়। (Heinig, 1925)
রাম তেজপাতা-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) রাম তেজপাতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটি হুমকির সম্মুখীন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে রাম তেজপাতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
তবে প্রস্তাব করা হয়েছে উদ্ভিদটির বর্তমান অবস্থা নিরূপণের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে জরীপ কার্য পরিচালনা করা প্রয়োজন। অধিকন্তু, এর আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪০-৩৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Yercaud-elango
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।