তেজবহুল বা কস্তুরী বাংলাদেশের সংরক্ষিত ঔষধি বৃক্ষ

বৃক্ষ

তেজবহুল বা কস্তুরী

বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum iners Reinw. ex Blume, Bijdr.: 570 (1826). স্থানীয় নাম: তেজবহু, কস্তুরী, কারুইয়া। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Tracheophyta অবিন্যাসিত: Magnoliopsida বর্গ: Malpighiales পরিবার: Euphorbiaceae গণ: Euphorbia প্রজাতি: Cinnamomum iners.

ভূমিকা: তেজবহুল (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum iners) দক্ষিণ এশিয়ার বৃক্ষ। এতে রয়েছে নানা ভেষজ গুণাগুণ। বাংলাদেশে এটি সংরক্ষিত প্রজাতি।

তেজবহুল বা কস্তুরী-এর বর্ণনা:

মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ, প্রায় ২০ মিটার উঁচু, কাণ্ড খাটো, পুরু শীর্ষ বৃহৎ ঝোপাকৃতির, উপশাখা প্রায় মসৃণ। পত্র উপবৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, ১২.৫-১৮.০ X ৩.৮-৭.৫ সেমি, চর্মবৎ, কচি অবস্থায় সাদা, পরবর্তীতে লাল, পরিশেষে গাঢ় সবুজ, চওড়ায় অনেক পার্থক্যমণ্ডিত, শিরা ৩টি, অণুশিরা ও জালবৎ আকৃতি প্রায় অথবা সম্পূর্ণ অদৃশ্য, নিম্নপৃষ্ঠ মসৃণ, পত্রবৃন্ত ৫ মিমি লম্বা।

পুষ্পমঞ্জরী প্যানিকল, প্রায় ১৫ সেমি লম্বা, অত্যন্ত শিথীল-পুষ্পবিশিষ্ট, ছড়ানো শাখা ও পুষ্পবৃন্তিকা যুক্ত। পুষ্প ও পুষ্পবুন্তিকা রেশমি, সবুজাভ, ভেতরে হলুদ, প্রায় ২.৫ মিমি লম্বা, দুর্গন্ধময়, নল অত্যন্ত খাটো। বৃত্যংশ ডিম্বাকার, প্রায়সূক্ষ্মাগ্র। ফল উপবৃত্তীয়, কালো, কোমল ও রসালো, ১.০১.৫ সেমি লম্বা, কিউপুল অত্যন্ত খাটো।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৪ (Kumar ard Subramaniam, 1986)

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

উপ-চিরহরিৎ অরণ্য। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও কলমের দ্বারা

তেজবহুল বা কস্তুরী-এর বিস্তৃতি:

ভারত, মায়ানমার, মালয় পেনিনসুলা ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশে ইহা চট্টগ্রাম জেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে রেকর্ড করা হয়েছে (Heinig, 1925)।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

বীজের চূর্ণ মধু বা চিনির সাথে মিশ্রিত করে শিশুদের আমাশয়সর্দি-কাশিতে ব্যবহার করা হয় এবং অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় (Kirtikar et al.. 1935) । কাষ্ঠ, কড়ি কাঠ ও তক্তা তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

আরো পড়ুন:  কাকডুমুর ফল, ছালের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তেজবহু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশে এটি হুমকির সম্মুখীন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে তেজবহু সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।

তবে প্রস্তাব করা হয়েছে উদ্ভিদটিকে এর জানা স্থানে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় খুঁজে বের করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া এর সংরক্ষণের জন্য এক্স-সিটু ও ইন-সিটু উভয় পদ্ধতিই প্রস্তাব করা হলো।

তথ্যসূত্র:

১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪৩-৩৪৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Alex Popovkin, Bahia, Brazil

Leave a Comment

error: Content is protected !!