তিতা কমলা উষ্ণমন্ডলীয় এবং অর্ধ-উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের আবাদী ফল

ফল

তিতা কমলা

বৈজ্ঞানিক নাম: Citrus aurantium L., Sp. Pl.: 782 (1753). সমনাম: Citrus bigaradia Risso & Poiteau (1818), Citrus amara Link (1831), Citrus aurantium L. subsp. amara (Link) Engler (1897). ইংরেজি নাম: Sour Orange, Bitter Orange, Seville Orange, Bigarade. স্থানীয় নাম: কমলা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Sapindales পরিবার: Rutaceae গণ: Citrus প্রজাতির নাম: Citrus aurantium

ভূমিকা: তিতা কমলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Citrus aurantium ইংরেজি নাম: Sour Orange, Bitter Orange, Seville Orange, Bigarade) হচ্ছে  সপুষ্পক একটি উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি ছোট বৃক্ষ আকারে হয়ে থাকে। এবং এর ফল টক স্বাদ যুক্ত।  মনে করা হয় এরা Citrus maxima × Citrus reticulata দুই প্রজাতির সংকর।

বর্ণনা: কমলা ছোট বৃক্ষ, উচ্চতায় ১০ মিটার পর্যন্ত হয়, অধিক শাখান্বিত, অপরিণত শাখা কোণাকার এবং সরু খাটো কন্টকযুক্ত, পরিণত শাখাপ্রশাখা বলিষ্ঠ কন্টকিত, ৮ সেমি পর্যন্ত লম্বা।

পত্র সরল, একান্তর, বৃন্তক, বৃন্ত ২-৩ সেমি লম্বা, উপরের অর্ধাংশ সরু থেকে প্রশস্ত উপাঙ্গযুক্ত, উপাঙ্গ ত্রিকোণাকার বিডিম্বাকার, ২.৫ সেমি প্রশস্ত, পত্রফলক প্রশস্ত ডিম্বাকার থেকে উপবৃত্তাকার, ৭-১২ x ৪-৭ সেমি, গোড়া কীলকাকার বা স্থূলা, শীর্ষ স্থূলা থেকে গোলাকার ভাবে সূক্ষ্মা, প্রান্ত অধখন্ডিত থেকে সামান্য গোলাকার দন্তর, অর্ধচর্মবৎ, গ্রন্থিল দাগযুক্ত, চূর্ণ অবস্থায় সুগন্ধি।

পুষ্প কাক্ষিক, একক বা ২-৩টি গুচ্ছাকার, সাধারণত উভলিঙ্গ কিন্তু ৫-১২% পুংপুষ্পক, খুব সুগন্ধি। বৃতি পেয়ালাকার, ৪-৫ মিমি লম্বা, ৩-৫ খন্ডিত, খন্ডক প্রশস্ত ডিম্বাকার-ত্রিকোণাকার, মসৃণ থেকে রোমশ। পাপড়ি ৪-৫টি, আয়তাকার, ১৫ x ৪ সেমি, বিশুদ্ধ সাদা।

পুংকেশর ২০-২৫টি, ৪-৫টি গুচ্ছাকার, পুংদন্ড ৬-১০ মিমি লম্বা, পরাগধানী আয়তাকার, প্রায় ৩ মিমি লম্বা। গর্ভাশয় ঢোলক-আকৃতির, গর্ভদন্ড বেলনাকার, গর্ভমুন্ড মুন্ডাকার।

ফল চ্যাপ্টা-গোলাকার হেড পিরিডিয়াম,৫-৮ সেমি চওড়া, ৮-১২ খন্ডকযুক্ত, কেন্দ্রীয় কোন। সাধারণত ফাঁপা, খোসা স্থূল, হলুদ-কমলা, তীব্র গন্ধযুক্ত,রসালো অংশ খুব অম্লীয়, সামান্য তিক্ত। বীজ অসংখ্য, বহু জ্বণযুক্ত, অধিক সংখ্যক ভ্রুণপোষক ভ্রুণযুক্ত।

আরো পড়ুন:  পানি লেবু উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের ফল

ফুল ও ফল ধারণ: সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি ।

ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ১৮ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বাগানে বাণিজ্যিক ফল হিসাবে চাষ করা হয়। বীজ দ্বারা এবং জোড় কলম দ্বারা।

বিস্তৃতি: এই প্রজাতিটি সম্ভবত উত্তর-পূর্ব ভারতে উৎপন্ন হয় এবং মায়ানমার ও চীনের সংযুক্ত এলাকা । এরপর বিস্তার লাভ করে উত্তর পূর্ব থেকে জাপান এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং তা থেকে ইউরোপ, বর্তমানে এটি অনেক উষ্ণমন্ডলীয় এবং অর্ধ-উষ্ণমন্ডলীয় দেশে আবাদী। বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অধিক আবাদ করা হয় (Alam, 1988).

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: পুষ্প থেকে এক ধরনের তেল উৎপন্ন হয় যাকে বলে ‘নেরোলি বিগ্রেড অয়েল, যা উন্নত মানের আতরের উপাদান বহন করে এবং প্রসাধনীর পানি ‘eau-de-cologne’ তে ব্যবহৃত হয়। ইহা কখনো খাবারের সুগন্ধি উপাদান হিসেবে, অ্যালকোহলযুক্ত বা অ্যালকোহলহীন পানীয়, বিশেষকরে চা এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

ফলের খোসা সাইট্রাস আচার তৈরীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদ্বায়ী তৈল উৎপন্ন করে ‘বিটার অরেঞ্জ অয়েল’ যা বিশেষ করে সুগন্ধিকারক হিসেবে ব্যবহৃত, যেমন ‘orange sec’ এবং ‘triple sec তরল সুগন্ধি, এবং মিষ্টি-কমলার কোমল পানীয়ের গন্ধ এবং তীব্রতা পরিবর্তনে। টক ফলের রস সিরকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কাঠ কখনো আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই প্রজাতিটি বা অন্য Citrus প্রজাতির রুটস্টক হিসেবে প্রচুর ব্যবহৃত হয় (বিশেষত মিষ্টি কমলা, লেবু এবং আঙ্গুরফল) কারণ ইহা সুপ্রতিষ্ঠিত ভিত্তি গড়ে তোলে এবং বহু রোগের উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান, যেমন: গোম্মসিস এবং মূল পচা রোগ (Oyen and Dung, 1999).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ক্যারিবিয়ানরা পিত্তথলীয় সমস্যায় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। ফিলিপাইনে দাদ রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং Staphylococcus aureus এর বিরুদ্ধে পচনরোধী। কাচা এবং প্রায় পাকা ফল পেটের ব্যথা, ঠান্ডা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে বাহামা এবং চীনে ব্যবহৃত হয় (Oyen and Dung, 1999).

আরো পড়ুন:  কমলা লেবু উষ্ণমন্ডলীয় এবং অর্ধউষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় আবাদী ফল

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের খণ্ডে ৯ম(আগস্ট ২০১০)   কমলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কমলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণের তেমন প্রযোজন নেই।[১]

তথ্যসূত্র:      

১.  এম. আমান উল্লাহ  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Zcebeci

Leave a Comment

error: Content is protected !!