বরুণ জলাভূমির পাশে জন্মানো পরিচিত ও সহজলভ্য আলংকরিক বৃক্ষ

ভূমিকা: বরুণ, টিকথা শাক, বাইন্যা (বৈজ্ঞানিক নাম: Crateva magna, ইংরেজি নাম: Three-leaved Caper) হচ্ছে Capparaceae পরিবারের Crateva গণের গুল্ম। ইন্দো-মালয় ও ক্রান্তীয় আফ্রিকার প্রজাতি। বাংলাদেশের জলাভূমি ও নদীতীরে সহজেই দেখা মেলে। বড় ফুলের একটি খাটো প্রকারভেদ দৃষ্টিনন্দন। এটি অনেকে প্রতিষ্ঠানে বা গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।[১]

বৈজ্ঞানিক নাম: Crateva magna (Lour.) DC., Prodr. 1: 243 (1824). সমনাম: Capparis magna Lour. (1790), Crateva nurvala Buch.-Ham. (1827). ইংরেজি নাম: Three-leaved Caper. স্থানীয় নাম: টিকথা শাক, বরুন, বাইন্যা। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Brassicales. পরিবার: Capparaceae. গণ: Crateva. প্রজাতি: Crateva magna

বরুণ গাছের বর্ণনা:

বরুণ ছোট থেকে মধ্যম-আকৃতির বৃক্ষ। আকারে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। কদাচিৎ গুল্ম, ক্ষুদ্র শাখা বায়ুরন্ধ যুক্ত, ধূসর বাদামী, মসৃণ বা গুটিকাকার, বৃন্ত ৫-১২ সেমি লম্বা, শীর্ষ গ্রন্থিযুক্ত, পত্রকের দৈর্ঘ্য ৮-২৫ ও প্রস্থ ১.৫-৬.০ সেমি, চকচকে, মধ্যের পত্রক উপবৃত্তাকার ভল্লাকার বা বিভল্লাকার, পার্শ্বীয় পত্রক। ডিম্বাকৃতি উপবৃত্তাকার বা হীরকাকার, মূলীয় অংশ সূক্ষ্মাগ্র বা কীলকাকার শীর্ষ ক্রমশ দীর্ঘাগ্র, শেষাংশ সূক্ষ্মাগ্র, ২.৫ সেমি লম্বা, শিরা ৯-২০ জোড়া, অঙ্কীয় পৃষ্ঠে সুস্পষ্ট, শুষ্কাবস্থায় লালাভ বা বাদামী, জালিকা শিরা বিন্যস্ত, বৃন্ত ৩৭ মিমি লম্বা।

মঞ্জরী বিন্যাস করি, শীর্ষীয়। ফুল থোকা আকারের, মঞ্জরী অক্ষ ১০-১৫ সেমি লম্বা। পুষ্প গৌরবর্ণ, মিশ্রবাসী, ক্ষীণ সুগন্ধী, আড়াআড়ি ৩-৪ সেমি, পুষ্প বৃন্ত ৩-৭ সেমি লম্বা। বৃত্যংশ ২.০-৩.৫ x ১.৫-২.০ মিমি, দীর্ঘায়ত থেকে ডিম্বকার দীর্ঘায়ত, সূক্ষ্মাগ্র। পাপড়ি সাদা, হলুদে পরিবর্তিত, অর্ধগোলাকার বা উপবৃত্তাকার, ২-৩ x ১-২ সেমি, দলবৃন্ত ০.৫-১.০ সেমি লম্বা।

পুংকেশর মোটামুটি ২০টি, বেগুনি লাল, পুংদন্ড ৩.৫-৬.০ সেমি লম্বা। গাইনোফোর ৩.৫-৭.০ সেমি লম্বা। গর্ভাশয় ৪-৫ x ১.০২.৫ সেমি, দীর্ঘায়ত-উপবৃত্তাকার, প্রায়শ লুপ্ত। ফল বেরি, ২-৬ x ১.৫-৫.০ সেমি, দীর্ঘায়ত-উপবৃত্তাকার বা দীর্ঘায়ত ডিম্বাকার, ফলত্বক কাষ্ঠল, হলদে ধূসর, দন্ড ৮-১৩ সেমি লম্বা, ৩-৫ সেমি পুরু। বীজ ৬-১২ x ৫-৯ মিমি, গাঢ় বাদামী, উপর পৃষ্ঠ, গুটিকাকার উপবৃদ্ধিযুক্ত।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ২৬ (Fedorov, 1969).

বরুণ গাছের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

নদীর তীরবর্তী অঞ্চল, চিরহরিৎ এবং মিশ্র পর্ণমোচী অরণ্য। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে। বীজ বা মূলীয় সাকার দ্বারা বংশ বিস্তার। বসন্তে নতুন পাতা গজাতে থাকে। এরপরে গ্রীষ্মের শুরুতে বড় বড় থোকায় সাদা বা বেগুনি আচঁযুক্ত ফুল ফোঁটে। এদের ফল গোল বা ডিম্বাকার, শক্ত ও শাঁসালো।[১]

বিস্তৃতি:

চীন, ভারত, মায়ানমার ও শ্রীলংকা থেকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নোয়াখালী, পিরোজপুর ও মৌলভীবাজার জেলায় জন্মে।

ব্যবহার:

অপরিপক্ক ফল মানুষের আহার্যরূপে ব্যবহৃত (Raghavan, 1993).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ভারতে চর্মপীড়ায় পাতার ব্যবহার প্রচলিত। অন্ধ্রপ্রদেশের কারেডিস্ ও ভালমিকিস অদিবাসীরা মূলের বাকল পাকস্থলীর পীড়া উপশমে ব্যবহার করে (Raghavan, 1993)।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  বরুণ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বরুণ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[২]

তথ্যসূত্র:

১.  দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৩২, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

২. হোসনে আরা ও বুশরা খান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭৭-১৭৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Baluperoth

আরো পড়ুন:  শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের কষ্ট সহিষ্ণু আলংকারিক ফুল কসমস-এর চাষ ও পরিচর্যা পদ্ধতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!