জাত: বাংলাদেশে বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না ৩, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফফরপুর, বেদানা, বারিলিচু ১, বারিলিচু ২, বারিলিচু ৩ ও দেশি জাতের লিচু পাওয়া যায়। লিচু ফল সংগ্রহ শেষে আগার ডাল ছাঁটাই (প্রায় এক ফুট), ডালের ছিদ্রকারী পােকা ও লিচু মাইট দমন এবং গাছে নিয়মিত সার প্রয়ােগের মাধ্যমে অনায়াসে লিচুর ফলন দ্বিগুণ করা যায়।
ডালপালা ছাঁটাই:
লিচু (বৈজ্ঞানিক নাম: Litchi chinensis) সংগ্রহের সময় কমপক্ষে দেড় ফুট ডালসহ লিচু সংগ্রহ করলে পরবর্তী বছর অধিক ফলন পাওয়া যায়। লিচু সংগ্রহের সময় আগার সব ডালই ছাঁটাই করলে বেশী ফলন পাওয়া যায়। গাছের ভিতরের রুগ্ন, দূর্বল ও অপ্রয়ােজনীয় ও অফলন্ত ডালগুলাে ছেটে দিলে গাছে আলাে বাতাস চলাচল নিশ্চিত হবে, পােকা ও রােগের উপদ্রব কম হবে, এবং ফলন বাড়বে। ডালপালা ছাটাই এর পর অবশ্যই বর্দো-মিল্লার ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে ।
সার প্রয়ােগ:
প্রতিটি ২০-২৫ বছর বয়স্ক লিচু গাছের জন্য সুপারিশকৃত সারের পরিমাণ হলােঃ পঁচা গােবর/ আবর্জনা-পঁচা সার: ২০ কেজি, পচা খৈল: ২ কেজি টি এস পি: ২-৩ কেজি অথবা ডি এ পি: ৩-৪ কেজি, এম ও পি: ২-২.৫ কেজি, । সুপারিশকৃত সারগুলাে আম গাছের মত প্রয়ােগ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
লিচু চাষ ও সার প্রয়ােগ পদ্ধতি:
প্রথমত, গাছের গােড়া থেকে বৃত্তাকারে আড়াই ফুট বাদ দিয়ে গাছের ডাল-পালা চারি ধারে যে পর্যন্ত সম্প্রসারিত আছে, ঠিক ততদূর পর্যন্ত বৃত্তাকারে গাছের নিচের চারি ধারের মাটি কুপিয়ে দিন। দ্বিতীয়ত, সকল সার একত্রে মিশিয়ে গাছের তলায় কোপানাে অংশে সার সমপরিমানে ছিটিয়ে দিন। তৃতীয়ত, সার ছিটানাের পর পুনরায় হালকা কোপ দিয়ে সারগুলাে গাছের তলায় মাটির সাথে মিশিয়ে পানি সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিন। সবশেষে, সার প্রদানের পর গাছের গােড়ার মাটি কুচুরীপানা বা আবর্জনা দিয়ে মাচিং করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পােকা ও রােগ দমন:
১. লিচু গাছের প্রধান শত্রু লিচু “মাইট”। লিচু সংগ্রহের পর পরই মাইট দমনকারী পেস্টিসাইড (ওমাইট বা ভাটিমেক বা যে কোন মাইটিসাইড) দিয়ে গাছ ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। মাইট দমনের জন্য বছরে কমপক্ষে চার বার মাইটিসাইট স্প্রে করা প্রয়ােজন। তবে ফুল আসার আগে বা গাছে ফুল থাকা অবস্থায় গাছে স্প্রে করা যাবে না।
২. লিচু গাছে ডাল ছিদ্রকারী পােকা দেখা গেলে আমের ন্যায় “ক্লোরোপাইরিফস (ডাসবান, ক্লোরসেল, কাসির ইত্যাদি) জাতীয় কীটনাশক দিয়ে লিচু সংগ্রহের পর পরই গাছ ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
৩. লিচু ফলের আকার মার্বেল আকার হলে মাজরা পােকার আক্রমণ দেখা যায়। এ পােকা দমনে “ডেসিস” বা অনুরূপ কীটনাশক দিয়ে ফল ও পাতা ভালভাবে ৭ দিনের ব্যবধানে দু’বার স্প্রে করা প্রয়ােজন। যেসব কীটনাশকের ( ডেসিস বা অনুরূপ) বিষক্রিয়ার মাত্রা ৪-৫ দিনের বেশী থাকে না সেগুলাে ফলে স্প্রে করা যায়।
৪. ফলের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে লিচু ফলে এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে ফল বিবর্ণ হয়ে যায়। এ রােগ প্রতিরােধ ব্যবস্থা হিসাবে “ম্যানকোজেব” জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে ৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।
৫. লিচু গাছে ফুল আসার পর পাউডারী মিলডিউ নামক ছত্রাকের আক্রমণ হলে এ রােগের আক্রমণে লিচুর ফুলে সাদা বা ধুসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত মুকুল নষ্ট হয় ও ঝরে পড়ে। প্রতিকার: গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে একবার এবং এর একমাস পরে আরেকবার টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিলিটার অথবা কুমুলাক্স/সালফোলাক ২ গ্রাম হারে প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৬. ফল ছিদ্রকারী পােকা: ফলের বাড়ন্ত পর্যায়ে পূর্ণ বয়স্ক পােকা ফলের বােটার কাছে খােসার নীচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে বোঁটার নিকট দিয়ে ফলের ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এতে অনেক অপরিপক্ক ও পরিপক্ক ফল ঝরে পড়ে। প্রতিকার : বাগান পরিস্কার রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল বাগান থেকে কুড়িয়ে মাটির গভীরে পুতে ফেলতে হবে। এ পােকা দমনের জন্য রিপকর্ড/সিমবুশ/বাসাথ্রিন/ফেনােম প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে মিশিয়ে ফলের মার্বেল অবস্থা থেকে শুরু করে ১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ফল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন পূর্বে স্প্রে বন্ধ করতে হবে।
লিচু চাষ-এর সমস্যা:
নিম্নোক্ত কারণ সমূহের জন্য আপনার লিচু গাছে মুকুল আসার পরও গুটি কম হয়। প্রথমত সঠিকভাবে পরাগায়ন না হলে। এর প্রতিকার হচ্ছে পরাগায়ন বৃদ্ধি করার জন্য লিচুর বাগানে মৌমাছির চাষ করা। দ্বিতীয়ত, লিচু গাছে জাত ভেদে উভলিঙ্গি ফুলের পরিমাণ কম বেশি হয়। উভলিঙ্গি ফুল কম হলেও লিচুর গুটি কম হয়।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।